বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন : শার্লি এবদোর কার্টুন ছাপিয়ে পলাতক পত্রিকা সম্পাদক

image_183059.avadnam_640x360_bbc_nocreditফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এবদো-তে মুদ্রিত ইসলামের নবীর একটি কার্টুন ভারতের একটি উর্দু দৈনিকে পুন:প্রকাশ করে ঘোর বিপাকে পড়েছেন তার সম্পাদক।
ভুল স্বীকার করে পত্রিকায় ক্ষমা চাওয়ার পরও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে, অজস্র মামলাও দায়ের হয়েছে।
দৈনিক আওয়াধনামার সম্পাদক শিরিন দালভি বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, গত প্রায় দুসপ্তাহ ধরে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন কী নিজের ছেলেমেয়ের সঙ্গেও দেখা করতে পারছেন না।
ঐ পত্রিকার গত ১৭ই জানুয়ারি সংখ্যায় শার্লি এবদো-তে বেরোনো ইসলামের নবীর কার্টুন ছাপানোর পরই দৈনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চাকরি হারিয়ে মিজ দালভিও এখন আদালত থেকে জামিন নিয়ে এক রকম আত্মগোপনেই আছেন।
গোপন ডেরা থেকে বিবিসিকে তিনি বলেন, ”ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা কখনওই আমার উদ্দেশ্য ছিল না।”
”কিন্তু কার্টুনটি বেরোনোর পরই তা নিয়ে হাঙ্গামা শুরু হয়ে গেল, বলা হল আমি না কি ইচ্ছে করে সেটা করেছি। অথচ আমি কিন্তু পরদিনই প্রথম পাতায় ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম।”
”তারপরও আমার ও আমার পত্রিকার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল, আমাকে গ্রেফতারের দাবিতে বাড়ির সামনে অনশন ধর্মঘট শুরু হয়ে গেল। মুম্বাই পুলিশ আমাকে আটকও করেছিল, তবে আমি আদালতে জামিন পেয়েছি। কিন্তু এখনও অজস্র মামলা ঝুলছে নানা জায়গায়।
”কত জায়গায় আমি যাব বলুন? প্রায় দু’সপ্তাহ হল বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি – ছেলেমেয়ের মুখ পর্যন্ত দেখিনি,” বলছিলেন তিনি।
পত্রিকার কর্তৃপক্ষ শুরুতে সম্পাদকের পাশে দাঁড়ালেও বিক্ষোভের ভয়ে তারা মহারাষ্ট্রে আয়োধনামা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে স্বামীকে হারানো শিরিন দালভি ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে।
কাগজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ঘোর আর্থিক সঙ্কটেও পড়েছেন, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আইনজীবীদের খরচ।
নবীর কার্টুন পুন:প্রকাশ করাটা ভুল হয়েছিল, সে কথা মেনেও মিজ দালভি কিন্তু এখনও বলছেন খবরের স্বার্থেই তিনি সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ”ঐ কার্টুনকে আমি খবরের অংশ হিসেবেই ধরে নিয়েছিলাম। যখনই আমরা কোনও খবর ছাপি, সেই সংক্রান্ত কোনও ছবি পাওয়া গেলে খবরের সঙ্গে সেই ছবিও কিন্তু ছাপানো হয়। এখানেও ঠিক সেটাই হয়েছিল।”
”এখানে ধর্মীয় হাঙ্গামা বাঁধানোর কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। আর আমি নিজেও তো একজন মুসলিম। আমার ধর্মের লোকদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে, এমন কাজ আমি কেন করতে যাব?”
কিন্তু থানেসহ মহারাষ্ট্রের নানা জায়গায় একাধিক কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন তাঁর এই যুক্তি শুনতে রাজি নয়, এফআইআরও তারা প্রত্যাহার করছেন না।
এখন হামলার ভয়ে তাঁকে হয়তো আরও বহুদিন পালিয়ে বেড়াতে হবে, এই আশঙ্কাতেই দিন কাটছে শিরিন দালভির।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend