বন্দীর মাকে ধর্ষণের হুমকী; নির্লজ্জের দলিল : সিআইএ’র নির্যাতনের প্রতিবেদন -সিরাজুল ইসলাম

guantanamo_bay_jail২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র এবং সেনা সদর দফতর ‘পেন্টাগন’-এ কথিত সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হওয়ার পরপরই বিশ্বের ওপর এক ধরনের গজব নাযিলের অবস্থা তৈরী করে ছেড়েছিল আমেরিকা— তা কারো স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়ার কথা নয়। নাইন ইলেভেন নামে খ্যাত সেই ঘটনার পরপরই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করেছিলেন তা-ও ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
সেই-সব ঘটনার পর বুশ ও তার দোসররা আফগানিস্তান এবং ইরাকে হামলার মাধ্যমে সারা বিশ্বে যে জঘন্য কুকীর্তির জন্ম দিয়েছিলেন তার নতুন কিছু চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এই সব কুকীর্তি কথা আর কেউ বের করেনি; খোদ মার্কিন সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি তা প্রকাশ করেছে। এতে যে চিত্র বের হয়ে এসেছে তা দেখে যেমন বিবেকবান মানুষেরা শিউরে উঠতে বাধ্য হন, তেমনি মার্কিনীদের হিংস্র, বর্বর ও কুৎসিত চেহারা ফের প্রকাশিত হয়। যার কিছু এখানে তুলে ধরা হল—
কী ধরনের নির্যাতন চালিয়েছিল সিআইএ ? : সিআইএ’র নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল নিয়ে আগে যে সব খবর বের হয়েছিল; সিনেট কমিটির রিপোর্টে তার চেয়ে অনেক বেশী নৃশংসতা ও বর্বরতা ফুটে উঠেছে। নির্যাতন এবং জিজ্ঞাসাবাদের কৌশলকে খোদ সিনেট কমিটি বর্বর ও অকার্যকর বলে উল্লেখ করেছে। ওই কারাগারে সারা বিশ্বের শতাধিক বন্দী হয়েছে সিআইএ’র বর্বর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার এবং তারা সবাই মুসলমান।
সিআইএ’র লোকজন এ সব বন্দীর সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করেছে। সিআইএ’র কর্মকর্তারা বন্দীদেরকে দিনের পর দিন উলঙ্গ করে রেখেছেন, তাদেরকে টানা ১৮০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমাতে দেওয়া হয়নি। একজন বন্দীকে হুমকী দেওয়া হয়েছিল, প্রয়োজনে তাঁর মাকে ধর্ষণ করা হবে এবং একজন বন্দীকে তাঁর মাকে জবাই করার হুমকী দেওয়া হয়েছিল। অন্তত তিনজন বন্দীকে তাদের শিশুদের ক্ষতি হত্যা করার হুমকী দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়— তথ্য আদায়ের নামে বন্দীদের মাথা বার বার দেয়ালে সজোরে আঘাত করা হয়েছে। আরও যে জঘন্য ও অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে সিআইএ তা হচ্ছে— অনেক সময় বন্দীদের মলদ্বার দিয়ে খাবার ও পানি ঢোকানো হয়েছে। এ ছাড়া অনেক সময় বন্দীদের সামনে মৃত্যুদণ্ডের নকল মহড়া চালানো হয়েছে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বন্দীদের মনে ভীতি ছড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত তথ্য আদায় করা। বন্দীদেরকে হত্যা ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে ধর্ষণ করা হবে বলে হুমকী দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র লোকজন। আর নাকে-মুখে পানি ঢালা ও ঠিকমতো ঘুমাতে না দেওয়ার কথা তো আগেই প্রকাশ হয়েছে। অনেক বন্দীকে আইস-বাথ বা বরফের ভেতরে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে।
এই সব বর্বরতার ফলে, বহু বন্দীর মনে এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে যে— তারা জীবনে কখনো সিআইএ’র বন্দীশালা থেকে বের হতে পারবেন না। একজন বন্দীকে বলা হয়েছিল— তিনি শুধু ‘কফিনে ভর্তি হয়ে’ বের হতে পারবেন। বন্দীরা কোনোদিন আদালত বা বিচারের মুখোমুখিও হতে পারবেন না— এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে কাউকে কাউকে।
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে এ সব মানুষকে সন্ত্রাসবাদের নামে ধরে নিয়ে সুদূর কিউবার গুয়ান্তানামো কুখ্যাত বন্দী-শিবিরে নির্যাতন করা হয়েছে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। বন্দীদের সঙ্গে ব্যবহার ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো আইনের তোয়াক্কা করেনি সিআইএ’র লোকজন। সিআইএ’র গোপন নির্যাতন কেন্দ্র তৈরী করে দিয়ে এই বর্বরতা চালানোর অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে ইউরোপের কথিত সভ্য সরকারগুলো। এরাই আবার সারাদিন-সারা বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে, বিভিন্ন সরকারকে মানবাধিকারের নসীয়ত করে বেড়ান।
প্রতিবেদন প্রকাশ ও দালালদের সন্তোষ : কিছু দালাল ও গোলাম শ্রেণীর মানুষ এ প্রতিবেদন (রিপোর্ট) প্রকাশের পর এক ধরনের আত্মতৃপ্তিবোধ করেছেন এই বলে যে, গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র নির্যাতন ও অপকর্মের প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন সরকার তাদের সত্য প্রকাশের সৎ-সাহস দেখিয়েছে। এ সব দালাল সমস্ত লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে বলতে চান, প্রতিবেদন আকারে এই সত্য প্রকাশ করা অনেক বড় বিষয়! অনেকে পারে না, ‘শুধু মহান জাতি (!) হিসেবে আমেরিকাই পেরেছে’; এ প্রতিবেদন তাদেরকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। তৃপ্তি-অনুভবকারী লোকজন আরও একধাপ এগিয়ে বলছেন, সম্প্রতি মার্কিন বিবেচনায় যে ১০টি দেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশী অনিরাপদ বলে চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোর সবই মুসলিম দেশ। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি এবং কীভাবে এই অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে কথা একবারও বলছেন না দেশগুলোর ক্ষমতাশীলরা। বলবেন কী করে, মুসলমান হয়েও এরা যে গোপনে-প্রকাশ্যে সিআইএ’র খুঁদ-কুড়ো খান কখনো কখনো; আর মুসলিম স্বার্থে ছুরি চালাতেও দ্বিধাবোধ করেন না!
আসলে বাস্তবতা হচ্ছে— মার্কিন প্রশাসনের সহায়তায় সারা বিশ্বে প্রতিদিন হাজারো কুকীর্তির রেকর্ড তৈরী করে সিআইএ এবং মার্কিন সেনারা। এখন একদিন যদি দুঃখ প্রকাশ করে অথবা সাদামাটাভাবে এ সব দোষ স্বীকার করে তাহলে কি গা থেকে সব ময়লা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়? —না, যায় না। তেমনি ভুলে যাওয়া যায় না নাইন ইলেভেনের নামে সাজানো ঘটনা ঘটিয়ে সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী নাম দিয়ে গায়ের জোরে তাদেরকে ধরে জেলে পুরে ইচ্ছেমতো নির্যাতন করার কথা। ভুলে যাওয়া যায় না ‘ক্রুসেড’র নামে আফগানিস্তান ও ইরাকে লাখ লাখ শিশু-নারীসহ সর্বস্তরের মানুষ হত্যার কথা। এত ভয়াবহ বর্বর নির্যাতনের পর আমেরিকা যতই দুঃখ প্রকাশ করুক না কেন তা কোনোভাবেই যথেষ্ট হয় না; বড় জোর একে ‘গরু মেরে জুতো দান’ বলা যায়, তার চেয়ে বেশী কিছু নয়। এক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আমেরিকাকে সাদা দুধের মতো ধবধবে ভাবার সুযোগ নেই।
কারণ যে সব মানুষ তাদের কুকীর্তির শিকার হয়েছে তাদের জীবন থেকে যে সোনালী সময়গুলো চলে গেছে; অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তাদের কী হবে? কে ফিরিয়ে দেবে তাদের জীবনের সেই সোনালী দিনগুলো? সিআইএ এবং মার্কিন প্রশাসনের বর্বরতার সরাসরি শিকার হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ; আর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেই সব দোষ থেকে মুক্তি! যারা গোলামী করতে পছন্দ করেন তারা এমনটি ভাবতে পারেন কিন্তু কোনো সৎচিন্তার বিবেকবান মানুষের পক্ষে এমনটা ভাবা সম্ভব নয়।
প্রতিবেদন সম্পর্কে সিআইএ প্রধান যা বললেন : নির্যাতনের এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থাটির কার্যক্রমে অমানবিকতার অবসান ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন। কিন্তু সে আশার গুড়েবালি দিয়েছেন সিআইএ’র প্রধান জন ব্রেনান। তিনি সিআইএ’র লোকজন এবং তাদের নির্যাতনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিআইএ’র পরিচালক জন ব্রেনান স্বীকার করেছেন, বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদের কিছু পদ্ধতি খারাপ ছিল। তবে তা থেকে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করে বড় ধরনের হামলা প্রতিহত এবং মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন।
তিনি দাবী করেন, সিআইএ বেশীরভাগক্ষেত্রেই সঠিক কাজ করেছে। জন ব্রেনান অনেকটা উলঙ্গভাবে সাফাই গেয়ে আরও বলেছেন, আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের কর্মসূচি পর্যালোচনার পর এ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এর কারণে আমেরিকা অনেক ভাল গোয়েন্দা পেয়েছে যাদের সহায়তায় বহু হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে, বহু সন্ত্রাসীকে আটক করা গেছে এবং বহু জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
ব্রেনান এও দাবী করেছেন, বন্দীদেরকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ না করলে এ সব তথ্য পাওয়া যেত কিনা তা তার জানা নেই। এখানে একটি প্রশ্ন না তুলে পারা যাচ্ছে না— সেটি হচ্ছে বারাক ওবামার আমলে যখন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে তখন কেন সিআইএ’র প্রধান তার পক্ষে সাফাই গাইছেন? কারণ আর কিছুই নয়— ২০০২ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে যখন এই নির্যাতন ও বর্বরতার মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের কর্মসূচি চালু হয় তখন ব্রেনান ছিলেন সিআইএ’র সিনিয়র কর্মকর্তা। তিনি সিআইএ’র কর্মকাণ্ডকে মুখে নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য বলেছেন কিন্তু একবারও বলেননি, সিআইএ’র লোকজন কোনো রকম নির্যাতন চালিয়েছে।
তিনি দাবী করেছেন, সিআইএ’র বেশীরভাগ সদস্য মার্কিন বিচার বিভাগ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন এবং বিচার বিভাগই কিছু বর্বর পদ্ধতিকে অনুমোদন দিয়েছিল। তিনি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলেছেন, “সিআইএ’র সদস্যরা জাতির জন্য তা-ই করেছেন যা তাদের দায়িত্ব ছিল।”
শুধু তাই নয়, মার্কিন সিনেট কমিটি যখন সিআইএ’র নির্যাতনের বিষয়ে রিপোর্ট তৈরী করেছে তখন এই জন ব্রেনান তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার এ বাধা দেওয়ার কথা ফাঁস করে দিয়েছেন মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাট দলের বিদায়ী সদস্য মার্ক উডাল। সেই সঙ্গে তিনি ব্রেনানকে সিআইএ’র প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সিআইএ’র নির্যাতন এতটাই মারাত্মক ছিল যে, খোদ সিনেট কমিটি সিআইএ’র নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদের কৌশলকে বর্বর এবং অকার্যকর বলে আখ্যা দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে বারাক ওবামা ২০০৯ সালে এই কর্মসূচি বন্ধ করে দেন।
মুখ খোলেননি বুশ, মাইক বাজাচ্ছেন চেনি : বর্বাচিত বিষয় হচ্ছে, যিনি এই কর্মসূচি চালুর প্রধান খলনায়ক সেই জর্জ ডব্লিউ বুশ এখনো এ বিষয়ে মুখ খোলেননি; তবে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি সিআইএ’র নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদের কৌশলের সমালোচনাকে জোরাল ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। যুদ্ধবাজ ডিক চেনি মার্কিন ফক্স নিউজকে অত্যন্ত দাম্ভিকতার সাথে বলেছেন, “সিআইএ-তে কর্মরত নারী—পুরুষ সদস্যরা তা-ই করতেন যা আমরা তাদের কাছে চাইতাম।” ডেক চেনি আরও বলেছেন, “আমরা এই পদ্ধতিতে খালেদ শেখ মুহাম্মাদকে পেয়েছি যিনি ৯/১১’র প্রধান পরিকল্পনাকারী। তার সঙ্গে কী করা উচিত ছিল? তার দুই গালে কি চুমু দেব আর বলব দয়া করে আপনি যা জানেন তা আমাদেরকে বলেন? অবশ্যই না।” ডিক চেনি মার্কিন সিনেট কমিটির প্রতিবেদনকে পুরোপুরি ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিচার দাবী করেছে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো : জিজ্ঞাসাবাদে নানান ধরনের ভয়াবহ নির্যাতনমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে বলে সিনেটের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য দাবী তুলেছে জাতিসংঘ ও বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা। ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড চালানো হয়। তবে বুশ প্রশাসনের এ সব দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ মার্কিন বিচার বিভাগ বন্দীদের সঙ্গে এ ধরনের অসদাচরণের বিরুদ্ধে দু’টি তদন্ত চালিয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে তা আর এগোতে পারেনি।
পরিষ্কার হল কি মার্কিন মানবাধিকার চিত্র ? : মার্কিন সরকার সারা দিন-সারা বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েই বেশী সরব থাকে। ভাবখানা এমন যেন ‘সারা বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতির নজরদারী করা তাদেরই দায়িত্ব’; মানবাধিকারের একমাত্র রক্ষক তারাই। অথচ বিশ্বের যে সব দেশের সঙ্গে মার্কিন সরকারের সম্পর্ক ভাল নয় সেই সব দেশকে ঘাঁয়েল করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার ইস্যুকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মার্কিন সরকার।
এবং এই সেদিনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, তার দেশে এখনো বর্ণবাদ বিদ্যমান। সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়েও বলা যায়— যে দেশের প্রেসিডেন্ট বলেন তার নিজের দেশেই বর্ণবাদ বিদ্যমান সেই দেশে আর যাই হোক মানবাধিকার পরিস্থিতি ভাল থাকার কোনো কারণ নেই। আর এ অবস্থা বোঝার জন্য বিশেষ কোনো গবেষণারও প্রয়োজন হয় না। যে দেশে শ্বেতাঙ্গের হাতে কৃষ্ণাঙ্গের অধিকার রক্ষিত হয় না তারা কী করে রক্ষা করবেন সারা বিশ্বের মানবাধিকার! সঙ্গত কারণেই বন্দীদের সঙ্গে ভাল আচরণ করতে; তাঁদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে সিআইএ।
সবচেয়ে বড় যে কারণে সিআইএ’র এই আচরণ তা হচ্ছে নাইন ইলেভেনের সাজানো হামলা নাটকের পরপরই প্রেসিডেন্ট বুশ মুসলমানদের বিরুদ্ধে “ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের” ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে সংশোধন করে “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” কথা বলেন। বেফাঁস তার মুখ দিয়ে ক্রুসেডের মতো সত্যি চিন্তা বের হয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববাসী জেনে যায় কী তাদের আসল উদ্দেশ্য। সেই মুসলিম-বিদ্বেষী ক্ষোভ এবং আক্রোশ নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশে দেশে। আটক করে শত শত মানুষকে; সামরিক অভিযানে মারা যায় লাখ লাখ মানুষ।
নতুন মধ্যপ্রাচ্য গড়া আর তেলের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার গোপন মহাপরিকল্পনা নিয়ে সারা বিশ্বে বিশেষ করে আফ্রিকা থেকে চীন সীমান্ত পর্যন্ত আর ইন্দোনেশিয়া থেকে রাশিয়া সীমান্ত পর্যন্ত মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ছুঁতোয় নানা সময়ে অভিযান চলে দফায়-দফায়। এ সব অভিযানের ফাঁকে আটক করে বিপুল সংখ্যক মুসলমানকে আর তাঁদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যেমন তারা মনের ঝাল মিটিয়েছে তেমনি তারা সারা বিশ্বের মুসলমানের মনে ত্রাস সৃষ্টি করতে চেয়েছে।
আর এ কাজ করেছে এই কারণে, যাতে মুসলমানরা তাদের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ান। কিন্তু ইরানসহ নানা কারণে তাদের সে পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে মার খেয়েছে। তবে তারা এখনো তাদের সেই মহাপরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে তা বলা যাবে না। তেমনি তাদের মন থেকে যায়নি তেলের নেশা; যায়নি মুসলিম-বিদ্বেষ।
মানবাধিকারের কথিত ধ্বজাধারীরাই মানবাধিকারকে বিশেষ করে মুসলমানের অধিকারকে পায়ে দলে চলেছে প্রতিনিয়ত। এত কিছুর পরও কি মার্কিনীদের মানবাধিকারের চেতনা পরিষ্কার হয় না! তারপরও কি প্রশংসা করে বলতে হবে— আমেরিকা প্রতিবেদন প্রকাশের ‘সৎসাহস’ দেখিয়েছে ? !
লেখক : রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগে কর্মরত সাংবাদিক

( মুক্ত কলম বিভাগে প্রকাশিত লেখা— লেখকের নিজস্ব চিন্তা ও মতের প্রতিফলন। খবর বাংলা টুয়েন্টিফোর ডটকম কর্তৃপক্ষ লেখকের লেখার বিষয়বস্তু, মত অথবা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের দায় নেবে না।)

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend