শেক্সপিয়ার— ৪৫০ বছরে – ফিরোজ আহমদ

download

 

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার (১৫৬৪-১৬১৬)। মানবজাতি আজ পর্যন্ত যত কাব্য প্রতিভার জন্ম দিয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে গণ্য করা হয় এ নামটিকে। তবু এটা বিস্ময়ের যে, তার জীবনের প্রকৃত ঘটনাবলী আমরা খুব কমই জানতে পারি। তার লেখাতেই আমরা খুঁজতে চেষ্টা করি তার জীবনের অনেক মাল-মশলা। সম্ভবত এ কারণেই অনেকে প্রশ্ন করেন তার নামে প্রকাশিত রচনা আসলেই তার কিনা।

শেক্সপিয়ার জন্মগ্রহণ করেন ১৫৬৪ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে স্ট্র্যাটফোর্ড অন-অ্যাভনে। জন্মের সঠিক তারিখ সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ঐতিহ্যগতভাবে ২৩ এপ্রিলে তার জন্মদিন উদযাপন করা হয়। তার প্রয়াণও ঘটে ২৩ এপ্রিল। তার পিতা জন শেক্সপিয়ার এবং মা মেরি আর্ডেন। তিনি ছিলেন তাদের বড়ছেলে ও তৃতীয় সন্তান। সদ্বংশজাত পিতামাতা ইংল্যান্ডের ওয়ার উইকশায়ার কাউন্টিতে কয়েক প্রজন্মের অধিবাসী ছিলেন। পিতা কৃষিপণ্য, দস্তানা ইত্যাদির ব্যবসা করতেন। পরে তিনি শহরের চিফ অলডারম্যান ও জাস্টিস অব পিসও হন। গ্রামের গ্রামার স্কুলে শেক্সপিয়ার কিছু কিছু ল্যাটিন ও গ্রীক ভাষার পাঠ নেন। ফরাসী ও ইটালীয় ভাষা সম্পর্কেও তার জ্ঞান ছিল এবং এ দু’টি ভাষা তিনি সম্ভবত লন্ডনে আয়ও করেছিলেন।

ভ্রাম্যমাণ অভিনেতাদের দলগুলো শুরুতেই তার মন-মানস কেড়ে নেয়। কেনিলওয়ার্থ ক্যাসেলে আর্ল অব লেস্টার রাণী ১ম এলিজাবেথ-এর জন্য যে ঐতিহাসিক কুচকাওয়াজ-নাট্যাভিনয়ের আয়োজন করতেন তা বালক শেক্সপিয়ারের কল্পনাশক্তিকে জাগিয়ে তুলেছিল বলে ধারণা করা হয়। বিভিন্ন লোকগাথা সম্পর্কেও তার জ্ঞান ছিল প্রখর।
১৫৮৬ তে তিনি হেঁটে লন্ডন চলে যান। অনেকে তার অসুখী দাম্পত্য জীবনকে এ জন্য দায়ী করেন (১৮ বছর বয়সে শেক্সপিয়ার তার চেয়ে ৮ বছরের বড় অ্যান হ্যাথওয়েকে বিয়ে করেন)।
এছাড়া পিতার ব্যবসায় ব্যর্থতা কিংবা স্যার টমাস লুসির সঙ্গে তার জমিদারিতে হরিণ শিকার নিয়ে বিরোধও স্ট্র্যাটফোর্ড ত্যাগে তাকে বাধ্য করেছিল বলে মনে করা হয়।
শেক্সপিয়ারের ৩ কন্যার জন্ম হয়। তারা হল সুসান্না এবং যমজ হ্যামনেথ ও জুডিথ। হ্যামনেথ অল্প বয়সেই মারা যায়। বড় মেয়ে সুসান্নার সঙ্গে স্থানীয় চিকিত্সক জন হল-এর বিয়ে হয়।
লন্ডনে প্রথমে একটি নাট্যশালায় ফাইফরমায়েশ খাটার কাজ করলেও অচিরেই মঞ্চে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি। তবে, শেক্সপিয়ার শিগিগরই বুঝতে পারেন তার জায়গা অভিনয়ে নয়, তার নাট্যদলের জন্য নাটক লেখায়। বছরে তিনি মোটামুটি দু’টি করে নাটক লিখতেন এবং এত অনায়াসে যে, তার সহ-অভিনেতারা গর্ব করে বলতেন তিনি কখনও একটি লাইনও মুছতেন না। তার নাট্যরচনার সময়কাল প্রায় ২০ বছর জুড়ে ১৫৯১ থেকে ১৬১১ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সময়ে তিনি ৩৪টি নাটক রচনা করেছেন, যার মধ্যে ৫টিরতিনি আংশিক স্রষ্টা। এছাড়া তিনি ১৫০টিরও বেশি গীতি কবিতাধর্মী সনেট রচনা করেছেন।
শুধু ইংরেজি নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব সাহিত্যে উত্কর্ষ ও গভীরতায় অতুলনীয় যেসব নাটক শেক্সপিয়ার রচনা করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: হ্যামলেট, ওথেলো, কিং লিয়ার, টেম্পেস্ট ও ম্যাকবেথ। তার নাটককে বিষয়ের দিক দিয়ে ট্রাজেডি, কমেডি, ঐতিহাসিক, রোমান্স, ফ্যান্টাসি, আতংকজনক (হরর) ইত্যাদি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। এগুলোতে মানবচরিত্রের যে বিচিত্র রূপ তিনি অংকন করেছেন তা আজও সমান মর্মস্পর্শী।
১৬১১ তে তিনি অবসর জীবন যাপনের জন্য স্ট্র্যাটফোর্ড ফিরে আসেন এবং তার জন্মস্থানের অদূরে শহরের একটি বড় বাড়ি New Place ক্রয় করেন। জীবনের শেষ ৬ বছর তিনি স্ট্র্যাটফোর্ড ও লন্ডনের মধ্যে যাওয়া-আসায় কাটান।
তার জীবনাবসান হলে তার বন্ধু বেন জনসন যথার্থই বলেন, ‘তিনি শুধু একটি কালেরই নয়, বরং সর্বকালের।
অমর নাট্যকার শেক্সপিয়ারের অনেক চিরন্তন বাণীর মধ্যে মৃত্যু বিষয়ে তার উপলব্ধিকে আমরা স্মরণ করতে পারি: ‘It seems to me most strange that men should fear/Seeing that death a necessary end/will come when it will come (জুলিয়াস সিজার)।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend