বাগেরহাট কারাগারে ২০ কয়েদি অসুস্থ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ : বাগেরহাট জেলা কারাগারে অন্তত ২০ জন বন্দী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বমি ও পাতলা পায়খানা করছেন। মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনার সূত্রপাত।

বন্দীদের অসুস্থতার ঘটনাটিকে খাদ্যের বদহজমজনিত ‘ম্যাস ডায়রিয়া’ বলে ধারণা করছেন হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকেরা কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, অতিরিক্ত গরম ও সুপেয় পানির সরবরাহ না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বেলা দুইটা পর্যন্ত অসুস্থ বন্দীদের মধ্যে ২০ জনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি (আইডি) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের কারাগারের অভ্যন্তরে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে।
অসুস্থ বন্দী ও হাসপাতালে আসা কয়েকজন কারারক্ষী জানান, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকাল, দুপুর ও রাতে কারাগারে পান্তা-ইলিশ, পোলাও, মাংস, ফলসহ বিভিন্ন উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সবাই এসব খাদ্য খেয়েছেন। আজ সকালে কয়েকজন কয়েদি তাঁদের পাতলা পায়খানা ও বমি হচ্ছে বলে কারা কর্তৃপক্ষকে জানান।
কারাগারের নিজস্ব চিকিত্সকের পদ শূন্য রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বন্দীদের চিকিত্সার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী সরকারি চিকিত্সক নজরুল ইসলামকে খবর দেয় কর্তৃপক্ষ। তিনি এসে প্রাথমিক চিকিত্সা শুরু করেন। এরপর ২০ জন বন্দীকে পর্যায়ক্রমে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
অসুস্থ হয়ে পড়া বন্দীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। নিরাপত্তার কারণে তাঁদের হাসপাতালে না নিয়ে কারাগারের ভেতরে রেখে চিকিত্সা সেবা দেওয়া শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। এতে সহযোগিতা করে বাগেরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ।
অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিত্সা দিতে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের একজন চিকিত্সকের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি চিকিত্সা দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাগেরহাট কারাগারে যান।
খবর পেয়ে যশোর থেকে বাগেরহাট কারাগার পরিদর্শনে যান কারা পুলিশের খুলনা বিভাগীয় উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) এ কে এম ফজলুল হক।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা কুহেলী বেগম দুপুরে বলেন, ‘কয়েক দফায় হাসপাতালে আনা ২০ জন বন্দী ম্যাস ডায়রিয়া আক্রান্ত বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। গরমের কারণে গুরুপাক খাদ্য হজম না হয়ে পাকস্থলীতে বিক্রিয়া হয়ে তাঁরা পাতলা পায়খানা ও বমি করছেন।’
কুহেলী বেগম জানান, প্রথম দু-একজনের অবস্থা দেখে অন্যরাও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ওই অসুস্থতা দ্বারা প্রভাবিত ও আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ ধরনের পরিস্থিতিকে চিকিত্সা পরিভাষায় আমরা ম্যাস ডায়রিয়া বলে।
তবে বাগেরহাট জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. আমানুল্লাহ দাবি করে বলেন, ‘কারাগারে সুপেয় পানির সংকটের কারণে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’
আমানুল্লাহ জানান, গতকাল সকাল থেকে কারাগারে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়। খাদ্যের মান ভালো ছিল। কিন্তু কারাগারে খাবার পানির ভালো কোনো উত্স নেই। বন্দীদের ব্যবহূত টিউবওয়েলের পানিতে লবণ ও লোহার মারাত্মক উপস্থিতি রয়েছে। সুপেয় পানির সংকটের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট মহলে জানানো হয়েছে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন বাকির হোসেন জানিয়েছেন, বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বন্দীদের সুচিকিত্সা নিশ্চিত করা হয়েছে। তা ছাড়া কারাগারের ভেতরে থাকা অপর অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিত্সা কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি চিকিত্সা দল সেখানে পাঠানো হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও জেলা বেসরকারি কারা পরিদর্শন কমিটির সভাপতি মো. শুকুর আলী বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। বন্দীদের সুচিকিত্সা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কারা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কারাগার পরিদর্শন করেছেন। প্রয়োজন হলে আমরা তদন্ত কমিটি করে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান করব।’
বাগেরহাট কারাগারে সুপেয় পানির সংকটের কথা জানিয়ে শুকুর আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend