সালাহ উদ্দিন রহস্যজট খুলতে চান ভারতের গোয়েন্দারা

salah uddin 1বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার পর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎপরতা শুরু করেছে। কীভাবে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের এই নেতা ভারত সীমান্তে ঢুকে পড়লেন তার জট খুলতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন দেশটির গোয়ন্দা সংস্থার সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র দ্য রিপোর্টকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশের সাবেক একজন মন্ত্রীকে ঢাকার বাসা থেকে ‘গুম’ করে সীমানা টপকে মেঘালয়ে ‘ছেড়ে’ দেওয়ার ঘটনায় সীমান্তের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের গলফ লিংক এলাকায় কীভাবে এলেন বিএনপির নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ। সেই রহস্যের জট বেশ জটিল বলেই মানছেন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনেকেই।
কারণ সালাহ উদ্দিন মেঘালয় পুলিশকে বলেছেন, ‘আমাকে ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে অপহরণ করা হয়। তারা আমাকে বন্দী করে রেখেছিল। যারা আমাকে বন্দী করেছিল, তারা সব সময় চোখ বেঁধে রাখে। আমি কিছুই দেখতে পাইনি। তারা একটি গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে আসে। এর পর ফেলে যায়। আমি কোথায় তার কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কাছে সব অচেনা মনে হচ্ছে।’ সালাহ উদ্দিন আহমেদের এ বক্তব্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, সালাহ উদ্দিন আহমেদ সোমবার সকালে গলফ লিংক এলাকায় উদভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করছিলেন। সকাল থেকে একই স্থানে তিনি বার বার পায়চারী করছিলেন। এরকম একজন লোককে ঘোরাফেরা করতে দেখে লোকজন পুলিশকে জানায়। এর পর পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি নিজেকে বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী বলে পরিচয় দেন।
তখন পুলিশের সন্দেহ হয়, তিনি ঠিক বলছেন কি-না? কিন্তু তিনি এর সমর্থনে কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারছিলেন না। বাংলাদেশের সাবেক একজন মন্ত্রী টাকা-পয়সা ছাড়াই ভিনদেশে ভবঘুরের মতো ঘুরছিলেন- এ বিষয়টি দুঁদে গোয়েন্দাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
মেঘালয় ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পূর্ব খাসি হিলস জেলার পুলিশপ্রধান মারিয়াহোম খারক্রাং জানান, সালাহ উদ্দিন ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। মনে হচ্ছে, তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। এ কারণে তাকে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
তবে বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রীর ওপর যে মানসিক অত্যাচার চালানো হয়েছে তা একপ্রকার নিশ্চিত পুলিশ ও গোয়েন্দারা। সিলেট-মেঘালয় সীমান্ত কতটা নিরাপদ হলে একজন মানুষকে এমন অবস্থায় সীমান্ত পার করানো যায় সে বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র দফতরকে।
গত বৃহস্পতিবার দার্জিলিংয়ের সংসদ সদস্য এস এস আলুওয়ালিয়া সংসদে বলেছিলেন, ‘একদল মানুষ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অস্থির পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।’
আলুওয়ালিয়া পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি রেখে বলেছিলেন, ‘দুই দেশের বাহিনীদের নিয়ে বৈঠক করে সীমান্তে যেন কড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই আলুওয়ালিয়ারের সংশয় যেন সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে। সালাহ উদ্দিন ইস্যুতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র দফতরের কপালে। ভারত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে কুচক্রী কোনো মহল সালাহ উদ্দিনকে কাজে লাগিয়েছে কিনা, সে ব্যাপারেও মীমাংসায় পৌঁছতে চায় ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আগামী জুনে ঢাকা সফর করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শিলং সিভিলহাসপাতালে ভর্তি সালাহ উদ্দিন ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কোনো প্রসঙ্গ তোলেন কিনা, সেদিকেও তাকিয়ে আছেন কূটনীতিক ও গোয়েন্দারা।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend