সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে চরমপন্থা বিস্তারের আশঙ্কা মার্কিন পররাষ্ট্রবিষয়ক সাব কমিটির

Untitled_0প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যকার চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি দেশে ইসলামী চরমপস্থার বিস্তার ঘটতে পারে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির একটি সাব কমিটি।

বৃহস্পতিবার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কিত সাব কমিটির এক শুনানিতে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থান ত্বরান্বিত হবে। ধর্মকে যারা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে, তারা আরও জঙ্গিরূপ ধারণ করতে পারে। আর সহিংসতা চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত দুই দলকেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে শুনানীতে।’

ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে ‘বাংলাদেশ’স ফ্র্যাকচার: পলিটিক্যাল অ্যান্ড রিলিজিয়াস এক্সট্রিমিজম’ শীর্ষক এই শুনানিতে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে পাঁচজন বক্তব্য দেন। এরা হলেন- হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, ডেভিস ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ফরেন পলিসি ও এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিস; ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ; হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের সরকার সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক জে কানসারা; ইউএস-বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড রিলেশন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট স্টিভেন ডি ফ্লিশলি এবং ইন্ডিয়া, পাকিস্তান অ্যান্ড সাউথ এশিয়া কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনসের সিনিয়র ফেলো অ্যালিসা আইরেস।
সাব কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেস সদস্য ম্যাট স্যালমন বলেন, ‘বাংলাদেশ একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে আছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ দুটো রাজনৈতিক সীমারেখায় বিভক্ত। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর সহিংস বিক্ষোভ অগণিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কেবল এটাই একমাত্র উদ্বেগের বিষয় নয়; বাংলাদেশে চরম ইসলামপন্থী সহিংসতার খবরও বার বার পাওয়া গেছে যা উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বিভিন্ন দেশের জাতীয় সীমানায় নিয়োগ বাড়াচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশটির বিভিন্ন পরিস্থিতি আমাদের ভালোভাবে বোঝা জরুরি। এ শুনানীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা ও সহিংস ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জঙ্গিবাদের বিস্তার ঠেকাতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দেওয়া উচিৎ বলে মত প্রকাশ করেন জে কানসারা। সেইসঙ্গে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ২১৯ ধারা অনুযায়ী জামাত-শিবিরকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করে তাদের নেতাকর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা করার পক্ষে মত দেন তিনি।

এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিস বলেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এখন পর্যন্ত সামরিক অভ্যুত্থানের ইঙ্গিত মেলেনি। তবে এভাবে অবস্থার অবনতি চলতে থাকলে ২০০৭ সালের মত সেনা অভ্যুত্থানের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। রাজনৈতিক অচলাবস্থা ঠেকাতে দুপক্ষের মধ্যে সমাধানের ব্যবস্থা ও সমন্বয় করতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ নেয়ারও সুপারিশ করেছেন তিনি।
অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ১৯৭১ সালে বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। গেল ৪৪ বছরে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে দেশটির জনগণ আরও অনেক কিছু অর্জন করার সক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, মানুষের সমতা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই সৃস্টি হয়েছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। আর সে বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেখানে অনুশীলনের জন্য রাজনীতিবিদদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এছাড়া শ্রম খাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান না ঘটা পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল না করা; গণতান্ত্রিক আচরণ এবং সুশাসনের ক্ষেত্রে ‘সত্যিকারের অগ্রগতি’ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ রাখার সুপারিশও করেন বক্তারা।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend