নড়াইলে জিরা চাষে চমক

Narailনড়াইলে ছয় শতক জমিতে জিরা চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন কৃষক জিয়াউর রহমান। তিনি নড়াইল সদর পৌরসভার ডুমুরতলা গ্রামের মরহুম গনি মোল্লার ছোট ছেলে।
জিয়া জানান, তিনি এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে মিশর থেকে ১০০ গ্রাম জিরার বীজ এনে বুনেছিলেন। নিবিড় পরিচর্যার পর এখন ফুল থেকে ফল এসেছে এবং তা পরিপুষ্ট হতে শুরু করেছে। বাতাসে দুলছে তার জিরাক্ষেত। সেই সঙ্গে আনন্দে দুলছে কৃষক জিয়ার মন। জিরার ফুল দেখে মৌমাছিরাও মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মৌমাছি মধু সংগ্রহের পাশাপাশি পরাগায়ণে সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কৌতূহলী মানুষ জিরার ক্ষেত দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।
জিরা চাষের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জিয়া জানান, তিনি কিছুই জানেন না। অন্য ফসল যেভাবে আবাদ করেন, সবকিছু সেভাবেই করছেন। ১০ অগ্রহায়ণ জমি প্রস্তুত করে বীজ বুনেছেন। অন্য ফসলের মতোই পরিচর্যা করছেন। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি ফসল সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা করছেন। সেই হিসেবে চার মাস ধরা যায়।
খরচ সম্পর্কে জিয়া বলেন, ‘এ পর্যন্ত তার প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যেই এক ব্যবসায়ী ৮০ হাজার টাকা দাম বলেছেন।’
দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মশলাজাতীয় ফসল চাষাবাদ হলেও জিরার চাষ হয় এমন তথ্য জেলা কৃষি অফিসসহ কেউ-ই দিতে পারেননি। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারতেও বহু আগে থেকে জিরার চাষ হয়।Narailw

ধারণা করা হচ্ছে, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম জিরাচাষী।
বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে ভারত ও ইরানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জিরা আমদানি করা হয়।
জিয়া বলেন, ‘আশা করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জিরার চাষ সম্প্রসারণ হবে। তখন বিদেশ থেকে আর আনা লাগবে না।’
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে ছয় শতক জমিতে জিরার চাষ করছি। ভবিষ্যতে বেশি জমিতে চাষ করতে চাই।’
তবে জিরাবীজ সংরক্ষণের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক বলেন, ‘জিরা এ্যাম্বেলিফেরি গোত্রের মশলাজাতীয় উদ্ভিদ। এটি একটি জনপ্রিয় মসলা। খাবার সুস্বাদু করতে জিরার তুলনা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে বীজ সংরক্ষণসহ জিরা চাষ ও তার সম্প্রসাণ বিষয়ে জানাব।’
কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, নাতিশীতোষ্ণ এবং শুকনো আবহাওয়া জিরা চাষের জন্য আদর্শ। সুনিষ্কাশিত উর্বর বেলে-দোঁআশ মাটি জিরা চাষের জন্য উত্তম। জিরার প্রধানত চার ধরনের জাত রয়েছে। তার মধ্যে লম্বা, খাটো, গোলাপি ও সাদা ফুল অন্যতম। গোলাপি ফুল জিরার ফলন অনেক বেশি হয়।
ছিটিয়ে বুনতে চাইলে হেক্টরপ্রতি ১২ থেকে ১৫ কেজি বীজ এবং সারিতে মাদা করে লাগালে হেক্টরপ্রতি ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।

ফল ধরার সময়ে শুকনো ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং ফল পুষ্ট হওয়ার সময়ে নাতিশীতোষ্ণ ও শুকনো আবহাওয়া থাকলে সেটা জিরা চাষের জন্য আদর্শ সময়। ৬-৭টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। হেক্টরপ্রতি ১০ টন জৈবসার এবং শেষ চাষে এক কেজি ইউরিয়া ও ২০ কেজি ফসফেট দিতে হয়। বীজ বোনার ৩০ দিন পর একবার এবং ৬০ দিন পর আরও একবার এক কেজি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়। বীজ বোনার ২৫-৩০ দিন পর জমির আগাছা তুলে মাটি আলগা করে দিতে হয়। তা ছাড়া প্রয়োজনমতো দুই-তিনবার সেচ দিতে হয়।
জিরায় সাধারণত শুয়াপোকা, জাবপোকা, সাদা গুঁড়ো রোগ, ধসা রোগ, ঝিমিয়ে পড়া রোগ ইত্যাদি রোগবালাই দেখা দেয়।
জাত অনুসারে ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। ভালোভাবে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৮০০ থেকে ১০০০ কেজি ফলন হয়।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend