অন্তঃসত্ত্বার শরীরে মরিচের গুঁড়া দিল স্বামী

repঅন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর গায়ে মরিচের গুঁড়া দিয়ে পরে পানি ঢেলে দিয়েছে পাষণ্ড স্বামী। পরে ওই অন্তঃসত্ত্বাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
হাতীবান্ধার মধ্য গড্ডিমারী গ্রামে বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। অন্তঃসত্ত্বা তসলিমা বেগমের (২৫) ভাইয়ের অভিযোগ, যখন অভাব ছিল তখন আমার বোন স্বামীর কাছে সুন্দর ছিল। এখন অভাব নেই, এ কারণে আমার বোন সুন্দর নয়। তাকে কথায় কথায় নির্যাতন করে তসলিমার স্বামী গড্ডিমারী গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে এরশাদুল।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদেরের মেয়ে মোছাম্মত তসলিমা বেগমের (২৫) সঙ্গে বিয়ে হয় পাশের উপজেলা হাতীবান্ধার মধ্য গড্ডিমারী গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে এরশাদুলের। ভালই চলছিল তাদের সংসার। তসলিম (৫) নামে তাদের এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান আছে। এরপর আবারও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তসলিমা। হঠাৎ করে এরশাদুলের আচরণেও পরিবর্তন আসে। সামান্য কিছুতেই মারধর করা হতো তসলিমাকে। এর একটাই কারণ, সে দেখতে অসুন্দর।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকালে শুকনা মরিচ ভেজে গুঁড়া করছিল তসলিমা। ভাজার সময় কিছু মরিচ পুড়ে যায়। এতে স্বামী এরশাদুলের সঙ্গে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত স্বামী মরিচ গুঁড়া তার শরীরে দিয়ে পানি ঢেলে দেয়। এতে জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয় অন্তঃসত্ত্বা তসলিমার শরীরে। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে ঘরে আটকে রাখে পাষণ্ড স্বামী। পরে তার আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে।
ওই হাসপাতালে বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন তসলিমা। মাঝে মধ্যে চিৎকার দিয়ে উঠছেন। বার বার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনিচ্ছায় কিছু মরিচ পুড়ে যায়। এ জন্য স্বামীর কাছে মাফও চেয়েছি। মরিচের গুঁড়া শরীরে ছিটিয়ে দেওয়ার আগে অনেকবার হাতে-পায়ে ধরেছি। কিন্তু সে কথা শোনেনি। শরীরে মরিচের গুঁড়া দেওয়ার পর জ্বালায়-ব্যথায় আমি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছি না।’
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। বর্তমানে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।’
তসলিমার অভিযোগ, ‘সামান্য ভুল হলে আমাকে সে (স্বামী) মারধর করে। আমি তা মুখ বুজে সহ্য করি।’
তসলিমার ভাই আব্দুস সালাম অভিযোগ করেন, ‘মাঝেমধ্যে এরশাদুল আমার বোনের ওপর নির্যাতন করত। এ জন্য অনেকবার ওই বাড়িতে গিয়ে তাদের মীমাংসা করে দিয়েছি। এবার নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।’
মারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন এরশাদুলের অভাব ছিল তখন আমার বোন তার কাছে ভাল ছিল। এখন একটু টাকা-পয়সা হয়েছে, এখন আর আমার বোন ভাল না। সে কথায় কথায় বলে, আমার বোন অসুন্দর, দেখতে কালো।’
নির্যাতনের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। তবে বিষয়টি মীমাংসা করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েক নেতা দৌড়ঝাঁপ শুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বুলু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নূর ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিচ্ছি।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend