দুই মেয়র ও ৫০ কাউন্সিলর টার্গেট আওয়ামী লীগের

ccঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত দুই মেয়রসহ ৫০ কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যেকোনো মূল্যে ৫০ কাউন্সিলরকে বিজয়ী করতে দলের নেতাদের প্রতি উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা রয়েছে বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন নেতা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, দুই মেয়রের পাশাপাশি কমপক্ষে ৫০ কাউন্সিলর টার্গেট আওয়ামী লীগের।
এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ত্যাগী, সৎ, যোগ্যদের বিবেচনা না করে অর্থ ও ক্ষমতাশালীদের কাউন্সিলর প্রার্থী করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নীতি-নির্ধারণী নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা, ধানমণ্ডি, মিরপুর, উত্তরার ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয়ী করার প্রতি নজর রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ সব ওয়ার্ডে দলের অবস্থান শক্তিশালী থাকলে ঢাকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করে ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয়ী করার দিকে মনোযোগী হতে পরামর্শ দিয়েছেন। মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের জেতা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে ঘরে বসে না থেকে সবার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে বলেছেন তিনি।
জানা গেছে, এ লক্ষ্য পূরণে আগে থেকেই কাজ করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে যথেচ্ছ কাউন্সিলর মনোনয়ন ও সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ছিল দলটির। কেবল যারা জিততে পারবে কাউন্সিলর হিসেবে তাদেরই সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পুরো বিষয়টা দেখভাল করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের কয়েক সিনিয়র নেতা। এর আগে ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো নিয়ে এতটা সিরিয়াস ছিল না ক্ষমতাসীনরা।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, কাউন্সিলর মনোনয়ন ও সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়ার্ডে টাকাওয়ালা ও শক্তিধর প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু রাজনৈতিক ত্যাগ, সততা একেবারেই বিবেচনাহীন ছিল ক্ষমতাসীনদের কাছে। শুধু জিততে হবে এ মনোবাসনা থেকেই বাদ পড়েছেন দীর্ঘদিন নগরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা। সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় নির্দেশে ওই সব প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এবারই প্রথম দুই সিটি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা একেবারেই কম। ঢাকার স্থানীয় সংসদ সদস্যরা কাউন্সিলরদের ডেকে নিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিয়েছেন। এ সব পরিকল্পনার মূলেই রয়েছে ৫০ কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিজয় নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, নির্বাচনে প্রত্যেক দলের বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্য থাকে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগও তাদের সমর্থিত বেশিরভাগ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করছে। এক্ষেত্রে ৫০ কাউন্সিলর কেন তার বেশিও বিজয়ী হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের টার্গেট দুই সিটিতে মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর বিজয়ী করা। আমরা সে হিসেবে কাজ করছি। জনগণের ভোটেই আমরা বিজয়ী হব।
উত্তরের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা ফারুক খান। এ প্রসঙ্গে তিনিও বলেন, ঢাকায় এ সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রয়েছে। জনগণ এ সব বিচার করে আমাদের ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রসহ বেশিরভাগ কাউন্সিলর জিতবে— এটাই আমাদের প্রত্যাশা
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনায় তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ঢাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য রাখতে হলে প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর থাকতে হবে দলীয়। ঢাকায় রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে তখন এ কাউন্সিলররা ভূমিকা রাখতে পারবেন। নীতি-নির্ধারণী নেতারা মনে করেন, ঢাকায় আজকে বিএনপির যে রাজনৈতিক শক্তি তৈরি হয়েছে তা গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত বেশিরভাগ কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় সম্ভব হয়েছিল। তাদের মতে, ভবিষ্যতে রাজধানীর রাজনৈতিক মাঠ দখলে রাখতে হলে কাউন্সিলরদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend