ঝাড়ুদার লেখেন প্রেসক্রিপশন, নাইটগার্ড করেন অপারেশন!

samakalঅসুস্থ হলে মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল চিকিৎসক। মৃত্যু পথযাত্রী মানুষও চিকিৎসকের আশ্রয়ে নতুন করে বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখে। মানুষের এই দূর্বল স্থান নিয়ে নিদারুন বাণিজ্য অনেক দিন থেকেই এদেশে চলে আসছে। প্রতিনিয়ত দেশের আনাচে-কানাচে থেকে খবর আসে হাতুড়ে ডাক্তারদের ক্রিয়াকলাপের। এমনই নৃশংসতার অপর এক উদাহরণ পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে প্রেসক্রিপশন থেকে জটিল সব অপারেশন চলে ঝাড়ুদার আর নাইটগার্ডের হাতে।

দৈনিক সমকাল তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঝাড়ুদার নাসিরউদ্দিন, দারোয়ান আবুল মনসুর আর নাইটগার্ড মোহাম্মদ শফি রোগীদের কাছে ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত। কারণ জরুরি বিভাগের ডাক্তাররা অপারেশন থেকে শুরু করে প্রেসক্রিপশন লেখার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করান তাদের দিয়েই। ডাক্তার না থাকলে প্রেসক্রিপশন লেখেন ঝাড়ুদার নাসিরউদ্দিন, আর নাইটগার্ড শফি করেন জটিল সব অপারেশন। শুধু তাই নয়, রোগী ঠকাতে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা ও স্থানীয় ল্যাবের কর্মচারীরা মিলে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। জখমি সনদ ও সরকারি বিনামূল্যের ওষুধ বাইরে বিক্রি করে এ সিন্ডিকেট।

প্রশ্ন করা হলে জরুরি বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার সুজন ধর পত্রিকাটিকে বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণে কর্মচারীরা মাঝেমধ্যে আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন। তবে জটিল কোনো অপারেশনের কাজে তাদের ব্যবহার করা হয় না।’

সমকাল জানায়, জরুরি বিভাগে উপস্থিত নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো এমবিবিএস ডাক্তার। এখানে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন মোহাম্মদ শফি। তিনি কাগজে-কলমে একজন নাইটগার্ড। আবার রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখছেন ঝাড়ুদার নাসিরউদ্দিন। রাত নামতেই হাজির হন ল্যাবের লোকজন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের একটি বেসরকারি ল্যাব হসপিস ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মা-মণি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মী জিকু, রুবেল, কালা সৌরভ নামের কয়েকজন যুবক এসে সেখানে ঘুরঘুর করেন। জরুরি বিভাগের সামনেই ইসিজি মেশিন নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। কর্মচারীদের সহায়তায় রোগীদের নিয়ে যান নিজেদের ল্যাবে। বিনিময়ে কর্মচারীরা পান মাসোয়ারা। চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট কোনো জ্ঞান না থাকলেও কর্মচারীরাই সম্পন্ন করেন চিকিৎসার যাবতীয় কাজ। টাকার বিনিময়ে তারা করে থাকেন অপারেশন, ইনজেকশন পুশ, সেলাই করা ও খৎনাসহ যাবতীয় কাজ।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. দুলাল প্রসাদ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘জরুরি বিভাগে সুইপার, নাইটগার্ট, দারোয়ান দিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। বহিরাগতরা এসে চিকিৎসা কার্যক্রমে এর আগেও এ ধরনের কিছু অভিযোগ আমার কাছে এসেছিল। তবে জরুরি বিভাগে ল্যাবের ইসিজি মেশিন বসিয়ে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend