বেশি ক্ষতিপূরণ পেতে ক্ষেত পুকুরে ঘর নির্মাণের হিড়িক

বেশি ক্ষতিপূরণ পেতে ক্ষেত পুকুরে ঘর নির্মাণের হিড়িক

খবর বাংলা ২৪ডেক্স: গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণের অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে ঢাকা— টাঙ্গাইল মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী জমিতে ঘর নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। কেউ কেউ ধানক্ষেত, পুকুর ও ডোবায় বাঁশের খুঁটি দিয়ে টিনের চালের ঘর নির্মাণ করেছেন। ভূমি জরিপ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় দালালদের যোগসাজসে অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে অর্থলোভী একশ্রেণীর জমির মালিক এসব ঘর নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গাজীপুর ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক চার লেন করার জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর থেকে সূত্রাপুর পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ওপেন ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ও আবুধাবী ফান্ড ফর ডেভলপমেন্ট-এর আর্থিক সহায়তায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ঐ প্রকল্পের অধীন জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক প্রশস্ত করার জন্য গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় ৮৭ দশমিক ৫১৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। ঐ জমির মধ্যে কালিয়াকৈর উপজেলায় রয়েছে ১০ দশমিক ৪৬২৭ একর। জমিগুলি পড়েছে কালিয়াকৈর উপজেলার কৌঁচাকুড়ি, সফিপুর, চান্দরা, কালামপুর, ডাইনকিনি, হরতকিতলা, উত্তর বক্তারপুর ও শ্রীফলতলী মৌজায়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে জড়িত কিছু অসাধু কর্মকর্তা কতিপয় স্থানীয় দালালের মাধ্যমে কালিয়াকৈর উপজেলার ঐসব মৌজায় থাকা জমির মালিকদের জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি আগেই জানিয়ে দেয়া হয়। দালালদের মাধ্যমে গোপনে ঐ সংবাদ পেয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী উপজেলার চন্দ্রা থেকে সূত্রাপুর বোডঘর পর্যন্ত এলাকার জমির মালিকদের ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। জমির অধিক ক্ষতিপূরণ পেতে জমির মালিকরা রাতারাতি বাঁশের খুঁটি ও খুবই পাতলা টিন দিয়ে লম্বালম্বিভাবে চাল দিয়ে ঘর নির্মাণ করছেন। কেউবা করছেন টিনের চাল দিয়ে। আবার কেউ কেউ করেছেন ছাদ দিয়ে। ছাদ ঢালাই কাজে কিছু চিকন রডের সঙ্গে বেশির ভাগই দিয়েছেন বাঁশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় টাওয়েল কারখানার পূর্ব পাশে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ১০-১২টি টিনের চাল তৈরি করা হয়েছে। ঐ একই এলাকার সীমান্ত সিএনজি স্টেশনের সামনে একটি ধান ক্ষেতের ধান কেটে ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর খাঁড়াজোড়া তুরাগ সিএনজি স্টেশনের পাশে ঢাকার এক মালিকের বেশ কিছু জমি রয়েছে। ঐ জমিতে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জমির মালিকের সাথে গোপনে চুক্তি করে সামনে ইট, পিছনে ও ভিতরে বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্রায় ২৮ টি টিনের চাল দিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। গোয়ালবাথান রেলওভার ব্রিজের পশ্চিম পাশে লাবিব উদ্দিনের বাড়ির সামনে ১৫ শতাংশ জমির মধ্যে টিনের চাল দিয়ে ১০টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। ঘাটাখালি নদীর পশ্চিম পাশে শ্রীফলতলী গ্রামের একটি মাছের খামারে ৩৫টি টিনের চাল নির্মাণ করা হয়েছে।

এব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবীবুর রহমান বলেন, ঐ সব জমি এখনও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে যেভাবে শুধু অধিক ক্ষতিপূরণের জন্য ডোবা, পুকুর ও ধান ক্ষেতে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে তা অনৈতিক। গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন সিংহা বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেন কাজটি হচ্ছে প্রকল্পের মাধ্যমে। তাই সেখানে আমাদের কোন কর্তৃত্ব নেই।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend