প্রবল বেগে আঘাত হেনেছে ‘হুদহুদ’, নিহত ২

hudhud_0বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘হুদহুদ’ ভারতের বিশাখাপত্তনম ও শ্রীকাকুলামের মাঝামাঝি জায়গায় ২০৫ কিলোমিটার থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়েছে। হুদহুদ আঘাত হানার পর দুপুর পর্যন্ত অন্তত দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার সাড়ে ১১টার পর থেকে তুমুল শক্তি নিয়ে তাণ্ডব চালায় প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। ওইসব এলাকার জনজীবন অচল হয়ে গেছে।

বিপর্যয় মোকাবিলায় অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা সরকার সেনা সাহায্যের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।

রাজ্যগুলির ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে শনিবার রাতে একটি জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবিনেট সচিব, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব এবং আবহাওয়া দফতরের অফিসারেরা।

বিশাখাপত্তনম ও শ্রীকাকুলামে আটটি উদ্ধারকারী দল ও চারটি ইঞ্জিনিয়ারের দলকে রাখা হয়েছে। গোপালপুরেও আটটি উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীকেও তৈরি রাখা হয়েছে। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে দক্ষিণ মধ্য রেলওয়ের ৩৩টি ট্রেন বাতিল করে দেয়া হয়েছে৷‌

হুদহুদ নিয়ে জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠ। পরে ওড়িশা ও অন্ধ্রের মুখ্যসচিবদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ওই দুই রাজ্যে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ৩৯টি দল পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ‘হুদ হুদ’ ভারতে উপকূলের দিকে এগোলেও তার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-৩ ফুট বেশি উঁচু বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে শনিবার দুপুরে বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের পাউবোর ৪৩/১ পোল্ডারে পশ্চিম ঘটখালী পয়েন্টে ১’শ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে তিন গ্রাম পাবিত হয়েছে। আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তিন গ্রামের ৭ শতাধীক কৃষক পরিবারের ৫শ’ হেক্টর আমন ফসলের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এছাড়া ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তলিয়ে গেছে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় অর্ধশত গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় লাখ মানুষ।

অপরদিকে সাগর উত্তাল থাকায় প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে আটকা পড়ে আছে তিন শতাধিক পর্যটক। শনিবার টেকনাফ থেকে কোন জাহাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপে যায়নি। দ্বীপে রাতযাপনকারী ৩ শতাধিক পর্যটক কক্সবাজারে ফিরতে পারেনি বলে জানা গেছে।

কুয়াকাটা

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় শনিবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। প্রায় সারাদেশে রোববার বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর আভাস দিয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে বলা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দুপুর নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তম ও উড়িষ্যার গোপালপুরের মাঝামাঝি এলাকায় আঘাত হানতে পারে হুদহুদ। এ সময় এর গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার।

রোববার সকালে আবহাওয়া দফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হুদহুদ’ সামান্য উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি রোববার সকাল ০৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১০ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ‘হুদহুদ’ শনিবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৩০ কিলেমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে বেড়ে ১৭০ কিলোমিটারে উঠছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend