অর্পিতা হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে পরিবার বাড়িছাড়া

2bd6b58c971bd8f63d77c5791a55aee7-34সেদিন ছিল বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা। এক দলের খেলোয়াড়েরা মাঠে লড়াইয়ের অপেক্ষায়। আরেক দলের খেলোয়াড়দের বুকজুড়ে চাপা কান্না। কারণ, দলটাকে ফাইনাল অবধি টেনে আনা সেই খেলোয়াড়টি, চঞ্চল সেই কিশোরীটি তখন থানার বারান্দায় লাশ হয়ে পড়ে আছে।মেয়েটির নাম অর্পিতা রানী দাস, বয়স ১২৷ সে ছিল পিরোজপুর সদর উপজেলার ৫৪ নম্বর গুয়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী৷ উপজেলার শারিকতলা ডুমরিতলা ইউনিয়নের গুয়াবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর স্বপন দাসের মেয়ে অর্পিতা। গত বছরের ২৮ জুন খুন হয় সে। বাড়ির পাশের নালা থেকে রাতে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের পর চারবার তদন্ত কর্মকর্তার বদল হয়। তবু মামলার কিনারা হয়নি। ১০ মাসেও মামলাটির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি৷ এখন বিবাদীর পরিবারের হুমকি-ধমকিতে অর্পিতার দিনমজুর মা-বাবা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অর্পিতার মা শিল্পী রানী দাস অভিযোগ করে বলেন, সেদিন খুব বৃষ্টি ছিল। বেলা একটার দিকে অর্পিতা পাশের লাল চানের বাড়িতে টিভি দেখতে যায়। এর পর থেকেই সে নিখোঁজ হয়। লাল চানের ছেলে রুবেল অর্পিতাকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে রুবেল, লাল চান ও তাদের পরিবারের সদস্যরা লাশ লুকিয়ে রাখে। রাত সাড়ে আটটার দিকে বাড়ির পেছনে নালায় অর্পিতার লাশ পাওয়া যায়।
শিল্পী রানী আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ একবার রুবেলকে আটক করলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেয়। রুবেলের এক চাচা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। প্রভাবশালী ওই পরিবারের ভয়ে ছোট মেয়েকে নিয়ে সাত মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
অর্পিতার সহপাঠী মানসুরা আকতার বলে, ‘ওর সঙ্গে আমার খুব ভাব ছেল। সবাইকে ভালোবাসত। একটু লম্বা-চওড়া হওয়ায় খেলাধুলাতে খুব ভালো করত। খুনের আগের দিন ফুটবল খেলে দলকে ফাইনালে নিয়েছে সে।’
গুয়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলিমা সাহা বলেন, ‘অর্পিতা প্রাণোচ্ছল স্বভাবের মেয়ে ছিল। ওর জন্যই ২০১২ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ২০১৩ সালে ওর আর খেলা হলো না। ওর দল সেবারও জিতল। কিন্তু মেয়েটা দেখল না। এমন একটি মেয়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্পিতা খুন হওয়ার পরদিন শিল্পী রানী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে পিরোজপুর থানায় ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন পিরোজপুর সদর থানার এসআই সুলতান আহাম্মদ। এ সময় অর্পিতার প্রতিবেশী সঞ্জীব দাস, রতন দাস, রমেশ দাস ও সিরাজকে আটক করে সন্দেহভাজন আসামি করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
১৫ দিন পর মামলার তদন্ত করেন এসআই বিকাশ চন্দ্র। একপর্যায়ে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়া হয়। প্রথমে ডিবি পুলিশের এসআই আবদুল হক ও বর্তমানে এসআই মিজানুর রহমান মামলাটির তদন্ত করছেন।
রুবেলের চাচা ওমর ফারুক শেখ৷ তিনি শারিকতলা ডুমরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য৷ মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন রুবেল বাড়িতে নয়, ফেরিঘাটের দোকানে ছিল৷ সে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়৷’ অর্পিতার পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি৷
পুলিশ সুপার এস এম আকতারুজ্জামান বলেন, শিগগিরই মামলার তদন্ত শেষ হবে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend