ফাল্গুনের প্রথম দিন শুক্রবার : বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

Birds-ho-ফাল্গুনের প্রথম দিন শুক্রবার। ঋতুরাজ বসন্ত ছুঁয়েছে বাংলার প্রকৃতি। দেশের সুখ ম্লান বাস্তবতায়ও তারুণ্য উচ্ছ্বাসে বসন্ত বরণ করে নেবে। ফুল ফোটায় আর না ফোটায় কি যায় আসে, সত্যিই তো— ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’।
ফাল্গুন এল— কোকিলের মিষ্টি করে ডাকার প্রতীক্ষা ফুরাল, বুনো ফুলের জীবন মেলে সৌরভ বিলানোর বাসনার অপেক্ষাও শেষ হল।
আজ আলের ধারে, বুনো ঝোপে লাল, সাদা, নীল, হলুদ কত বিচিত্র ফুল হাসবে। ফুলের বাড়ি যেতে ব্যস্ত মৌমাছির আর তর সইবে না। ঝিঁঝিঁ পোকারা বনে বনে অপূর্ব দ্যোতনায় সুর ছাড়াবে। শীতভর ক্ষয়ে ক্ষয়ে রুক্ষ প্রাণহীনতার কাছে সঁপে দেওয়া গাছগুলোর পত্রপল্লবের প্রাচুর্যে মেতে ওঠবে, ধূসরতায় লাগবে সবুজের ছোঁয়া।
প্রকৃতির ঐশ্বর্যে শামিল হতে দখিনা বাতাসও যেন এ ক্ষণটির প্রহর গুনছিল। আবহমান বাংলার বসন্তের প্রকৃতি ছুঁয়ে, যে কেউ গেয়ে উঠবে— ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, /এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,..’

ফাল্গুন শুধু বসন্ত উদ্বেলতায়ই ছুঁয়ে যায় না, করুণ স্মৃতিতে মনে বিষাদের সুরও তোলে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলার জন্য জীবন ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত আট ফাল্গুন (একুশে ফেব্রুয়ারি)। ৬৩ বছর ধরে বহু কবি-সাহিত্যিক, গীতিকার তাদের সৃষ্টিতে ফাল্গুলের পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার লালে ভাষা শহীদদের ত্যাগের স্মৃতি খুঁজেছেন।
নাগরিক জীবনে ঋতুরাজ বৈচিত্র্য নিয়ে ধরা না দিলে কোথাও পথের ধারে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম শোভা নানা যন্ত্রণাক্লিষ্ট ব্যস্ত নাগরিকদের হঠাৎই মনে করিয়ে দেবে বসন্তের কথা। নগরীর বৃক্ষ নিবিড় কোনো পার্কে কোকিলের ডাক ক্ষণিকের জন্য মুগ্ধ করবে কখনো। অবশ্য বসন্ত বরণ উৎসবের মধ্যমণি আজ এ নগরই।
আমাদের সৃষ্টিশীলতায় বসন্তের প্রভাব ব্যাপক। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের এ ঋতুটি আমাদের ভাবের জগৎকে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
ফাল্গুনের প্রথম দিন রাজধানীতে তরুণ-তরুণীরা একুশের বইমেলা, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ মাতিয়ে রাখবে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্কসহ বিভিন্ন স্থানেও তারুণ্যের উচ্ছ্বাস চোখে পড়বে। বাসন্তী পোশাকে সাজবে তারা। তরুণীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় গাঁদা, গোলাপ, পলাশসহ নানা ফুল গুঁজে আর তরুণরা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় সাজাবে নিজেদের। রাজধানীর পথে পথেই দেখা মিলবে তাদের। ফেসবুক, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুক্রবার দিনভরই চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়।Flowers-in-

বার্ন ইউনিট থেকে টিএসসি, শাহবাগ, বাংলা একাডেমি মেলা প্রাঙ্গণের দূরত্ব আর ফিতা দিয়ে মাপা হিসেবের সঙ্গে মিলবে না। বার্ন ইউনিট থেকে অনেক দূরে বর্ণিল বসন্ত বরণ উৎসব বসবে হয়ত। অসচেতনে কারো খোঁপা থেকে গোলাপের পাপড়ি খসে পড়তে পড়তে কোথাও জীবন নাশকারী পেট্রোলবোমা জ্বলে উঠবে নির্মমভাবে। উৎসবে প্রিয় মানুষের স্পর্শের অনুভব মুছতে না মুছতে হয়ত টেলিভিশনের স্ক্রলে গাড়িতে বোমা নিক্ষেপের খবর ভাসবে। তাই বসন্ত এসেছে, আবার বসন্ত তো আসেনি।
তবু জীবনের জয়গান হবে— প্রকৃতির সাথে সুর মিলিয়ে বাঙালী মেতে উঠবে মিলনের মন্ত্রে-বসন্ত উৎসবে; এমনটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা-সুর।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend