সাগরপথে মানবপাচারে ৭৯ গডফাদার

সাগরপথে মানবপাচারে ৭৯ গডফাদারসাগরপথে অবৈধভাবে মানব পাচারে ৭৯ জন গডফাদারের তালিকা প্রণয়ন করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই ৭৯ জন নামের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তালিকায় উখিয়া-টেকনাফ এলাকার সংসদ সদস্য, একজন পৌরসভার প্যানেল মেয়র, একজন সংসদ সদস্যের ভাই ও এক উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম শীর্ষে আছে। এই তালিকায় স্থান পাওয়া সকলের বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। টেকনাফ ও উখিয়া এলাকায় এদের আধিপত্য রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার-পাঁচ বছর আগেও কক্সবাজার জেলার লোকজন পাচারকারীদের ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি মাসে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেত। যাত্রাপথে ট্রলারসহ যেসব যাত্রী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ধরা পড়ত তাদের মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ যাত্রীই মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গা। তখন মালয়েশিয়ায় সমুদ্রপথে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো ফিশিং ট্রলার। এসব ট্রলার ছিল খুবই নিম্নমানের এবং ট্রলারগুলো মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর ভেঙে ফেলা হতো। গত এক থেকে দেড় বছর ধরে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের কার্গো ট্রলার।

পাচারের রুট হিসাবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে লোক সংগ্রহ করে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের জন্য কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া ও মহেশখালীতে জড়ো করে। পাচারের রুট হিসাবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেকনাফের শাহ্ পরীর দ্বীপের ঘোলাপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের কচুবুনিয়া, কাটাবুনিয়া, খুরেরমুখ, মুন্ডারডেইল, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালিয়া পাড়া, লম্বরী, হাবির ছড়া, বড় ডেইল ও শামলাপুর মানব পাচারের নিরাপদ রুট।

এছাড়া উখিয়া এলাকার ইনানীর রেজু খাল ব্রিজ, কক্সবাজার সদরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, নুনিয়ারছড়া ঘাট, খুরুশকুল ব্রিজ এবং মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা ঘাট দিয়ে মানব পাচার হয়। মানব পাচারকারী গডফাদার ও দালালরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঐসব অসাধু সদস্য মানব পাচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলো মাঝে-মধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু দালালকে আটক করলেও পাচারকারী চক্রের মূলহোতা বা গডফাদাররা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে মানব পাচার বন্ধে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। অসাধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, পাচারকারী গডফাদার, আটককৃতদের জামিন অযোগ্য ধারায় বিচারের ব্যবস্থাসহ নানা সুপারিশ করা হয়েছে। গডফাদারদের প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তথ্য-প্রমাণের অভাবে তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend