সিলেটের দীর্ঘতম সেতু অভিভাবকহীন! বড় ফাটল, ঝুঁকিতে সেতু

090c46378a62522a7cecaf0adf4cea80-SYLHET-PHOTO--SETU---uppppসিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলাই নদের ওপর সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের আট বছরের মাথায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সেতুর মধ্যবর্তী অংশে অন্তত সাতটি স্থানে বড় আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে। উভয় দিকের পাঁচটি স্থানে রেলিংও ভেঙে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল ঝুঁকির মুখে পড়েছে।সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকৌশল বিভাগ সেতুর এ অবস্থার জন্য পাথরবাহী ট্রাক চলাচলকে দায়ী করেছে৷ তবে স্থানীয় লোকজন জানান, উদ্বোধনের পর থেকে সেতুটি যথাযথভাবে দেখভাল হয়নি।সেতু​িটর কর্তৃপক্ষ সরকারের কোন বিভাগ, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ সওজ বলছে, সেতুর কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

অপরদিকে, এলজিইডির দাবি, সেতুর কর্তৃপক্ষ তারা নয়।সওজ সূত্র জানায়, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশের ধলাই নদের উভয় তীরের মানুষের যাতায়াতের জন্য ২০০৩ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ​প্রায় ৪৩৪ দশমিক ৩৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম। টানা তিন বছর কাজ চলার পর সেতুটি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেতুর স্থায়িত্ব ধরা হয় ৭৫ বছর। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সেতুর উদ্বোধন করেন। সেতুটি প্রকল্পে ‘ধলাই সেতু’ নামে উল্লেখ থাকলেও উদ্বোধনকালে নামকরণ করা হয় ‘এম সাইফুর রহমান সেতু’ নামে। পরে সেতুর কর্তৃত্ব এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।সেতু নির্মিত হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর, উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের ৩০ সহস্রাধিক মানুষ সরাসরি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসে৷ পাশাপাশি দেশেরসর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে পাথর পরিবহন সহজতর হয়।সেতুর মধ্যবর্তী সাতটি স্থানে বড় আকারের ফাটল সৃষ্টি  হয়েছে l ছবি: প্রথম আলো
গত শুক্রবার সেতু এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, নির্মাণের দুই বছর পরই সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুটি রেলিংয়ের একাংশ ভেঙে পড়ে। বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোও হেলে পড়া অবস্থায় ছিল। সংস্কার না করায় সেগুলোর পাশাপাশি আরও তিনটি স্থানে রেলিং ভেঙে পড়েছে।ধলাই নদে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমেছে প্রায় এক সপ্তাহ হলো। ঢল নামার পরপরই সেতুর মধ্যবর্তী দুটি স্থানে বৃত্তআকারে ফাটল দেখা দেয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বৃষ্টি হওয়ার পর সেতুর আরও পাঁচটি স্থানে আড়াআ​িড় ও লম্বালম্বি ফাটল দেখা দিয়েছে। পাথরবাহী ট্রাক সেতু দিয়ে চলাচল করলে সেতুর মধ্যবর্তী অংশ থর থর করে কাঁপে।
সেতুর এ অবস্থার ছবি দেখে সওজের সেতু প্রকল্পে কর্মরত একাধিক প্রকৌশলী একে অত্যন্ত ঝুঁকির বলে উল্লেখ করেন৷ আট বছরেই সেতুর এ অবস্থার জন্যনির্মাণত্রুটিকে দায়ী করা হচ্ছে। ফাটল দ্রুত মেরামত না করলে সেতুটি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলেও তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করেন।

নির্মাণকালীন ত্রুটির কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হলো কি না—জানতে চাইলেবিষয়টি এড়িয়ে যানসওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মীর নিজামউদ্দিন আহমদ৷ তিিন সেতুর এ অবস্থার জন্য পাথরবাহী ট্রাকের চলাচলকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের মধ্যে দীর্ঘতম সেতু হলেও শুধু যাত্রীবাহী যান চলাচলের উপযোগী করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরবাহী ১০ থেকে ১২ টন ওজনের ট্রাক চলাচল করায় সেতুটির এ অবস্থা হয়েছে।
SYLHET-PHOTO-16(SETU)-upppppppppppppসওজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেতুর কর্তৃপক্ষ এলজিইডি। যোগাযোগ করলে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী গোপাল চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সেতুটি তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘যেহেতু সেতু আমাদের নয়, তাই এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলা যৌক্তিক নয়।’
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু এহতেশাম রাশেদ জানান, সেতুটি উদ্বোধনের পরপরই এলজিইডিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র সওজের প্রকৌশল দপ্তরে রয়েছে। এলজিইডিকে এ ব্যাপারে দেখে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend