পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে বিদ্যালয় সভাপতির জোর করে বিয়ে!

image_94198_0‘আমি রহিমের সংসার করতে চাই না, স্কুলে পড়তে চাই। রহিমের ঘরে বউ আছে। দুইটা বাচ্চা আছে। আমি ওর সাথে ঘর করব না, আপনারা আমারে বাঁচান’—এভাবেই আকুতি জানাচ্ছিল লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের খারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রাশেদা খাতুন (১৩)। গত ২৬ জুন ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আবদুর রহিম (৩১) তাকে জোর করে বিয়ে করেন বলে অভিযোগ করেছে রাশেদা। এফিডেভিট করে রাশেদার বয়স দেখানো হয়েছে ১৮ বছর। কিন্তু মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) জন্মনিবন্ধন বই অনুযায়ী তার বয়স ১৩ বছর।

রাশেদার দাবি, ২৬ জুন আবদুর রহিম তাকে লালমনিরহাট শহরে নিয়ে যান। সেখানে তাকে বিয়ে করবেন বলে রহিম জানান। তখন রাশেদা অনেক আপত্তি ও কান্নাকাটি করে। কিন্তু রহিম ভয় দেখালে সে এফিডেভিটের কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।
রাশেদার পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাশেদাকে বিয়ে করে আবদুর রহিম নিজের বাড়িতে এনে প্রায় এক মাস আটকে রাখেন। কিন্তু এলাকার অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর প্রভাব থাকায় কেউ তাঁকে বাধা দিতে পারেননি। গত শুক্রবার রাশেদাকে তার বাবার বাড়িতে যেতে দেন রহিম।
এ ব্যাপারে আবদুর রহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদাকে দেখে পছন্দ হওয়ায় তিনি তাকে বিয়ে করতে চান। বয়সজনিত আইনি বাধা দূর করার জন্য লালমনিরহাট নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে গিয়ে এফিডেভিট করে তিনি রাশেদার বয়স বাড়ান। পরে কলমা পড়েন এবং কাজির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন।
রহিমের ভাষ্যমতে, গ্রাম অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিবাহ বা বাল্যবিবাহ করাকে তিনি দোষের কাজ বলে মনে করেন না।
রাশেদার বড় ভাই মোগলহাট ইউনিয়নের ইটাপোতা দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র মো. মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, ‘আমরা গরিব মানুষ। দুর্বল বলে গ্রামের বড়লোক আবদুর রহিম আমার ছোট বোন রাশেদাকে মিথ্যা কথা বলে বিদ্যালয় থেকে লালমনিরহাট শহরে নিয়ে এফিডেভিট করে বিয়ে করেছে। আমরা কী করব তা বুঝে উঠতে পারছি না।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচিত এ বাল্যবিবাহের বিষয়টি আমি অবহিত আছি। এ বিষয়ে মোগলহাট ইউপি চেয়ারম্যানকে আমি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯ সালের ৯ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান জানান, ঘটনাটি তিনি জানেন। বাল্যবিবাহকারী আবদুর রহিমসহ তাঁকে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।
এদিকে খারুয়া সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিতভাবে গত ২০ জুলাই অবহিত করেছেন।
এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নবেজ উদ্দিন জানান, ঘটনাটি জানার পর লালমনিরহাট সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। এত দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তদন্ত হয়নি। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় খুলেছে, এখন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend