শহরজুড়ে আতঙ্ক, পুলিশ বলছে দোলের বাজি, যশোরে ফের বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বোমা হামলা

jessore-pic-4-shaiful-islamযশোরে আবারও বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।বিএনপি নেতাদের পরিবারের দাবি, মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা তাদের বাড়িতে বোমা হামলা করে।
তবে পুলিশের দাবি, দোলপূজার বাজি ফুটেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ওইদিন রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, নগর সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুসহ আর কয়েকজনের বাড়িতে ৩০টিরও বেশি বোমা মারা হয়।
শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তরিকুল ইসলামের পত্রিকা লোকসমাজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবির নান্টু পত্রিকাটির সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত একটার দিকে দুর্বৃত্তরা প্রথমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের যশোর শহরের ঘোপ এলাকার বাসায় পাঁচটি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে। বোমার স্প্লিন্টারে বাড়ির দোতলার জানালার কাচ ভেঙে যায়।
খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে যশোর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিন্টু মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্ফোরিত বোমার আলামত সংগ্রহ করেছেন।
তবে এ সময় এসআই মিন্টু মিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
ঘোপ এলাকার বাসিন্দা নিলু মজুমদার স্থানীয় নৈশপ্রহরীর বরাত দিয়ে জানান, দশটির অধিক মোটরসাইকেলে প্রতিটিতে তিনজন করে আরোহী ঘোপের রাজুর মোড়ের বিভিন্ন স্থানে অন্ধকার স্থানে অবস্থান নেয়। এর পর তাদের কয়েকজন পাশের সিটি হসপিটাল থেকে পানি পান করে। তাদের মধ্যে কয়েকজন হেঁটে পাশের বাইলেন দিয়ে তরিকুল ইসলামের বাড়ির দিকে যায়। এর পর সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ওই ব্যক্তিদের হাতে সাদা রঙের কৌটা ছিল।
তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, তাদের বাড়িতে পাঁচটি বোমা মারা হয়েছে। এতে বাড়ির দুইতলা ও নিচতলা জুড়ে বিস্ফোরিত বোমার অংশ ও স্প্লিন্টার ছড়িয়ে পড়েছে। জানালার কাচ ভেঙে গেছে।
তরিকুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থানরত তার গাড়িচালক মনিরুল জানান, বোমা হামলায় অংশ নেয় পাঁচ যুবক। তাদের কাঁধে আগ্নেয়াস্ত্র ও মুখ বাঁধা ছিল।
এর কিছু সময় পর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর উপশহর এলাকার বাড়িতে পাঁচটি, সহ-সভাপতি গোলাম রেজা দুলু, যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম নয়নের ছেলে বিপ্লব চৌধুরীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তার ভাই সঞ্জয় চৌধুরী, নগর সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, পৌরসভার কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন আহমেদের বাড়িতে একের পর এক শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু টেলিফোনে বলেন, ‘২৮ জানুয়ারি রাতেও একই কায়দায় আমার বাড়িতে এবং তরিকুল ইসলামসহ শীর্ষ বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বোমা মারা হয়। সেদিন আমার বাড়ির কাচ ভেঙে যায়। বৃহস্পতিবার নতুন করে কাচ লাগানো হয়। রাতেই বোমা মেরে সেগুলো ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।’
ঘটনার জন্য কারা দায়ী জানতে চাইলে সাবু নিশ্চিত করতে পারেননি।
সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর প্রতিবেশী সংবাদকর্মী মিরাজুল কবির জানান, বোমার শব্দে তিনি বাড়ির ছাদে উঠে দেখতে পান, দশের অধিক মোটরসাইকেলে তিনজন করে আরোহী এসে এ্যাডভোকেট সাবুর বাড়িতে বেশ কয়েকটি বোমা মেরে নির্বিঘ্নে চলে যায়। হামলাকারীরা সবাই ছিল সশস্ত্র।
মিরাজুল কবির আরও জানান, একই ব্যক্তিরা জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ও যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খানের বাড়িতেও দুইটি বোমা মারে।
এর আগে রাত একটার দিকে জেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি চৌধুরী শহিদুল ইসলাম নয়নের বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বিপ্লবের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা।
চৌরাস্তা এলাকার ওয়ান ব্যাংকের সামনের নৈশপ্রহরী জুলকদ হোসেন জানান, একই এলাকার কোতয়ালী থানার সামনে থেকে নয়টি মোটরসাইকেলে তিনজন করে বিপ্লবের বাড়ি এলাকার দিকে যাওয়ার পর দশটির বেশী বোমার শব্দ শোনা যায়। মোটরসাইকেল আরোহীদের সবার কাছে অস্ত্র ছিল।
রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বিপ্লব বলেন, ‘বোমা হামলাকারীদের দুইজনকে ধরে ফেলে আমার লেবাররা। কিন্তু অস্ত্রের মুখে তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।’
এ ছাড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম রেজা দুলুর মহিলা কলেজ এলাকার বাড়িতে, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের ধর্মতলা এলাকার বাড়িতে, নগর সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকীর স্মিথ রোডের বাড়ি এবং পৌরসভার কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন এলাকার খালধার রোড এলাকার বাড়িতেও বোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা।
নগর বিএনপির সেক্রেটারি মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু বলেন, ‘আমার বাড়িতে দুটি বোমা মারে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে একই নেতাদের বাড়িতে সিরিজ বোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু সে ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে লোকসমাজ। পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবির নান্টু সংবাদ সম্মেলনে তার কাগজের সম্পাদক অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘বোমা হামলার ব্যাপারে রাতেই কোতয়ালী থানার ওসিকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে সকালে ফের যোগাযোগ করা হলে থানার এসআই মিন্টু মিয়া তরিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করেন।’
ঘটনার ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান নান্টু।
সংবাদ সম্মেলনে লোকসমাজের সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ ছিল নির্বিকার।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে বোমাবাজি চলাকালে যোগাযোগ করা হলে কোতয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার মিজানুর রহমান মৃধা বলেন, ‘শব্দ শুনছি। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। ফোর্স পাঠাচ্ছি।’
শুক্রবার দুপুরে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাস আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুলনায় রয়েছি। ভালো বলতে পারব না।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে বাজি পোড়ানো হয়েছে।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend