বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা – সৈয়দ আবুল মকসুদ

974047d471826ec2e2214f98e902c779-2কুড়ি শতকে বহু জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দীর্ঘ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভেতর দিয়ে। ওই সব জাতি পরাধীনতা ও শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনা থেকে মুক্তি চেয়েছে। সব দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের চরিত্র ও স্বাধীনতা অর্জনের প্রক্রিয়া এক রকম নয়। কোনো জাতিরাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দার্শনিক ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, সেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্থবহ হয় না এবং জনগণ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারে না। স্বাধীনতার সুস্বাদু ফলটি ভোগ করে গুটিকয় মানুষ।
স্বাধীনতার জন্য সব জাতিকেই মূল্য দিতে হয়—রক্ত দিতে হয়। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে আত্মাহুতি দিতে হয়েছে। সেটা স্বাধীনতাসংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে। স্বাধীনতাসংগ্রামের রয়েছে অনেকগুলো পর্যায়। আমাদের পত্রপত্রিকা পড়ে এবং টিভিতে নেতাদের বক্তৃতা শুনে মনে হবে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস শুধু নয় মাসের পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা এবং দলীয় নেতা ও মুক্তিসেনাদের বীরত্বের ইতিহাস। বস্তুত তা মোটেই নয়। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাস অনেক বিস্তৃত এবং সময়ের অনেক গভীরে তার শিকড়। তা শুধু ঘটনানির্ভর নয়—চেতনানির্ভর। তার সঙ্গে এই ভূখণ্ডের মানুষের সংস্কৃতি অর্থাৎ ভাষা, সামাজিক আচার-আচরণ, রীতিনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম—জীবনের যাবতীয় বিষয় যুক্ত।
স্বাধীনতার ইতিহাস একরৈখিক ব্যাপার নয়—একটি বহুমাত্রিক বিষয়। সব সময়ই দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছে ঘটনার বয়ান এক রকম, দলীয় ইতিহাসবিদদের কাছে আরেক রকম। নির্দলীয় একাডেমিক ইতিহাসবেত্তাদের কাছে বয়ান একেবারেই অন্য রকম। যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের বয়ান সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ সত্য দুই রকম বা নানা রকম হয় না। বাংলাদেশের মানুষের এমনই নিয়তি যে মনে হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারাই যেন ইতিহাসের অধ্যাপক। এবং তাঁদের ধারণা যে দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাঁদের ক্লাসের সুবোধ ছাত্র। তাঁরা যা বলবেন, সবাই তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে বাধ্য।
আমাদের বয়সী মানুষ যারা স্বাধীনতাসংগ্রামের পরিণত পর্যায়টি স্বচক্ষে দেখেছি, তাদের কাছে বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বয়ানগুলো যথার্থ মনে না হওয়া স্বাভাবিক। আমরা যারা যে-গোত্রের মানুষ, সেই গোত্রের বক্তব্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে বা ডায়ালেকটিক্যালি বিচারের পরিবেশটা সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। তাই কেউই আর নিজের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি মানতে তো নয়ই, শুনতেও রাজি নয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অকল্পনীয় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন অনেক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ কোনো ব্যক্তিগত বীরত্বের বিষয় নয়। কে একদিন এক ঘুষিতে চিলমারী বন্দরের ঘাটে এক খানসেনার দাঁত ফেলে দিয়েছিলেন, সেটা জাতীয় ইতিহাসের বিশেষ বড় ঘটনা নয়। গৌরবের বিষয় হলো, গোটা জাতি আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পেরেছিল।
আমাকে একবার পশ্চিমবঙ্গের বাম পণ্ডিত ও লেখক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, তখন তিনি প্রায় শতবর্ষী, বলেছিলেন, বাংলাদেশের অনেকে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা সবাই হয় পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের কথা বলেছেন, নয়তো তাঁর বা তাঁদের দলের ভূমিকার কথা বলেছেন এবং ইসলামের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার কথাও বলেন। মুখার্জি বলেন, ‘সম্ভবত সেটা করেন আমাকে খুশি করতে, কারণ তাঁরা মনে করেন আমি একজন হিন্দু, ইসলামের নিন্দা শুনলে খুশি হব। ভবিষ্যতের স্বনির্ভর বাংলাদেশ কীভাবে হবে, তা নিয়ে তাঁদের কিছু বলতে শুনি না।’
বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফসল বাংলাদেশ। সেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল পাকিস্তানবাদী সাম্প্রদায়িক মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রতিবাদ। পাকিস্তানের শাসকদের অধিকাংশই ছিল সামন্তপ্রভু ও জমিদার-জোতদার শ্রেণির মানুষ। তাদেরই প্রজাদের অনেকে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা পান ’৭২-এ। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা নেতারা পাকিস্তানকে শক্ত গণতান্ত্রিক ভিত্তির ওপর স্থাপন করতে ব্যর্থ হন। একইভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ’৭২-এ যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা পান, তাঁরাও নিজেদের শ্রেণির স্বার্থে বাংলাদেশকে টেকসই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানানোর উদ্যোগ নেননি। গণতন্ত্রহীন পাকিস্তান ২৪ বছরের মধ্যেই ভেঙে যায়, চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন প্রায়-অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
পাকিস্তানকে একটি নষ্ট, অদূরদর্শী ও জঘন্য স্বার্থপর অভিজাত শ্রেণি শাসন করে। তাদের সহযোগী ছিলেন সামরিক-বেসামরিক আমলারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে একটি মুৎসুদ্দি শ্রেণি। সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিলেন মৌলিক গণতন্ত্রী চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। উচ্চশিক্ষিত শাসকশ্রেণির এক অদ্ভুত ‘মূর্খতা’ ও অবিমৃশ্যকারিতা কায়েমি স্বার্থে পাকিস্তানকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে দেয়নি। পাকিস্তানি আমলের মৌলিক গণতন্ত্রী, গ্রাম্য মাতবর, সুদখোর মহাজন, টাউট, ফড়িয়া প্রভৃতি স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠে। এই শ্রেণি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কী জিনিস, তা জানে না। কারণ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মধ্যে তারা বেড়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বাঙালি জাতীয়তাবাদের সব দেশের ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিত্তবান শ্রেণিটি জাতীয়তাবাদী স্লোগানে উৎসাহিত হয়। জাতীয়তাবাদের ধ্বনি প্রথমে তোলেন কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একসময় তার সমর্থনে এগিয়ে আসে জনগণ। জনগণের সুপ্ত-চেতনা জাগিয়ে তোলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। কঠিন সত্য হলো, জনগণের আপসহীন মনোভাব সব সময় দেশের কল্যাণ বয়ে আনে না। ক্যারিশম্যাটিক নেতাদের দিয়ে আন্দোলন সফল করা গেলেও সব ক্ষেত্রে জাতীয় উন্নতি অর্জিত হয় না।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলন অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তার নিশ্চয়তা নেই। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সফল হলেই, তার মাধ্যমে স্বাধিকার অর্জিত হলেই, দেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে, তা নয়। কী কারণে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ, কেন তা স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়, তার নির্মোহ বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন জনগণের উপকারে না এসে নেতাদের ক্ষমতা দখলের মধ্যে গিয়ে আটকে যায়। সবচেয়ে বড় অর্জনের দুর্বলতাগুলোকে যদি গোপন রাখা হয়, সেই অর্জনের পরিণতি শুভ হয় না।
রাষ্ট্রক্ষমতায় বাঙালি মুসলমানের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা অতি অল্প দিনের। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে মুসলমানদের কেউ কেউ জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান পর্যন্ত হয়েছিলেন। মেম্বারও ছিলেন বহু। ইউনিয়ন বোর্ডের (বর্তমানের ইউনিয়ন পরিষদ) চেয়ারম্যান ছিলেন অনেকে। বিভিন্ন সময় অবিভক্ত বাংলা ও পূর্ব বাংলার (বাংলাদেশ) যাঁরা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁদের হাতেখড়ি হয়েছিল লোকাল বোর্ড বা স্থানীয় সরকারের নেতা হিসেবে। ফজলুল হক কলকাতা করপোরেশনের মেয়র ছিলেন, স্যার নাজিমউদ্দিন ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলকাতা করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র ছিলেন, পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন ময়মনসিংহ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বাধীনতার পরে যাঁরা বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন, তাঁদের অধিকাংশের ইউনিয়ন পরিষদ চালানোরও অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই হঠাৎ ক্ষমতাপ্রাপ্তির পর তাঁদের প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য দায়ী তাঁরা নন, দায়ী তাঁদের অভিজ্ঞতার অভাব।
জাতিরাষ্ট্রের পরিচালকদের প্রথম ও প্রধানতম কাজই হলো জাতীয় ঐক্য সুসংহত করা। কাজটি অতি কঠিন। সে জন্য কখনো কঠোর, কখনো উদার হতে হয়। পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ছিল অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, যদিও তাদের অনেকেই ছিল রক্ষণশীল। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করেছে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগসহ কিছু সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধে তারাই গণহত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে যেসব ডান-মধ্যপন্থী ও বাম সংগঠন, তারাও নানা মতাদর্শে বিভক্ত ছিল। একাত্তরে যাঁদের বয়স ৪৫ থেকে ৫০ ছিল, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাঁদের অনেকের মনোভাব ছিল সন্দেহযুক্ত। এমনকি যাঁরা আট থেকে নয় মাস ভারতের আতিথেয়তা নিয়ে দেশে ফেরেন, তাঁদেরও মনমানসিকতা এক রকম ছিল না। সংগত কারণে তাঁদের অধিকাংশই অপ্রসন্ন ছিল নেতাদের ওপর। মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী যুবসমাজের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। পাকিস্তানি ঘাতক-দালালদের বাদে আর সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একটি শামিয়ানার নিচে এনে তাদের মতপার্থক্য দূর করা খুবই জরুরি ছিল। সে কাজটি হয়নি, জনগণের অনৈক্য ও অসন্তোষের সুযোগ গ্রহণ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। তাদের ক্যাডারের দায়িত্ব পালন করেন সেনাবাহিনীর একশ্রেণির উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা।
প্রশাসনিক দক্ষতা ও বলিষ্ঠ অঙ্গীকার না থাকায় সহজ কাজগুলোও করতে পারেননি নেতারা। এক নম্বর কাজ ছিল গণহত্যায় অংশগ্রহণকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত, তাদের বিচার করে শাস্তি দেওয়া। প্রথম দুই-আড়াই বছরেই তা করা সম্ভব ছিল। বঙ্গবন্ধুর সরকার কাজটি শুরু করেছিল। বছর দুয়েকের মধ্যে বিচার–প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে আসে। চিকন আলীর প্রথমে ফাঁসির হুকুম ও পরে তা কমিয়ে কারাদণ্ড যখন হলো, তখনই বোঝা গেল, বিচার প্রশ্নে রাষ্ট্র আন্তরিক নয়।
ইউনিয়নওয়ারি শহীদদের তালিকা করার দায়িত্ব ছিল প্রথম সরকারের। সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে হয়েছিল। সেটাই আসল তালিকা। তবে তখন অনেকে বাদ পড়েছিলেন। তাঁদের নামটা যাচাই করে যুক্ত করলেই হয়ে যেত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ একটি শ্রেণির কাছে হয়ে গেল বিক্রয়যোগ্য পণ্য। যে জাতি জাল-জালিয়াতিতে অভ্যস্ত, সে জাতি শুধু মুক্তিযোদ্ধার সনদ নয়, যেকোনো ব্যাপারে জালিয়াতি করবে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায়ই করবে, সেটাই স্বাভাবিক।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর হয়ে গেল। এই সময় সামরিক-বেসামরিক, সাংবিধানিক-অসাংবিধানিক নানা কিসিমের সরকার দেশ শাসন করেছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নও যথেষ্ট হয়েছে। গ্রামীণ দারিদ্র্য কমেছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি অসন্তোষজনক নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন যা, তার বারো আনাই বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে। রাষ্ট্রের ভূমিকা সেখানে সামান্য। তৈরি পোশাকশিল্প বেসরকারি খাত, মধ্যপ্রাচ্য থেকে যাঁরা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান, তাঁরা সব গরিব শ্রমিক। কৃষিতে ষাটের দশকে উন্নতির যে ধারা সূচিত হয়, সেটাই অব্যাহত আছে ৫০ বছর ধরে।
জাতিরাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে মান যদি সন্তোষজনক না হয়, স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ের চেয়ে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়টি যদি স্বস্তিকর না হয়, তাহলে স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় না। ৪৩ বছরে সবগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। এমন কোনো নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি, যা নিয়ে জাতি অহংকার করতে পারে। শিক্ষা যদি কোনো জাতির মেরুদণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে সেই মেরুদণ্ডটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। মাদ্রাসায় মধ্যযুগ ও মধ্যপ্রাচ্যপন্থী শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যমে আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-কানাডাপন্থী শিক্ষার মাঝখানা ভুলে ভরা সাধারণ শিক্ষা। শিক্ষা বলতে কিছু নেই, যা আছে তা হলো ও-লেভেল, এ-লেভেল, দাখিল-ফাজিল আর জিপিএ ফাইভ। নৈতিক অধঃপতনের প্রশ্ন তুলব না। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানে কতটা উন্নতি হয়েছে? জগদীশ বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, কুদরাত-এ-খুদার দেশ-বিজ্ঞানে অগ্রগতি কোথায়? আলাউদ্দিন খাঁর জন্মভূমি, উচ্চাঙ্গসংগীতে আমাদের অর্জন কী? যেসব ক্ষেত্রে কঠোর সাধনা ও অবিচল নিষ্ঠা প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্ম আগ্রহ হারিয়েছে।
অপচয়, বিলাসিতা, লোভ, দুর্নীতি খুব বড় ধরনের পাপ। সীমাহীন রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ সেই পাপে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। হতাশা সীমাহীন, তবু বলব স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend