ছদ্মবেশী জুয়াড়ি বাংলাদেশ দলের পেছনে তিন বছর

ছদ্মবেশী জুয়াড়ি বাংলাদেশ দলের পেছনে তিন বছর

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে গত তিন বছর জোঁকের মতো লেগে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ দল যেখানেই সফর করেছে সেখানেই তাকে দেখা গেছে। এমন কি ঘরোয়া কোন আসরেও তার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কখনও স্টেডিয়ামের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আবার কখনও বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের হোটেলের আশেপাশের কোন হোটেলে থেকেছেন তিনি। ছদ্মবেশী জুয়াড়ি অতনু দত্ত কখনও নিজেকে বাংলাদেশের পাড় সমর্থক আবার কখনও কলকাতা ভিত্তিক ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছেন। রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার পরিচয়ও ছিল তার অস্ত্র। বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারাটা তার জন্য সবচেয়ে প্লাস পয়েন্ট ছিল। এই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করে নিজেকে বাংলাদেশী বলে পরিচয় দেয়াটা একেবারেই সহজ ছিল। চেহারাও অনেকটা বাংলাদেশীদের মতো। কিন্তু আসলেই অতনু দত্ত নামের এই জুয়াড়ি ভারতের নাগরিক। কাজ করেন ভারতের হায়দারাবাদের একটি জুয়াড়ি চক্রের হয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় সফর করে জুয়াড়ি চক্রকে গোপন তথ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব ছিল তার। তিন বছরের বেশি সময় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে সফর করার পর অবশেষে ধরা পড়েছেন তিনি। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় সন্দেহজনক চলাফেরার কারণে ঢাকার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন অতনু। এখন রয়েছেন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে।২০১১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ দলের পিছু পিছু জিম্বাবুয়ে সফর করেন তিনি। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরেও তিনি বাংলাদেশ দলকে অনুসরণ করেন। হারারে ও হাম্বানটোটায় বাংলদেশের সমর্থক সেজে স্টেডিয়ামে তার নিয়মিত উপস্থিতি ছিল। বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে অন্যের কাছে নিজের বাঙালি পরিচয় ফুটিয়ে তোলা ছিল একেবারেই সহজ। লোকালয়ের অনেক বাইরে হাম্বানটোটায় সর্বোচ্চ ৫০০ দর্শক মাঠে উপস্থিত হতো। তার মধ্যে অতনুর উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। হাম্বানটোটায় তার পরিচয় জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সংক্ষিপ্ত উত্তর দেন-ব্যবসায়ী। এর আগে ২০১১ সাল জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের থাকার পাশের হোটেলেই থাকতেন তিনি। বাইরের কেউ পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলতেন-বাংলাদেশী সাংবাদিক। আর প্যাঁচে পড়ে গেলে নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন। ‘ইএসপিএনক্রিকইনফো’ দিয়েছে এমন তথ্য। ক্রিকইনফোর বিশেষ সংবাদদাতা মোহাম্মদ ইসামের সঙ্গে ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে একবার দেখা হয়েছিল তার। তখন তিনি নিজেকে কলকাতাভিত্তিক একজন ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন।অতনু এবারই প্রথম আটক হলেন না। এর আগে আরও দু’বার তিনি পুলিশের ফাঁদে পা দিয়েছেন। ২০১১ সালেও তাকে আটক করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে খুলনা-যশোর বাসে তাকে আবারও দেখা যায়। তখন তিনি বলেছিলেন-বেনাপোল বর্ডার পার হয়ে বিপিএল-এর ম্যাচ দেখতে তিনি এ দেশে এসেছেন। সর্বশেষ আটক হওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের আশেপাশে তাকে সর্বশেষ প্রকাশ্যে দেখা যায় ২০১৩ সালের নভেম্বরে। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি চলছিল ফতুল্লায়। হঠাৎই তিনি প্রেস বক্সে ঢুকে পড়েন। সাংবাদিকরা তার পরিচয় জানতে চাইলে হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেককে চিনি। ‘এতকিছুর পর ‘ক্রিকইনফো’ দিয়েছে অন্য তথ্য। তারা জানিয়েছে যে, আকসু নাকি অতনুর ওপর ২০১০ সাল থেকেই নজর রেখেছে।     

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend