নারী নিগ্রহেও কি আমরা তালিকার শীর্ষ দেশে পৌঁছে যাব : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

নারী নিগ্রহেও কি আমরা তালিকার শীর্ষ দেশে পৌঁছে যাব : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

images (9)

ঢাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আমাকে টেলিফোন করেছেন। নাম বললেন, মুশায়েরা। কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন্ সাবজেক্টের ছাত্রী তাও জানালেন। বললেন, আমার সঙ্গে তিনি কথা বলতে চান। ঢাকার খবরের কাগজের অফিস থেকেই তিনি আমার টেলিফোন নম্বরটি সংগ্রহ করেছেন। আমি তার সঙ্গে কথাবার্তায় একটু সহজ হওয়ার জন্য বলেছি, আপনার নাম মুশায়েরা। সম্ভবত কথাটির অর্থ কবিতা। তাই যদি হয় তাহলে আপনার বাবা আপনার নাম কবিতা রাখলেন না কেন? মুশায়েরা আমার কথার হিউমার বুঝতে চাইলেন কিনা জানি না। হিউমারলেস কণ্ঠে বললেন, সেকথা সুযোগ পেলে আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করবেন। আপনার সঙ্গে আমি অন্য কথা বলতে চাই।

আমিও এবার সিরিয়াস হলাম। বললাম- বলুন। মুশায়েরা বললেন, “আপনার রাজনৈতিক লেখাগুলো রোজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আপনি দেশের নারীদের সমস্যা নিয়ে লেখেন না কেন?” এবারেও একটু হিউমার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। বললাম, হুমায়ুন আজাদের “নারী” বইটি পড়ার পর আর নারীদের নিয়ে লেখার সাহস পাচ্ছি না। মুশায়েরা এবার বুঝি একটু রেগে গেলেন। বললেন, হুমায়ুন আজাদের নারী বই আর নারীদের দৈনন্দিন সমস্যা এক কথা নয়। আপনি বিদেশে থাকেন। ভাবেন, উন্নত দেশগুলোর উইমেন্স্ লিব আন্দোলনের মতো বাংলাদেশেও বুঝি নারী স্বাধীনতার উন্নত আন্দোলন চলছে। এদেশের নারীদের ভয়াবহ অবস্থার কথা বুঝতে পারছেন না।

মুশায়েরাকে বললাম, বাংলাদেশ সম্পর্কে বাইরের জগতে অনেকের কিন্তু অন্য ধারণা। দেশটির সরকার প্রধান নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পীকার নারী, শুনছি বর্তমান রাষ্ট্রপতি অবসর নিলে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি একজন নারীই হবেন।

মুশায়েরা টেলিফোনের মধ্যেই একটি বিস্ময়সূচক ধ্বনি করে বললেন— আশ্চর্য, সরকারের শীর্ষ পদে কয়েকজন নারী বসলেই কি দেশে নারীদের অবস্থা পাল্টে যাবে? আসলে পৃথিবীর সব দেশের সরকারতো পুরুষতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে নারী সর্বোচ্চ পদে বসলেও তাকে পুরুষতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সব বিধি-বিধান মেনে পুরুষ হয়ে যেতে হয়। তারা শুধু নামেই নারী থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো কোনো দেশে নারী শাসনেই নারী নির্যাতিত হয়েছে বেশি। কেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর যখন বাংলাদেশে নারী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখন একজন নারী খালেদা জিয়াই কি দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না?

বলেছি, আপনার কথা মেনে নিচ্ছি। বাংলাদেশের নারীদের কোন্ সমস্যাটি নিয়ে আপনি আমাকে লিখতে বলেন? মুশায়েরা বললেন, নারীদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি নিয়ে। এই নির্যাতন ও হয়রানি থেকে গরিব ও ধনী কোনো শ্রেণীর নারীরাই মুক্ত নয়। পশ্চিমা দেশ ও আমাদের দেশের নারীদের সমস্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পশ্চিমা দেশে নারীরা শিক্ষিত এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এখন পুরুষের সঙ্গে সর্বক্ষেত্রে সমতা আদায়ের আন্দোলন করছে। আমাদের দেশে নারীরা ঘরে বাইরে প্রাত্যহিক নির্যাতন থেকেই মুক্ত হয়নি। অধিকার প্রতিষ্ঠা দূরের কথা তাদের লড়াই নির্যাতন-মুক্তি ও প্রাথমিক অধিকার অর্জনের। সমতা আদায়ের কথাতো বহুদূরের কথা। আমাদের নারী মুক্তি আন্দোলনেরও তাই চরিত্র ভিন্ন হওয়া উচিত। দুঃখজনক হলেও তা হচ্ছে না।

মুশায়েরা বললেন, পশ্চিমা দেশে নারীরা শিক্ষিত। আমাদের দেশে বেশিরভাগ এখনো অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত। নারী জাগরণের পথে এই অশিক্ষা ও কুসংস্কারই সবচাইতে বড় বাধা। নারী সমাজের জন্য এই সামগ্রিক অনগ্রসর পরিস্থিতির বলয় থেকে শহরের সংখ্যালঘিষ্ঠ শিক্ষিত নারীরাও বেরিয়ে আসতে পারছে না। গ্রামে নারীরা মোল্লাদের ফতোয়া, ধর্মীয় কুসংস্কার, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডের নিত্যশিকার। শহরের শিক্ষিত এবং ধনী শ্রেণীর মেয়েরাও নানা ধরনের গোপন ও প্রকাশ্য হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার; যা তারা সকল সময় প্রকাশ করতে পারে না। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথাই আপনাকে বলতে পারি। আমি সকল লজ্জা ভেঙ্গেই আপনাকে কথাটা বলতে চাই।

তরুণী বললেন, তিনি স্কুল-ছাত্রী থাকাকালেই তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলেন তার এক দূর সম্পর্কের চাচা। তিনি ছিলেন পরিবারের অভিভাবকের মতো। ফলে তার মা তাকে ব্যাপারটি চেপে যেতে বলেছেন। নইলে মুশায়েরারই সম্মানহানির ভয় রয়েছে বলে মা জানিয়েছিলেন। তিনি বরং মেয়েকেই শাসিয়েছিলেন, সে কেন ভালোভাবে কাপড়-চোপড় পরে চাচার সামনে যায় না?

কলেজে পড়ার সময় মুশায়েরা ছিলেন এক মফস্বল শহরের কলেজের ছাত্রী। সেই কলেজে ছিল এক বিশেষ ছাত্র প্রতিষ্ঠানের দাপট। ছাত্র নেতাদের সঙ্গে ছিল দাপুটে কিছু ছাত্রী নেতাও। তারা দলের জন্য ছাত্রী কর্মী রিক্রুট করতেন। এই রিক্রুটেড ছাত্রীদের মধ্যে কারো কারো সময়-অসময়ে বড় লিডারের কাছে ডাক পড়তো। কেউ অধোমুখে, কেউ ভেঙ্গেপড়া চেহারা নিয়ে ফিরে আসতেন। অধিক অসম্মান এবং নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতেন না।

একদিন সন্ধ্যায় মুশায়েরা ছাত্রীদের কলেজে আনা-নেয়ার বাসে উঠেছেন বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য। এমন সময় দলের এক নেত্রী (ছাত্রী) এসে তাকে বললেন, অমুক বড় ভাই (দলের নেতা) তাকে ডাকছেন। দলের একটা কাজে দরকার। মুশায়েরা বুঝতে পেরেছিলেন, ব্যাপারটা কি? উপস্থিত বুদ্ধিবলে তিনি বাসের মধ্যেই হঠাত্ অসুখের ভান করেন। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যান। তাকে বান্ধবীরা ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে পৌঁছে দেয়। এভাবে তিনি বেঁচে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও কিভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয় তারও একটা উদাহরণ দিলেন মুশায়েরা। তার জীবনে ঘটনাটি ঘটেনি। ঘটেছে তার এক বান্ধবীর জীবনে।

আমি অবশ্য এ ধরনের ঘটনার বিবরণ ঢাকার কাগজেই পড়েছি। এমনকি কলকাতাতেও ঘটছে এ ধরনের ঘটনা। তাই মুশায়েরার কাহিনী অবিশ্বাস্য মনে হয়নি। মুশায়েরার এক বান্ধবী গরীবের ঘরের মেয়ে। বাবা জমিজমা বেচে বহু কষ্টে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত লেখাপড়ার জন্য তুলে দিয়েছেন। মেয়েটি মেধাবী। ডিগ্রীও করেছেন প্রথম শ্রেণীতে শীর্ষ স্থানীয়দের একজন হয়ে। তার আশা- এমএতেও ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে আরো উচ্চ শিক্ষার জন্য যাবেন। তার ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার কোনো বাধা নেই; কিন্তু বাধা তার এক শিক্ষক। তিনি মাঝবয়সী এবং বিবাহিত। সৌম্য দর্শন, দেবতুল্য চেহারা। তিনি মুশায়েরার বান্ধবীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন, এক রাত্রির দেহভোগের বিনিময়ে তিনি ছাত্রীটিকে ফার্স্ট ক্লাসের শীর্ষ তালিকায় রাখতে রাজি আছেন। নইলে ফার্স্ট ক্লাসের নম্বর পেলেও সেটি পাওয়ার আশা তাকে ত্যাগ করতে হবে। এরপর সেই ছাত্রী কি করেছিলেন তা মুশায়েরা আমাকে বলেননি, আমিও জানতে চাইনি।

এটা শুধু মুশায়েরার এক বান্ধবীর কাহিনী নয়, অনেকের কাহিনী। শুধু ছাত্রজীবনে নয়, কর্মজীবনেও বাংলাদেশে নারীকে অন্যান্য অনেক দেশের চাইতে অনেক বেশি নিগ্রহ ভোগ করতে হয়। চাকরি পেতে, চাকরি রক্ষা করতে, চাকরিতে প্রোমোশন পেতে একটু সুন্দরী হলে নারীর নিগ্রহ ভোগের আর অন্ত থাকে না। বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতে গিয়ে গৃহকর্তার লালসার অথবা গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বহু বালিকার মৃত্যুবরণের ঘটনাতো এখন ঢাকার কাগজের প্রায় নিত্যদিনের খবর। গ্রামাঞ্চলে ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে যে মাস্তানতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই মাস্তানদের হাতে ধর্ষিত হচ্ছে অবাধে অসংখ্য কিশোরী, তরুণী, বয়স্কা নারী। থানা পুলিশ তাদের অভিযোগ নিতে সাহস পায় না। নির্যাতিতরাও আরো নির্যাতনের ভয়ে অভিযোগ জানাতে সাহস করে না।

মুশায়েরার সঙ্গে আলাপের কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকার কাগজে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি নিয়ে একটি জরিপের যে বিবরণ বেরিয়েছে, সেটি পাঠ করে খুব বিস্মিত হইনি। মনে হয়েছে, শুধু দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে নয়, নারী নিগ্রহ ও যৌন হয়রানিতেও বাংলাদেশ এখন তালিকার শীর্ষ স্থানীয় দেশে পরিণত হতে চলেছে। যে দেশে প্রতিবছর তাবলীগ জামাতে পঞ্চাশ লাখ মানুষের জমায়েত হয়, ইসলামের জন্য জেহাদ করার জন্য হেফাজতিরা নিত্য গর্জন করছে, সে দেশে যৌন নিগ্রহ এবং অনাচার এমন ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে, তা কি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়?

ঢাকার কাগজে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত জরিপের তথ্যে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই যৌন হয়রানির শিকার। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়রানির শিকার ৮৭ শতাংশ ছাত্রী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ শতাংশ এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ৫৪ শতাংশ। এই জরিপটি করেছেন ইউএন-উইমেন। জরিপে দেখা যায়, শুধু ছাত্রদের দ্বারা নয়, শিক্ষকদের দ্বারাও ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হন। ক্লাস চলাকালে, ক্লাস না থাকার সময়, বিশ্ববিদ্যালয় করিডোর, খেলার মাঠ প্রভৃতি স্থানেও এই হয়রানি করা হয়।

এই হয়রানির মধ্যে রয়েছে অশালীন মন্তব্য, মুঠোফোন ও এসএমএসের মাধ্যমে অশ্লীল প্রস্তাব (indecent proposal) পাঠানো, সুযোগ পেলেই যৌন অঙ্গভঙ্গি দেখানো বা শরীর স্পর্শ করা, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে এসিড মারা বা অপহরণ ও ধর্ষণের ভয় দেখানো, ইন্টারনেটের মাধ্যমেও চলে এই যৌন হয়রানি। নিজেদের বাসায়, হোস্টেলে, এমনকি ক্লাস রুমেও এই নিগ্রহ থেকে ছাত্রীরা মুক্ত নয়।

জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ ছাত্রী জানিয়েছেন, তারা এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি। ২৮ শতাংশ তাদের মেয়ে বন্ধুদের বিষয়টি জানিয়েছেন। মাত্র ৭ শতাংশ পরিবারকে জানিয়েছেন। লজ্জা, সামাজিক বিরুদ্ধ পরিবেশ ও অন্যান্য কারণে হয়রানির শিকার ছাত্রীরা বিষয়টি প্রকাশ করেন না কিংবা প্রতিবাদ জানান না। ফলে এই হয়রানি দিন দিন বেড়ে চলেছে।

২০০৯ সালে মহিলা আইনজীবী সমিতির এক রিট আবেদনের ফলে হাইকোর্ট ১৬ ধরনের কর্মকাণ্ডকে যৌন হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরমধ্যে রয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অশ্লীল আচরণ, অশ্লীল উক্তি ও অঙ্গভঙ্গি করা। পেশাগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা। চিঠি, মোবাইল ও এসএমএসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যৌন ইঙ্গিতমূলক কথা পাঠানো, চরিত্র হননের জন্য স্থির বা ভিডিও চিত্র গ্রহণ করা। প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অপহরণ ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া ইত্যাদি।

এই হুমকি ও হয়রানি বন্ধ করার জন্য উচ্চ আদালত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উপর তা বাস্তবায়নের নির্দেশ রয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, একাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়নি এবং কোথাও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হলেও তার কোনো কার্যকারিতা নেই।

কেবল আইন করে অনগ্রসর সামাজিক অবস্থায় দেশগুলোতে নারী নির্যাতন এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি বন্ধ করা যাবে তা মনে হয় না। তাহলে উন্নত দেশগুলোতে করা যেতো। বাংলাদেশে যৌন হয়রানি বর্তমানে একটি বিভীষিকাময় রোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। জরিপে দেখা যায়, যৌন হয়রানির ফলে ছাত্রীদের শুধু শিক্ষা জীবনে নয়, কর্মজীবনেও বিপর্যয় নেমে আসে। ৫৩ শতাংশ ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অনেকে শিক্ষা জীবন ছেড়ে দেন। তাদের মধ্যে মানসিক রোগের বিস্তার ঘটে। এক বিপুলসংখ্যক ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

সুতরাং কেবল আইন পাস করে নয়, নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার, প্রতিরোধ চেতনা বৃদ্ধি এবং লজ্জা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মানসিকতা গড়ে তোলা দরকার। যৌন হয়রানি করাকে একটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে অপরাধীদের ত্বরিত দণ্ডদানের কার্যকর ব্যবস্থা করা উচিত। সরকারি উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং শহরাঞ্চলে শিক্ষিত নারীদেরও যৌন হয়রানি থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে সামাজিক চেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রচার অভিযান পরিচালনা করা উচিত। নারীদের নিজেদের মধ্যে প্রতিরোধ চেতনা ও ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা দরকার। নইলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে উদ্ভূত এই বহু প্রাচীন সমস্যাটির সহজে সমাধান হবে না।

(সূত্র: ইত্তেফাক)

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend