দেশে টিভি চ্যানেল বেড়ে চললেও কমেনি ভারতীয় চ্যানেলের দাপট

244444444হুমায়রা ও রাফিদ দুই ভাইবোন। ওদের প্রিয় অনুষ্ঠান স্টার জলসার কিরণ মালা। রুপকথার গল্প কিংবা কার্টুন দেখতে আজকালকার শিশুরা যেনো বুঁদ হয়ে থাকে ভীনদেশি চ্যানেলে। কেনই বা হবে না। শিশুমনের এই খোরাকটুকু ঠিক মতো যোগাতে পারছে না এদেশের টিভি চ্যানেলগুলো।

হুমায়রা জানায়, ‘এখানে সবসময় রাক্ষসরা কিছু ষড়যন্ত্র করে। আর কিরণমালা সেটাকে ন্যায়পথে চালানোর চেষ্ঠা করে। বাংলাদেশে তো এশিয়ান টিভিতে শুধু ডোরেমন আর তো এর চেয়ে বেশি কিছু হয়না। এর জন্য আমরা হিন্দি, মটু পাতলু তারেপরে অন্যান্য বিদেশী চ্যানেলগুলোও দেখি।’

আর এভাবে রোজ-রোজ বৈদেশী টিভি চ্যানেলে দারস্ত হতে গিয়ে শিশুদের মনোজগত দখলে নিচ্ছে অদ্ভুত এক সংস্কৃতি।

তাই হয়তো পোশাক পরিচ্ছদের পর, এবার ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের লেখাড়ার খাতায়। পত্রিকার এই খবর বলছে, ময়মনসিংহের নান্দাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে স্কুল শিক্ষার্থীদের হাতে শোভা পাচ্ছে কিরণমালা ও বোঝেনা সে বোঝেনা সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের ছবি সম্বলিত মলাটের খাতা। দোকানপাটে বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে।

এর আগে গেলো বছর সিরিয়ালের ‘পাখি’ নামের পোশাক কিনে না দেয়ায় আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া, অনেকের সংসারে ঝগড়াবিবাগ ও অশান্তি তৈরীর পেছনেও হিন্দি সিরয়াল প্রভাবের কথা সবার জানা।

সব কিছুর পরও বিনোদন পিয়াসী বাঙ্গালীরা বিনোদন খুঁজে ফিরছেন পরদেশী চ্যানেলের মাঝেই। কী শহর, কী গ্রামগঞ্জের হাটে-বাজারে।

বর্তমানে দেশে সম্প্রচারে আছে ১৬টি মিশ্র ঘরানার টিভি চ্যানেল। কিন্তু, গতানুগতিক ও ধার করা অনুষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপনের বাড়াবাড়ির কারণে ভীনদেশী চ্যানেলে আধিপত্য মোকাবেলা অধরাই রয়ে গেছে।

চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘অর্থলগ্নি এবং উত্তলন এই করে তো কালচার টিকবে না।এবং ২১ টা না ক’টা চ্যানেল হয়েছে।চ্যানেলের ছড়াছড়ি কিন্তু মোটামোটি সবই একই রকমের প্রোগ্রাম। এখন এ নিয়ে যদি তারা বারবার কপাল চাপড়ায়আর বলে, হায় বিদেশী চ্যানেল দেখছে আমাদের টা দেখছে না তাহলে এটা একেবারেই অর্থহীন হবে। দেখবেই ওরা, কারণ আমরা সেই মানে যাচ্ছি না। মান যেদিন ভালো হবে সেদিন দেখার সুযোগ তৈরী হবে।’

এছাড়া, ছয়-ছয়টি সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল থাকলেও এদেশের মানুষকে তারা সামনের দিকে পথ দেখাতে পারছে না বলে মনে করেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ চ্যানেল এখন থ্রিলার নিউজ। খুব সামান্য ঘটনাকে হম্বিতম্বি করে দেখানো হচ্ছে। আমাদের জাতি গঠনে সামনে দেখা দরকার, সেই নিউজটা কে দেবে?

এ অঙ্গনের উদ্যোক্তারা বলছেন সত্যিকারের জনমানুষের টেলিভিশন গড়ে তোলার পথে মূল বাধা বিজ্ঞাপন নির্ভরতা।

চ্যানেল আই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে অনুষ্ঠান সাজাতে পারছি না। এর কারণ হলো আমাদের চলতে হয় শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের টাকায়।কিন্তু বেশিরবাগ টেলিভিশনই চলে দর্শকদের টাকায়।যখন আমরা দর্শকদের টাকায় একটি চ্যানেল চালাতে পারবো তখন আমরা নির্ধারণ করতে পারবো যে চ্যানেলটি কি ছোটদের জন্য করবো নাকি রাজনীতিবিদদের জন্য করবো নাকি অন্যকিছুর জন্য করবো।

তবে, যুক্তি আর বাস্তবতার ব্যবধান যাইহোক, যাদের জন্য এদেশে এতো-এতো টেলিভিশন, সেই দর্শকদের সাথে ব্যবধান ঘোচানোটা হয়তো নিকট ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend