কৌশলে এগিয়ে আনিস-খোকন, সহানুভূতিতে আব্বাস-তাবিথ

city-special-news-assign-by-(2)কৌশল আর প্রচারণায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন। অপরদিকে জনগণের সহানুভূতিতে এগিয়ে আছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়াল।
রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা প্রচার-প্রচারণার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এমনটাই মন্তব্য করছেন।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক মিডিয়াবান্ধব ও তার প্রচারণায় চমকপদ কৌশল ছিল। সাইকেলে চড়ে প্রচারণা, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনে সরব ছিলেন তিনি। রাস্তা ঝাড়– দেওয়ার বিষয়টি ছিল আকর্ষণীয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত অপর প্রার্থী সাঈদ খোকন তার নির্বাচনী এলাকার এমন কোনো স্থান নেই যেখানে যাননি। এ ছাড়া গণমাধ্যমে প্রচারণা ও সামাজিক নানা যোগাযোগ মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা সাঈদ খোকনের প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, প্রচারণাকালে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে চারবার হামলার ঘটনায় ভোটারদের মনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সহানুভূতির জন্ম দিয়েছে। যার সুফল পেতে পারেন তাবিথ আউয়াল।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস একাধিক মামলায় জামিন না পাওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন। তাই তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। প্রচারণায় আফরোজা আব্বাস আবেগময় বক্তব্য দিয়ে স্বামীর পক্ষে মগ মার্কায় ভোট চেয়েছেন। যাতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে আব্বাস ভোটারদের সহানুভূতি পাবেন।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে নিজের প্রতীক ইলিশ মার্কায় ভোট চেয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচারণা ও মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা সাঈদ খোকনের প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সাঈদ খোকন মোবাইলে ক্ষুদে বার্তায় লেখেন, ‘প্রিয় ঢাকাবাসী, সালাম নিবেন। স্বশরীরে এসে ভোট চাইতে না পারায় ক্ষমা প্রার্থী। আধুনিক ঢাকা গড়তে মেয়র পদে ইলিশ মাছ প্রতীকে ভোট দিন।’
ব্যতিক্রমী নির্বাচনী প্রচারণায় ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক ভোটারদের মন কেড়েছেন। গণমাধ্যমে সরব উপস্থিতি, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন, নিজের ব্যক্তি পরিচয় ও আওয়ামী লীগের সমর্থন তাকে উত্তরে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে। বিশেষ করে দৌড়ে দৌড়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া, রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া, সাইকেল চালিয়ে ভোট চাওয়া, বাংলাদেশের জার্সি পরে প্রচারণা, বস্তিবাসীদের সঙ্গে খাওয়া তার নির্বাচনী প্রচারণায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নতুনত্ব এনেছেন তিনি।
ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল রাজনীতিতে তেমন পরিচিত নন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে হিসেবে দলীয় সমর্থন পান। তাবিথ আউয়াল দলীয় সমর্থন পাওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন। বাস প্রতীকে ভোট চাইতে ছুটে যান ভোটারদের কাছে। সর্বশেষ মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে ভোট চান তাবিথ। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া তাবিথের প্রচারণায় নামেন। পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় তাবিথের পক্ষে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে দলীয়ভাবে কেউ প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ কিংবা নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। এটা কেবল কাগজে-কলমে। মোদ্দা কথা হচ্ছে সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রার্থীরা।’
দলীয় সমর্থন ও প্রচারণা সম্পর্কে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ‘বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা তাদের নেত্রীর প্রচারণায় নেমে গাড়িবহরে হামলার শিকার হওয়াতে ভোটারদের সহানুভূতি পাবেন। তা ছাড়া মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর প্রচারণায় নারী ভোটারদের ইতিবাচক সাড়া থাকবে।’
মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাও কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটাদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে পেরেছেন। আনিসুল হক মিডিয়াবান্ধব ও তার প্রচারণায় কৌশল ছিল চমকপদ। সাঈদ খোকনও প্রচারণায় দক্ষতা দেখিয়েছেন। ভোটারদের কাছে গিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়াল দলীয় বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি তরুণ প্রার্থী। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইতিবাচক সাড়া পাবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা দেখে তো মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে। কিন্তু দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস জামিন না পাওয়ায় ও উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় খালেদা জিয়ার ওপর হামলার ঘটনা ভোটারদের মনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সহানুভূতি এনে দিয়েছে। যার প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend