তারপরও ভয়ে কাতর পাকিস্তান!

Dhaka-test-পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে পাহাড়-ছোঁয়া রানের ব্যাটিং পাণ্ডুলিপির পর; বাংলাদেশের দৌড়ঝাঁপ করার বাইরে কিইবা করার রয়েছে? তবে পাকিস্তান যে ভয়ে-ডরে এখনো আটখান তা বুঝতে বাকি নেই। ন্যূনতম ঝক্কি-ঝামেলা; সরল কথায়, ঝুঁকি নিতেও ভয়-কাতর সফরকারীরা। সেই কারণেই ফলোঅনের সুযোগ যখন মুঠোবন্দী; তখন তা না করে ব্যাটিংয়ে নেমেছে পাকিস্তান। তৃতীয় দিন শেষে হিসেব-নিকাশ, বাংলাদেশের সামনে বহুদূর পাড়ি দেওয়ার মিশন। বিশ্ব ক্রিকেটে কোনোদিন যা ঘটেনি; তাই করতে হবে, ৫৫০ রান। যদি ‘জয়’ দেখতে চায়।
মিরপুরে পাকিস্তানীদের ব্যাট-বলের ঘেরাটোপে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হা-হুতাশ। সেখানে ক্রিকেটের মেধাদীপ্ত ব্যাটিং-বহুমুখীতার স্ফূরণ; কিংবা বিস্ময়কর কোনো ঘটনা ঘটলেই ঢাকা টেস্ট হয়ে যাবে বাংলাদেশের; হবে বিরল টেস্ট জয়ের রেকর্ডও। এটা খোলা চোখে দিন-দুপুরে দিবাস্বপ্ন দেখার সামিল। বাদ দিই স্বপ্নাবেগ। বাস্তবতা হারের ব্যবধান কমানোর। সেই প্রচেষ্টার সামনে দাঁড়িয়ে স্পিন-বিষ, বারুদে পেস। তবে ইমরুল কায়েসের আউট দেখে; আর যাই হোক ঢাকার টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা এখন যুদ্ধদীর্ণ। পেসের চাইতে বাকি ২ দিনে চালকের আসনে থাকবেন স্পিনাররা।

শেষ বেলায় পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের কয়েকটি ঢাউস সাইজের ছক্কায় পুরো স্টেডিয়াম নিরব-নিথর হয়ে পড়লেও গুটি-কয়েক পাকিস্তানী সমর্থকরা তা প্রাণ-উজাড় করে উপভোগ করেছেন। মনে হচ্ছে, তাদের দীর্ঘদিনে চাপা কষ্ট ভুলতে পেরেছেন সিরিজের অন্তিমলগ্নে। হয়তো শনিবারই জয় দেখতে চাচ্ছে পাকিস্তান; সেই কারণেই শেষবেলায় ১৪ ওভারের ব্যাটিংয়ে নামিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসের মতো ধড়পড় উইকেট পতনের মুখে না পড়লেও উইকেটে অফ স্পিনে যে ঘুর্ণির অবতারণা করেছেন; তাতে ভয় হাত বাড়িয়ে।
এর আগে এই স্টেডিয়ামে সিরিজের ৪টি ম্যাচেই বাংলাদেশের পক্ষে সৌভাগ্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল মিরপুরের উইকেট। ওয়ানডে সিরিজ; জয় জয়কার। টোয়েন্টি২০ সেখানেও। সেই মাঠের ভিন্ন উইকেটই এখন শরতের বৃষ্টির মতো। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় স্পিন-পেসে বিষফণা তুলছে। উল্টোভাবে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে আরাম এনে দিচ্ছে। আহ; কি বৈচিত্র্যের উইকেট। নাকি বাংলাদেশের ব্যাটাররা হাঁপিয়ে ওঠছেন জয়ের রেশ ধরে রাখতে? হতে পারে তেমন কিছুও। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তামিমকে কিন্তু খুলনার দ্বিতীয় ইনিংসের তামিম মনে হয়েছে। স্বভাব-সিদ্ধ ৩৩ রান স্রেফ ৬৬ মিনিটের। বল মাত্র ৪২টি। একটুও দিকভ্রান্ত ব্যাটিং করেননি তামিম। দিনের তখন মাত্র বাকি ২.৫; ঠিক সেই সময়ে তামিমের ব্যাক-আপ ব্যাটার হিসেবে দুরন্ত খেলছিলেন ইমরুল কায়েস। তাদের ব্যাটের ছন্দে ফিরে আসছিল খুলনার আমেজ। কিন্তু ঘুর্ণিঘাতক ইয়াসিরের একটি বিস্ময়কর বলে ছত্রখান হয়ে গেছে তার স্ট্যাম্প। যেখানে পা রেখে ব্যাট চালিয়েছেন; তাতে বলটি ছিল নাগালের অনেক বাইরে। এমন বলে বোল্ড আউট হওয়ার ঘটনা শেন-ওয়ার্ন-মুরালিতেই দেখা গিয়েছে। কতটা টার্ন নিয়েছে বলটি চোখে না দেখলে লিখে বুঝানো বেসম্ভব। প্রথম ইনিংসে যেভাবে মুশফিককে হারিয়ে আফসোসে পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে; ইমরুলেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দিনের একেবারে অন্তিম লগ্নে ফিরেছেন দুইজনই। তবে মুশফিকের বোল্ডের চেয়ে ইমরুলের তৃতীয় দিনের বোল্ডটিকে বলতে হবে অসাধারণ-ক্লাসিক। ঢাকার উইকেটে এভাবে টার্নিং পাওয়া যায়; এই ঘটনা কষ্মিলকালেই দেখা গিয়েছে।
ম্যাচ নিয়ে কোন ধোঁয়াশা নেই; পুরোপুরি পাকিস্তানের পক্ষের ম্যাচ। হিসেবেটা এখন শুধু বিশ্বকাপে গর্জে ওঠা টিম বাংলাদেশের ব্যাটিং দৃঢ়তার উপখ্যান দেখার। বাকি ১৮০ ওভার। হাতে ৮ ব্যাটসম্যান। কারণ ইনজুরড শাহাদাত থেকেও একাদশে নেই।Dhaka
প্রথম ইনিংসে সৌম্য-শুভাগত যদি একটু সার্পোট দিতে পারতেন; তা হলে এমন ম্যাচেও বাংলাদেশের পাবার অনেক কিছুই ছিল। তারা পারলে সেঞ্চুরি না করতে পারার গভীর আক্ষেপ-যাতনা সইতে হতো না সাকিবকে। একপ্রান্ত শতভাগ আগলে রেখে ক্যারিয়ারের আরেকটি সেঞ্চুরির পালক লাগাতে লাগাতেও পারেননি। প্রথম ইনিংসে সাকিব ছিলেন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ব্যাটার। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১১ রান দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছেন সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিল। সেই মিছিলের ফাঁক গলিয়ে তৃতীয় দিন ১৪ রানে ব্যাটিং নামা সাকিব দলকে ২০৩ রান পর্যন্ত টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে গেছেন। তৃতীয় দিন ১০৭ রান নিয়ে সাকিবের সঙ্গী হয়েছিলেন সৌম্য। মাত্র ১৩ বলের সঙ্গী হতে পেরেছেন সৌম্য। হঠাৎই ওয়াহাবে বিপাকে পড়েছেন সৌম্য। সৌম্যের টেস্ট সম্ভাবনা সলতেটা জ্বলে ওঠেনি। ওয়াহাবেই পরের ওভারেই এক বল খেলা শুভাগত হোম বোল্ড আউট। বাংলাদেশের স্কোর ১১৯/৭। সেখান থেকে ২০০ প্লাস রান; যার জন্য একাই সাকিব লড়াই করেছেন। তাইজুলকে নিয়ে ১৪০ রান অবদি ছুটেছেন সাকিব। সেখানে তাইজুলের ১৫ রানে আরো সাহস পেয়েছেন সাকিব। পরের পার্টনারশিপের অংশীদার পেসার শহীদ। অসাধারণ। টানা ৪৪ মিনিট সাকিবের সঙ্গ দিয়েছেন শহীদ। খেলেছেন ২০ বল। ১ রান করলেও নবমযুগলে শহীদ-সাকিবে ৬৩ রান। যেখানের সাকিবের একাই ৬১। শহীদও ইয়াসিরে বশ। ওই সময় হয়তো সঙ্গীহীন সাকিবের খুব মনে হয়েছে চোটের কারণে খেলতে না পারা শাহাদাত হোসেনের কথা। ইস; যদি শাহাদাতকে পেতেন সাকিব-এই আফসোস দেখেছে মিরপুরও। ৯ উইকেট হারিয়েই অল আউট বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনও পার করতে পারেনি বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের ৫৫৭/৮-এ ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে ৩৫৪ রান পিছিয়ে। সফরকারীরা তারপরও ফলোঅনে পাঠায়নি বাংলাদেশকে। আগে থেকে বৃষ্টি বৃষ্টি বেহুদা আভাষের কথা মনে রেখেই তারা দ্বিতীয় দফা ব্যাটিংয়ে নেমেছিল। তুলেছে ঝটপট রানও। তবে প্রথম ওভারেই শহীদে ফিরে গেছেন হাফিজ। দলের এবং নিজের শূন্য রানে। ২ উইকেট হতেও সময় লাগেনি। ২৫ রানের মাথায় ব্যাট-প্যাডে জমে ওঠার আগেই বিদায় ৮ রানে। বিরতি দিয়ে উইকেট পড়লেও রানের চাকা সচল রেখেই পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ৪১.১ ওভার ব্যাটিং করেছেন। তুলে নিয়েছে ১৯৫/৬ রান। এরপর আবারো ইনিংস ঘোষণা।
একটা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে আবারো, মিসবাহ বাংলাদেশের বিপক্ষে চলে না। এত সেঞ্চুরির ভিড়েও সেঞ্চুরির স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার। তবে চেষ্টা চালিয়েছেন বেশ। ৮২ রানে আউট হওয়ার আগে ৩টি ছক্কাও মেরেছেন। ফেলেছেন গ্যালারিতেও। কিন্তু আসল কাজটি করতে পারেননি। বাংলাদেশকে ৫৫০ রানের টার্গেট দিয়ে দিনের শেষবেলায় ১৪ ওভার ব্যাটিংয়ে সুযোগ দিয়েছেন মিসবাহ। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৩ রানে হারিয়েছে ইমরুলকে। উইকেটে ইনফর্ম তামিমের সঙ্গী রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন-বিভোর মুমিনুল। টানা ১০ হাফ সেঞ্চুরিতে শচিনকে ছুঁয়ে দেখা মুমিনুলের সামনে আরেকটি রেকর্ডের হাতছানি। শনিবার টেস্টের চতুর্থ দিন মুমিনুল ১৫ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামবেন। তামিমের পাশে তখন শোভা পাচ্ছে ৩২। তামিমও হতে পারেন নিজ স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। কারণ, আর মাত্র ১৭ রান করলেই তামিম পৌঁছে যাবেন শীর্ষাসনে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের গৌরবের পাশে শোভা পাবে তার নাম। বাংলাদেশের পক্ষে ৩০২৬ রান করে এখনো সবার ওপরে হাবিবুল বাশার। তামিমের সেখানে ৩০১০। ম্যাচের ভাগ্যে যা আছে হবে তাই। সেখানে যদি তামিম-মুমিনুল-সাবিক-মুশফিকরা নিজেদের ক্যারিয়ারে জন্য রান করতে করতে যদি দলের জন্য ৪৮৭ রান করে ফেলেন; হয়ে যাবে ফ্রেমে বাধানোর মতো বিশ্বরেকর্ড। এমন সত্যি হয়তো হওয়ার নয়; হবেও না। আসুন তারপরও বেহিসেবীদের মতো স্বপ্ন দেখি-একটি বিরল টেস্ট জয়ের।
সংক্ষিপ্তস্কোর
পাকিস্তান : প্রথম ইনিংস, ৫৫৭/৮ ডিক্লেয়ার, ওভার ১৫২ (আজহার ২২৬, ইউনিস ১৪৮, আসাদ শফিক ১০৭; তাইজুল ৩/১৭৯, শহীদ ২/৭২, শুভাগত ২/৭৬)
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ২০৩/১০, ওভার ৪৭.৩ (সাকিব ৮৯*, ইমরুল ৩২, মাহমুদউল্লাহ ২৮, তাইজুল ১৬, মুশফিক ১৩, তামিম ৪; ইয়াসির ৩/৫৮)
পাকিস্তান : দ্বিতীয় ইনিংস, ১৯৫/৬ ডিক্লেয়ার, ওভার ৪১.১ (মিসবাহ ৮২, ইউনিস ৩৯, আজহার ২৫; শহীদ ২/২৩, মাহমুদউল্লাহ ১/৮, শুভাগত ১/১৮, সৌম্য ১/৪৫, তাইজুল ১/৫৬)
বাংলাদেশ : দ্বিতীয় ইনিংস, ৬৩/১, ওভার ১৪ (তামিম ৩২*, মুমিনুল ১৫*, ইমরুল ১৬; ইয়াসির ১/৭)
*তৃতীয় দিন শেষে

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend