এ যেন কুমিরের মায়াকান্না!

7d20b9d1941f5462e25db9162ea678d6-Pinak-06‘যারা মারা গেছে, তাদের জন্য আমার খুব কষ্ট লাগছে। আমার বুকটা ফাইটা গেছে। তবে আমি ভয়ে পালায় গেছিলাম।’ মুন্সিগঞ্জের পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চের মালিক গ্রেপ্তার হওয়া আবু বকর সিদ্দিক ওরফে কালু লঞ্চডুবিতে নিহতের জন্য এভাবেই শোকপ্রকাশ করলেন।
আজ বুধবার রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদর দপ্তরে ঢোকার আগে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আবু বকর সিদ্দিক।
পিনাক-৬ লঞ্চের মালিকের দাবি, লঞ্চে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, বয়া ছিল। লঞ্চডুবির সব দোষ তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) ও বাংলাবাজার ঘাট ইজাদারের ওপর চাপালেন। তিনি বলেন, ঘাট ইজারাদারদের অনুমতি ছাড়া এখান থেকে লঞ্চ ছাড়া যায় না। তারা যাত্রী দেয়। ৭০-৮০ জন যাত্রী উঠলে ভাড়া পাওয়া যায় ১০-২০ জনের। বাকি টাকা ইজারাদার রেখে দেয়। এ ঘাটে না থামলে পরের দিন লঞ্চ ছাড়ার সিরিয়াল মেলে না। বিআইডব্লিউটিএর লোকজন এসব জেনেও কিছু বলে না।

আবু বকর সিদ্দিকের দাবি, বাংলাবাজার ঘাট তদারক করেন ইয়াকুব আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এখন আওয়ামী লীগ করেন।

এই দুর্ঘটনার জন্য অনুতপ্ত কি না—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পিনাক-৬-এর মালিক বলেন, ‘আমি যদি একটা বড় লঞ্চ কিনতে পারতাম, তাইলে দুর্ঘটনা ঘটত না। যারা মারা গেছে, তাগো লাইগা আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আমার লঞ্চ ব্যবসার জীবনে এত বড় দুর্ঘটনা কখনো হয় নাই।’ তিনি জানান, চার বছর আগে তিনি মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১১ লাখ টাকায় পিনাক-৬ লঞ্চটি কেনেন। লঞ্চটি স্টিলের তৈরি ছিল।

এদিকে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, দুর্ঘটনার পর আবু বকর সিদ্দিক বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে আবু বকরকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৭।

লঞ্চডুবির ঘটনায় করা মামলার অন্য পাঁচজন আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পিনাক-৬ লঞ্চের মালিক আবু বকর সিদ্দিক মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বাসিন্দা। তিনি উপজেলার দক্ষিণ মেদেনীমণ্ডল ইউনিয়ন বিএনপির নেতা। লঞ্চ ব্যবসা ছাড়াও তিনি ঢাকা-মাওয়া রুটে ইলিশ পরিবহনেরও একজন অন্যতম মালিক। ঘটনার পর তিনি গা ঢাকা দেন। গতকাল দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ হাউজিং এলাকার একটি বাসা থেকে সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করা হয়।

লঞ্চ ডুবির ঘটনায় মালিককে প্রধান আসামি করে এর মাস্টার (চালক), সারেং ও সুকানিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বেপরোয়া লঞ্চ চলাচল, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলাটি করেছেন বিআইডব্লিউটিএর মাওয়া ঘাটের পরিবহন পরিদর্শক জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া।

৪ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি থেকে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে মাওয়ায় আসার পথে বেলা ১১টার দিকে ডুবে যায় পিনাক-৬।

এ ঘটনায় মোট ৪৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত না করে গত সোমবার উদ্ধারকার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend