শ্রীবরদীতে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি: ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

শ্রীবরদীতে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি: ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি:
শেরপুরের শ্রীবরদীতে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে অনেক কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। ১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোররাত ৪.০০ টার দিকে প্রায় আধঘন্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার পৌরসভা, গোশাইপুর, কুড়িকাহনিয়া, খড়িয়াকাজির চর, তাতিহাটি, রাণীশিমুলসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ধান, শসা, কলা বাগান সহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  এমনিতেই ব্লাস্টের আক্রমণে অনেক কৃষক ধান খেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এরমধ্যে মঙ্গলবার হঠাৎ শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ে ফসলের এমন ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন ও কৃষকদের সাথে কথা বলে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। 


মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার মাটিয়াকুড়া, জঙ্গলখিলা, বাদে ঘোনাপাড়া, ধাতুয়া, জালকাটা, ষাইটকাকড়া, দক্ষিণ মাটিয়াকুড়া, কুরুয়া, কুড়িকাহনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ শিলাবৃষ্টি ও বৈশাখী ঝড়ে ধান, শসা, ডাটা, কলাবাগান, কুমড়া সহ বিভিন্ন সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে ঘর-বাড়ি, ছিদ্র হয়েছে বসত ঘরে টিনের চাল। জালকাটা গ্রামের আলম মিয়া বলেন, আমি ধার দেনা করে প্রায় দুই একর ধান ও ৫০ শতাংশ জমিতে শসা লাগাইছিলাম, আমার ধান এবং শসা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। একই গ্রামের  আলা উদ্দিন বলেন, আমার ধান, শসাসহ সবজি ক্ষেত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমার বসত ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। এখন কোথায় থাকবো? কি করব বুঝতে পারছি না। মাটিয়াকুড়া গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান, লিয়াকত হোসেন,   বিল্লাল হোসেন সহ অনেকেই বলেন, আমাদের শসা ও ধান ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে কিভাবে চলবো আমরা বুঝতে পারছি না। জঙ্গলখিলা গ্রামের ছানোয়ার হোসেনের স্ত্রী শিমা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা খুব কষ্ট করে এক একর জমি চাষ করেছিলাম। হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে আমাদের সম্পূর্ণ ধানের ক্ষেত নষ্ট করেছে। গোশাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজামাল ইসলাম আশিক বলেন, শিলাবৃষ্টিতে এ ইউনিয়নের কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো যেন তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সহযোগিতা করা যায়।


এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে ও ঝড়ে উপজেলায় বোরো ২৫১৪ হেক্টর জমির ধান ও ২৭৯ হেক্টর জমির সবজি ও অন্যান্য ১২৬ হেক্টর জমির আবাদ সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে এবং বোরো ১৬৭৬ হেক্টর ধান, সবজি ৩১ হেক্টর ও অন্যান্য আবাদ ৫৪ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা এবং পূর্ণবাসন কার্যক্রমে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ফসল ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের মাঠ ও ঘরবাড়ি পরিদর্শন করলাম। কৃষক অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ  কৃষকদের তালিকা তৈরি করে কৃষকদের সহযোগিতার আওতায় আনা হবে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend