মানবপাচার : কয়েকমাস আগেই জানিয়েছিল মালয়েশিয়া!

KJN--HOME-PM_1থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার বন্দীশালায় ও সমুদ্রে ভাসমান কতজন বাংলাদেশী আছেন তার হিসাব সরকারের কাছে নেই। তবে কয়েকমাস আগেই বাংলাদেশকে মানবপাচারের এ ভয়াবহ চিত্রের কথা মালয়েশিয়া জানিয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে মালয়েশিয়ায় কারাবন্দী থাকার বিষয়ও জানানো হয়। এই মানবপাচার মালয়েশিয়া সরকারের জন্য মাথাব্যথার হয়ে উঠেছে বলেও জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরের প্রাক্কালে ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ বিষয়টি উঠে আসে। সে বৈঠকে মানবপাচার দমনে কঠোর হতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরের বিষয়বস্তু নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ওই প্রস্তুতিমূলক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের বিষয় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়।
ওই সভায় উপস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে জানান, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরের প্রাক্কালে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় পররাষ্ট্র সচিব কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেন। বৈঠকে তিনি (পররাষ্ট্র সচিব) বলেন, ‘ইদানীং বাংলাদেশ হতে নৌপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগারে ও ক্যাম্পে কয়েক হাজার বাংলাদেশী আটক আছে। তাদের মধ্যে বেশকিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশী পরিচয়পত্র/নাগরিকত্ব সনদপত্র/পাসপোর্ট ইত্যাদি রয়েছে। বিষয়টি মালয়েশিয়া সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সে সময় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘নৌপথে মানবপাচাররোধে অতি জরুরী ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সচিব জানান, আজ হাজার-হাজার মানুষ সাগরে ভাসছে। অনেক মানুষ মারা গেছেন। অনেকে অনাহারে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর। এত মানুষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে সাগরে গিয়েছে সে প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? বিভিন্ন সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের কারাগারে আটক বাংলাদেশী নাগরিকদের সম্পর্কে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে আটক বাংলাদেশীদের তথ্যসম্বলিত চিঠি নানা সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট টেকনাফের ৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন মিয়ানমারের কারাগারে আটক ৫৫ বাংলাদেশীর তথ্য জানায়। এ সংক্রান্ত চিঠি ওই বছরের ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট মিয়ানমারের কারাগারে বন্দী আরও ৪২ বাংলাদেশীর তথ্য জানিয়ে একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানবপাচার বিষয়ে সরকার সজাগ রয়েছে। আগামীতে এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে কঠোর পাহারাসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend