সেনাবাহিনী নামানো ও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের প্রস্তাব সংসদে

parliament-bd_4দেশে চলমান হরতাল-অবরোধে সহিংসতার ঘটনায় আগামী পাঁচদিনের মধ্যে অবরোধ তুলে না নিলে সেনাবাহিনীসহ যৌথবাহিনী নামানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সংসদে। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের প্রস্তাবও করা হয়েছে।

সংসদ সদস্য নজিবুল রশর মাইজভান্ডারি মঙ্গলবার দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এমন প্রস্তাব করেন। এসময় অন্য সাংসদরাও এতে সমর্থন ব্যক্ত করেন।

মাইজভান্ডারি বলেন, খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারণ করতেও লজ্জা হয়। কোনো ধর্ম তার কাছে নিরাপদ নয়। তিনি কোরআন শরীফ জ্বালিয়েছেন। তিনি মিথ্যাবাদী। ইসলামী ঐক্যজোটের সমালোচনা করেন তিনি বলেন, লালবাগ মাদরাসার কিছু লোক ইসলামের নামে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নৈরাজ্যে অংশ নিচ্ছে। তারা কীসের ইসলাম করে?

তিনি প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, আগামী পাঁচদিনের মধ্যে এ অবরোধ তুলে না নিলে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী নামানো হোক। জঙ্গী নেতা খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হোক।

এছাড়া খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবিটি প্রথমে সংসদে উত্থাপন করলে অন্য সংসদ সদস্যরাও এ দাবির পক্ষে নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।

খালেদা জিয়াকে ‘নিষ্ঠুর ও পাষাণ’ আখ্যায়িত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিনি এতটাই নিষ্ঠুর ও পাষাণ যে তার প্রয়াত স্বামী জিয়াউর রহমানের জন্মদিনেও কবর জিয়ারত করতে যাননি। নির্দেশ দিয়ে অবরোধ-হরতালের নামে দেশের নিরাপরাধ মানুষদের হত্যা করছেন।

তোফায়েল বলেন, ‘একটি অফিসে বসে খালেদা জিয়া মানুষ হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন। খুনের নির্দেশ দিয়ে খালেদা জিয়া খুনির কাতারে নাম লিখিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। সে সময় তার স্বামী তাকে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। মানুষ রাজনীতি করে জনগণের জন্য। খালেদা জিয়া তার অফিসে থাকবেন। যতোক্ষণ এ সরকারের মাধ্যমে তিনি নির্বাচন আদায় করতে না পারবেন। এটা কেমন রাজনীতি?’

খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ইজতেমায়ও তিনি হরতাল ও অবরোধ ডেকেছেন। লাখ লাখ মানুষ ইজতেমায় অংশ নিয়ে তার অবরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। রংপুরে ১৩ জানুয়ারি শিশুসহ ৫ জনকে পুড়ে মেরেছেন। আজকেও উজিরপুরে একজন নিরাপরাধ হেলপারকে মেরেছেন।

তোফায়েল বলেন, আন্দোলন কাকে বলে, খালেদা জিয়া বোঝেন না। এই মহিলার টার্গেট হলো গরীব দুখী মানুষ, শ্রমিক, হেলপার। এটা রাজনীতি? এতে তিনি সফল হবেন না। কোনো আন্দোলনে তিনি সফল হননি। তিনি আগেও ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন, পারেননি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছেন তিনি, পারেননি। তিনি কোথাও সফল হননি।

খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চান অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, যে আন্দোলনে মানুষ নামে না, সে আন্দোলন করে তিনি সফল হবেন না। যে মুহূর্তে আমাদের সন্তানদের হাতে কোটি কোটি বই তুলে দেয়া হয়েছে, আজকে তারা স্কুলে যেতে পারে না। এই শিশুদের মারতেও খালেদা জিয়া নির্দেশ দিতে পারেন। তিনি দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চান।

খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গোয়েন্দা পাঠানো প্রয়োজন। কেন তিনি ওখানে থাকেন। সেখানে মজাটা কি? রাস্তায় বোমা ফাটালে পাঁচ হাজার, গাড়িতে ১০ হাজার ও মানুষ মারলে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। এদেরকে গ্রেপ্তার করুন। তাদের জেলে পাঠান, দু একজনকে আগুনে পুড়িয়ে দিন, তাহলে বুঝতে পারবে।’

খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন- আনটিল ফার্দার অর্ডার। এ অধিকার তাকে কে দিলো? এ কথা বলার জন্য তাকে জেলে থাকা উচিত।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, সন্ত্রাস বাংলাদেশের মাটিতে থাকতে পারে না। নীরবতা আনার জন্য যা যা করতে হবে, তা তা করতে হবে। ভাষণ দিয়ে এড়িয়ে যাবেন তা হবে না।

তিনি বলেন, মানুষ যেনো ভয় না পায়। কারও সন্তান স্কুলে যাবে না, এ অবস্থা দেশবাসী দেখতে চায় না। অর্থনৈতিক সব সূচকে সরকারের সফলতা সবাই স্বীকার করে। সব কিছুর পরে মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তা চায়। প্রধানমন্ত্রী কবে আমাদের এ শুভ বার্তা শোনাবেন, সেটা জাতি অপেক্ষা করে শুনতে চায়।

পয়েন্ট অব অর্ডারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, ফজলে হোসেন বাদশা, স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি তারানা হালিম প্রমুখ।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend