রুচির পরিবর্তন হলে অভ্যাসেরও পরিবর্তন করতে হবে: প্রকৌশলী এম মোকাদ্দেছ বিল্লাহ কাওছার

রুচির পরিবর্তন হলে অভ্যাসেরও পরিবর্তন করতে হবে: প্রকৌশলী এম মোকাদ্দেছ বিল্লাহ কাওছার

কথায় বলে লংকা কান্ড অর্থাৎ হুলস্থূল ব্যাপার। কাচা মরিচ নিয়ে যে এত হুলস্থূল হবে সেটা আমরা ২ সপ্তাহ আগেও জানতাম না। আর হুলস্থূল হবে না কেন কাঁচা

মরিচের দাম এত বেশি ইতিপূর্বে আমরা কেওই দেখিও নাই এবং শুনিও নাই।কাচা মরিচের বেশ পুষ্টি গুন রয়েছে। কাচা মরিচে ভিটামিন- সি ও অন্যান্য এন্টি এক্সিডেন্টে ভরপুর। ভিটামিন-সি ও এন্টি এক্সিডেন্ট দেহের ফ্রী রেডিক্যালস জনিত বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ফ্রী রেডিক্যালের কারণে কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে এবং হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে এন্টি অক্সিডেন্ট বিশেষ ভুমিকা নিয়ে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে ও প্রাকৃতিক অনাক্রমতা গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। কাচা মরিচের যতসব পুষ্টিগুনই থাকুক না কেন। এক কেজি কাচা মরিচের দাম যদি ৭০০-১০০০ টাকা হয় সেটা খুবই অস্বাভাবিক। এবং ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কাচা মরিচ একটি শীত কালীন ফসল। এটি পচন শীল পন্য। নিকট অতীতে অর্থাৎ ১ যুগ আগেও আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সারাবছর তরকারিতে কাচা মরিচ ব্যবহার করতেন না। এটি শীত কালীন ফসল হওয়ায় শীত সময়ে কাচা মরিচ ব্যবহার করতেন এবং বছরের অন্য সময়ে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে শুকনো মরিচ ব্যবহার করতেন।

সময়ের প্রেক্ষিতে এখন প্রায়ই সারাবছর কাচা মরিচ তরকারিতে ব্যবহার হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে কাচা মরিচের ফলনের বিঘ্ন ঘটায় মাঝে মধ্যে হটাৎ অল্প সময়ের জন্য এর দাম ১৫০-২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত হতো। কিন্তু এবছর হটাৎ পুর্বের সব রেকর্ড ভংগ হয়েছে। তবে এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার সময় হয়েছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাক্তি পর্যায়ে আমরা যারা শখের বসে ফুলের বাগান করে মিনি টগর ফুলের গাছ চাষ করি অথবা গাছ লাগিয়ে থাকি তারা যদি মিনি টগর ফুলের বিকল্প হিসাবে কাচা মরিচের গাছ লাগাই তাহলে এর সমাধান অনেকটাই সম্ভব। এতে সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে বাড়তি হিসাবে এই প্রয়োজনীয় ফসলের উৎপাদন আপেক্ষিক হারে বৃদ্ধি পাবে। মিনি টগর ফুল গাছটির সাথে মরিচ গাছের বৈশিষ্ট্য অনেক মিল আছে। গাছ দুটির পাতা এবং ফুলের মধ্যে যথেষ্ট মিল আছে। বাড়তি হিসাবে আমরা ফল হিসাবে সহজেই কাচা মরিচ পাবো। কারণ মরিচ গাছ চাষ করতে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। আমরা যদি প্রত্যেকেই বাসা বাড়ির আশে পাশে, বাসার ছাদে, বারান্দার কোনায়, টবে ৫/১০ টি গাছ লাগাতে পারি তাহলে আমাদের পরিবারের যে পরিমান কাচা মরিচের প্রয়োজন হয় তার জন্য বাজার থেকে কিনতে হবে না। এতে করে বর্ষা মৌসুমেও বাজারে কাচা মরিচের উপর বাড়তি কোন চাপ পড়বে না। কাচা মরিচের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পত্র পত্রিকায় যেভাবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে দোষারোপ করছি তা অনেকেই না বোঝেই করছি। আমদানি নির্ভর অনেক পন্যের দাম কয়েক বৃদ্ধি পাওয়ায় সেগুলো নিয়ে দোষারোপ করা যেতে পারে। কিন্তু পচনশীল কৃষি পন্য কাচা মরিচ যা আমরা ইচ্ছে করলেই প্রায় সকলেই ক্ষুদ্র পরিসরে চাষ করতে পারি তা নিয়ে কেন অন্যের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছি। পরিসংখ্যানে আমাদের দেশের মানুষের পেশা হিসাবে মুখস্থ ভাবে আমরা ৮৫% কৃষি লিখে থাকি। তাহলে যে দেশে ৮৫% লোক কৃষক সেই দেশে কাচা মরিচের কেজি কি করে ১০০০/ টাকা হয়। একটা পরিবারের জন্য কাচা মরিচের চাষ করতে তো এক্সট্রা জমির প্রয়োজন হয় না। নিশ্চয়ই এখানে অনেক অবহেলা আছে। আমাদের অনেক ঘাটতি আছে। রুচির পরিবর্তন করে যেহেতু আমরা সারাবছর কাচা মরিচ তরকারিতে ব্যবহার করতে চাচ্ছি তাই আমাদের মিনি টগর ফুলের বিকল্প হিসাবে কাচা মরিচের চাষ এবং প্রত্যেকের অভ্যাসের ও পরিবর্তন করতে হবে।

প্রকৌশলী এম মোকাদ্দেছ বিল্লাহ ( কাওছার)
সদস্য, আই ই বি ৪০৫৫৭.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend