ডিসিসি নির্বাচন ; ইসিতে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে খোকনের অভিযোগ

EC_news_1-1ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলছে। একে অপরকে টেক্কা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকতে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রভাবশালী নেতা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে অপর সম্ভাব্য প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
খোকন ছাড়াও তার একাধিক সমর্থক (যারা সাধারণ ভোটার হিসেবে) হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে ইসিতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে বলে জানা গেছে।
ইসি সূত্র জানায়, ‘শনি ও রবিবার সাঈদ খোকন নিজে এবং তার বেশ কিছু সমর্থক হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। ইসি সেই সব অভিযোগ আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখছে।’
বিধি অনুযায়ী, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কোনো প্রার্থীর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এ ছাড়া উভয় দণ্ডে দণ্ডিতও হতে পারেন। প্রার্থীদের প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারে ইসি।
সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১০ এর অনুচ্ছেদ ৪-এ নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘কোনো প্র্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত তারিখের ২১ দিন পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবে না।’
বিধি অনুসারে, ভোটগ্রহণের দিন থেকে পূর্ববর্তী ২১ দিন প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন। তবে সেখানে প্রার্থীর ছবি ও দলীয় প্রতীক এবং দলের নাম ব্যবহার করতে পারবে না। ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, শুরু থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাঈদ খোকনকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিলেও ঋণখেলাপির অভিযোগে খোকনের অবস্থান একটু নড়বড়ে হয়ে য়ায়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
দলীয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড সাঈদ খোকনের পক্ষে রয়েছে। তবে ঋণখেলাপির অভিযোগে ইসি যদি সাঈদ খোকনের প্রার্থিতা বাতিল করে সে ক্ষেত্রে হাজী সেলিমকে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়া হতে পারে। হাজী সেলিম ছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন দলীয় সমর্থন নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরুর পরপরই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের কাছে প্রিমিয়ার ব্যাংক ১১৮ কোটি টাকা পাবে বলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার ফজলে রশিদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীনের কাছে অভিযোগ করেন।
তিনি সিইসিকে জানান, মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের কাছে প্রিমিয়ার ব্যাংক বর্তমানে ১১৮ কোটি টাকা পায়। সাঈদ খোকন আইন ভঙ্গ করে ব্যাংকের বকেয়া ঋণ পরিশোধ না করেই সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদের নির্বাচন করতে যাচ্ছে, যা আইন পরিপন্থী। পাওনা টাকা আদায়ে আপনার সহযোগিতা কামনা করছি।
হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে সাঈদ খোকনের দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য প্রার্থী হাজী মো. সেলিম গত শুক্রবার জুমআ নামাজের পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আগাম প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি মিছিল-সমাবেশ গণসংযোগ করছেন। একই সঙ্গে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে বেশ কিছু যুবক তার সঙ্গে এলাকায় ঘুরছে। এতে সাধারণ নাগরিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হচ্ছে। এ কর্মকাণ্ড ইসির আচরণবিধি লঙ্ঘন।
তিনি আরও বলেন, ‘হাজী সেলিম আগাম প্রচারের মাধ্যমে নির্বাচনী আইন অমান্য করে নির্বাচনে প্রভাব ফেলছেন। একই সঙ্গে অন্য প্রার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রভাব ফেলছেন।’
সাঈদ খোকন অভিযোগে আরও বলেন, ‘হাজী মোহাম্মদ সেলিম ঢাকা-৭ আসনের একজন সংসদ সদস্য। তিনি সেই প্রভাবে নির্বাচনী আইন ও বিধির তোয়াক্কা করছেন না। তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।’
এ বিষয়ে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘উনি (হাজী সেলিম) অস্ত্র প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছেন। যা ইসির বিধি লঙ্ঘন।’
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘উনি বর্তমানে ঢাকা-৭ আসনে রানিং (চলতি) সংসদ সদস্য। কিন্তু তিনি পদত্যাগ না করেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, এটা বেআইনি।’
অভিযোগের বিষয়ে হাজী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘ইসি যেহেতু এখনো আমাকে চিঠি দিয়ে জানায়নি। তাই এ বিষয়ে কথা বলব না। তবে ইসি যদি চিঠি দিয়ে কিছু জানায় বা জানতে চায় সে ক্ষেত্রে কথা বলব।’
এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে ইসি মৌখিকভাবে হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে সতর্ক করেছে বলে জানা গেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ইসির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে হাজী সেলিমকে সতর্ক করা হয়েছে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সরওয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা যেসব অভিযোগ পাচ্ছি, সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি। একই সঙ্গে তথ্য সংরক্ষণ করছি। পরবর্তীতে ইসি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend