এইচএসসির রোববারের প্রশ্ন ফাঁসের গুজব

এইচএসসির রোববারের প্রশ্ন ফাঁসের গুজব

আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ৫টি পরীক্ষা রয়েছে। এর  মধ্যে সকালে বিজ্ঞানের পদার্থ বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয়পত্র, ব্যবসায় শাখার ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ দ্বিতীয় পত্র ও ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা পরীক্ষা রয়েছে। বিকালে ভূগোল তত্ত্বীয় ১ম পত্র পরীক্ষা রয়েছে। সবগুলো বিভাগের প্রশ্নই ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্টরা। নির্ধারিত পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র হাতে আছে এমন দাবি করে ফেসবুকের একাধিক পেইজে তারা জানিয়েছে, এতদিন যেভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে, এবার পদ্ধতি বদলে প্রশ্ন ফাঁস করা হবে। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এটা গুজব। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অনলাইন ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গত বুধবার এইচএসসিতে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আগেই দিন রাতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ১০ই এপ্রিল ওই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এদিকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা সতর্ক হয়েছে। ফেসবুকে ‘সব পাবলিক পরীক্ষা এবং বোর্ড পরীক্ষার ফাঁসকৃত প্রশ্ন জোন’ নামে একটি গ্রুপে বিভিন্ন বিষয়ের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাওয়া যায়। ওই গ্রুপের প্রশাসক সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি বার্তা দিয়েছে। ওই বার্তায় আছে, ‘আপনারা সবাই প্রশ্ন পাবেন দ্বিতীয় পত্র গতকালের মতো। আজকের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের কথা অলরেডি বোর্ডে চলে গিয়েছে। ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁসের কথা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। ওপেনলি দিলে সেটা সবার চোখে পড়ে। আর আমরা কেউ-ই চাই না যে ইংরেজি দ্বিতীয়-এর মতো পরীক্ষা বাতিল হোক। আমরা চাই, সবাই প্রশ্ন পেয়ে যাতে সুন্দরমতো এ+ তুলতে পারি। তাই এখন থেকে আমারা আমাদের গ্রুপ বা পেজে ওপেনলি প্রশ্ন দেবো না। প্রশ্ন দিব আমাদের পেজের ইনবক্সে। তাই এখন আমাদের কাছ থেকে প্রশ্ন নিতে হলে যার যার আইডি নামটি লিখে ইনবক্স অথবা কল করুন আমাদের। আমারা আপনাদের সবার মেসেজ রিপ্লে দিবো। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন।’ কিন্তু এইচএসসিতে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্ন ফাঁসের খবরকে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্ন ফাঁস এখন আলোচিত বিষয়। অবস্থা এমন হয়েছে যে, প্রতিদিনই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এক শ্রেণীর মানুষ প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়াচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, অনুরোধ করবো গুজবকে উৎসাহিত করবেন না। যারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করুন। প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার ব্যক্তিদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা হওয়ার পর কেন প্রশ্ন ফাঁসের কথা উঠলো। আগে কেন বিষয়টি ধরা পড়লো না। এখন পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর আগে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার আগেই আমরা প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাই। গত ৩রা এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ পরীক্ষায় ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। ওই দিন বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় ‘ক’ সেট প্রশ্ন ফাঁস হয়। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে অন্য সেটে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। ওই দিন প্রশ্ন বিনিময়কালে দেশের কয়েকটি জায়গায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। গত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। যদিও তদন্ত করে ঢাকা বোর্ড প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছিল। পাশাপাশি গত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি। তখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বরং বিষয়টি নানাভাবে রাখঢাকের চেষ্টা করা হয়েছিল। ফলে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতরা বেপরোয়াভাবে বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অনলাইন ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রশ্ন ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ২০১৩ সালের ২৭শে নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি মামলা দায়ের করে। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মাহাবুব-উন-নাহার বাদী হয়ে মিরপুর থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ওই মামলাটি করেছিলেন। ওই মামলা পরিস্থিতি জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেনি। মিরপুর থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই মামলার কোন অগ্রগতি নেই। 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend