কামালপুর স্থলবন্দরে হতে পারে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান

Jamalpur-pic-23-10-2014-1বকশীগঞ্জের কামালপুর স্থলবন্দরে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও দুই যুগেও উন্নয়ন নেই। একটি আধুনিক পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপান্তরিত করা গেলে এ স্থলবন্দর থেকে প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। সৃষ্টি হবে এ এলাকার অতিদরিদ্র ১০ হাজার বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের।
জানাগেছে,বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর এলাকাটি মুক্তিযুদ্ধের ১১নং সেক্টরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কামালপুর সীমান্ত থেকে মাত্র এক কিলোমিটার অদূরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ থানা সদর। ভারতের সীমান্ত এলাকার মধ্যে অতি সনিকটে মহেন্দ্রগঞ্জের মত গুরুত্বপূর্ণ শহর। তাই ভৌগোলিকভাবে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য,পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা এ স্থলবন্দরটি সুবিধাজনক স্থান হিসেবে বেছে নেয়। যদিও ১৯৫২ সালে থেকে কামালপুর পূর্নাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালু ছিল। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর অজ্ঞাত কারণে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৯১ সালে এলসি স্টেশন হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়। এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কয়লা-পাথর ছাড়াও কাজুবাদাম,মার্বেল স্টোন, গরম মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, সুপারি, আদা, কাঠ, বিভিন্ন প্রকার ফলমূল, ও বাশঁ তারাইসহ আমদানি হয়ে থাকে। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট জুট, তুলা, প্রানের জুস, প্লাষ্টিক দ্রব্য, সিমেন্ট, শুটকি মাছ, মেলামাইনের জিনিসপত্র ও কসমেটিক্স রফতানি অব্যাহত রয়েছে। এসব আমদানি রফতানির ফলে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া, লাঙ্গলকোর্ট, গারোহিল, মাইনকার চর, তুরা, গোহাটিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সঙ্গে বাংলাদেশের সর্ম্পক উজ্জ্বল। কামালপুর এলসি স্টেশনের মাধ্যমে প্রতিবছর পিক-সিজনে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টন কয়লা এবং দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ সিএফটির পাথর আমদানি করা হচ্ছে। এ থেকে প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব আয় হচ্ছে প্রায় ৮-১০ কোটি টাকা। শুল্ক কর্মকর্তার কার্যলয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে এপর্যন্ত কামালপুর স্থলবন্দরে কয়লা আমদানি হয়েছে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ও পাথর আমদানি করা হয়েছে ১ লাখ পঞ্চাশ হাজার মেট্রিক টন। আদা ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ১২২ টাকা।
অপরদিকে এই এলসি স্টেশনে মালামাল লোড আনলোডিং করতে প্রায় তিন সহস্্রাধিক নারী পুরুষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে এখানে মালামাল লোড আনলোডিংয়ের জন্য বিশাল এলাকা জুড়ে এলসি ইয়ার্ড গড়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বুড়িমারী, হিলি, সোনা মসজিদ ও তামাবিল স্থলবন্দরের দূরত্বের তুলনায় কামালপুরের দূরত্ব অনেক কম। তাই এ বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় ১৯৯৮ সালের ২০ মে এই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলা-ভুটান ট্রানজিট রুটের জন্য দু’দেশের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করে। উভয় দেশের প্রতিনিধিদল এই স্থলবন্দরসহ শেরপুরের নাকুগাও ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গাছিয়াপাড়া সীমান্ত পরিদর্শন করেন। অজ্ঞাত কারণে শেরপুরের নাকুগাও বন্দরটি ঠিক করেন। কিন্তু ভারত সরকার নাকুগাও দিয়ে ট্রানজিট দিতে কোন অবস্থায়ই রাজি হয়নি। ভারতের একটি সূত্র জানায় মূলতঃ ভারতের পাহাড়ি এলাকায় উলফা সংগঠনের উপস্থিতি সন্দেহে কারনে আলোচনা হয়নি। ভারতের আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সূত্র জানায় সস্প্রতি মহেন্দ্রগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ভারতের অংশ মহেন্দ্রগঞ্জে ইমিগেশন করতে মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মকুল সাংমা বরাবর জোর দাবি জানিয়ে আসছিল। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মকুল সাংমা ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বস্ত করে জানান বিষয়টি কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পর দুই দেশ সরকারের উচ্চ পযার্য়ে সমঝোতা করবেন।
অপরদিকে বকশীগঞ্জের আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ী সমিতিসহ জেলার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিন যাবত ইমিগ্রেশনসহ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের দাবি জানিয়ে আসছে। এব্যাপারে আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ী বকশীগঞ্জের সমিতির সভাপতি কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মোকাদেছ জানান এই বন্দরের ইমিগ্রেশন না থাকায় তাদের যোগাযোগ করতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে ক্রয় পূর্বে পূণ্য যাচাই করার ক্ষেত্রে সম্যসা হয়। এতে করে ব্যবসায়ীদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। আবার অনেক ব্যবসায়ী না দেখে মালামাল আমদানি রফতানি বিপাকে পড়ে।
বিশিষ্ট শিল্পপতি মুক্তিযোদ্ধা বাবুল চিশতী বলেন দীর্ঘদিন যাবত মুক্তিযুদ্ধের ১১নং সেক্টরের স্মৃতিবিজিড়িত ধানুয়া কামালপুর একটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন এ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯১ সালে এলসি স্টেশনটি চালু হওয়ার পর থেকে কামালপুরকে পূর্ণাঙ্গভাবে একটি স্থলবন্দরে রূপান্তরের জন্য প্রস্তাব রয়েছে। এ জন্য ২৩ একর জমি অধিগ্রহনের নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া জামালপুর জেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে স্থলবন্দরের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোডের একজন সদস্য এবং কাস্টমস বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কামালপুর এলসি স্টেশনটি পরিদর্শন করে গেছেন।
ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাসহ এই এলসি স্টেশনটি স্থলবন্দরে উন্নীত করা হলে আমদানি-রফতানির মাধ্যমে জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাইবান্দা ও কুড়িগ্রাম জেলাসহ ৫টি জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বহুগুণে বেড়ে যাবে। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন ও আমদানি-রফতানির মাধ্যমে সরকারের বিপুল অংকের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। এই স্থলবন্দর ঘিরে প্রায় ১০ হাজার অতিদরিদ্র বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। পুরো জেলার সাধারন মানুষের প্রানের দাবি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ১১নং সেক্টরের উত্তর রণাঙ্গনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের গুরুত্ব বিবেচনা করে কামালপুর এলসি স্টেশনটি পূর্নাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষনা করা।
শুল্ক কর্মকর্তা (এলসিও) জানান, সম্ভাবনাময় ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর থেকে কোটি কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব আয় হলেও ইমিগ্রেশন না থাকায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় পণ্য ক্রয় বিক্রি দারুণ ভাবে বিঘœ ঘটেছে। এতে করে আমদানি -রফতানি স্থবির হয়ে পড়ে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend