সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত খালেদাকে আইনের মুখোমুখি দেখতে চায় আ:লীগ

al-bnp-dialouge

হরতাল-অবরোধের নামে আগুণে মানুষ পুড়িয়ে মারার মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আইনের মুখোমুখী দেখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে আইনী বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও দলের আইন সম্পাদক আবদুল মতিন খসরুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কার্যনিবার্হী কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের সঙ্গে সংলাপে না যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আ:লীগ।

শুক্রবার রাতে আ:লীগের কার্যনিবার্হী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরামে এসব সিদ্ধান্ত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে শুরু হয়ে রাত সোয়া দশটা পর্যন্ত বৈঠক চলে।

বৈঠকে আগামী মার্চের মধ্যে সব জেলা সম্মেলন শেষ করা এবং ঢাকা মহানগর দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর মহানগর কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে আব্দুল মতিন খসরু বলেন, হরতাল অবরোধে সব হত্যাকান্ডের প্রতিটির জন্য খালেদা জিয়া হুকুমের আসামী হবেন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এসব হত্যাকান্ডের জন্য তাকে হুকুমের আসামী হিসেবে গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখী করার সুযোগ রয়েছে।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তো একাধিক মামলায় ইতোমধ্যে হুকুমের আসামী হয়ে রয়েছেন। আপনি (মতিন খসরু) দলের আইন সম্পাদক, সংসদীয় কমিটির সদস্য, তাই আপনি বিষয়টি খতিয়ে দেখেন আরো কী করা যেতে পারে। কারণ, আইনী প্রক্রিয়ার দূর্বলতার কারণে অনেক সময় চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই এ বিষয়টি ভালোভাবে দেখা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসের আরেক রূপ হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এদের মোকাবেলায় দলের নেতাকর্মীদের আরও বেশি সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বৈঠকে দলের বেশিরভাগ নেতা বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী কমিটি দলীয়ভাবে সংলাপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক, দলের জেলা-মহানগর সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজশাহীসহ অধিকাংশ বিভাগীয় সম্মেলন অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে জানানো হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিভাগ যেহেতু অনেক বড় তাই অন্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও এ বিভাগে কাজ করবেন, যাতে সম্মেলন দ্রুত শেষ হয়।

বৈঠকে আজমত উল্লাকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে গাজীপুর মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া শিগগিরই দুইভাগে ভাগ করে ঢাকা মহানগরের কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।

বৈঠকে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বহিস্কৃত নেতাদের পুনরায় দলে ফেরার আবেদন সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাত বিভাগের সম্মেলনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম লিডাররা আবেদনগুলো বিবেচনা করে সুপারিশ করবেন, কাকে কাকে দলে ফেরত আনা যায়। সুপারিশ পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া বৈঠকে গাজীপুর মহানগর কমিটি অনুমোদনের পাশাপাশি ২১ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ ও ২৬ মার্চের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আসন্ন সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন প্রসঙ্গটিও আসে। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার আশংকার বিষয়টিও আইনজীবী নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীকে। তবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী। শুধু বলেন, দেশ ও দলের স্বার্থে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে হবে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পরিস্থিতি অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে। সরকার কঠোরভাবে তা মোকাবেলা করবে। তবে এজন্য বোমাবাজদের বিরুদ্ধে দেশের প্রত্যেকটা মানুষকেও বলিষ্টভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটা হলে কেউ নাশকতা করার সাহস পাবে না। আসলে পুরো বাংলাদেশকে ধ্বংসযজ্ঞের নিলামে তুলতে লেগেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। তবে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend