সিটি নির্বাচনে পুলিশের হয়রানি চলছেই

city-special-news-assign-by-(1)ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশি হয়রানি চলছেই। সরকারবিরোধী শক্তির প্রার্থী, সমর্থক ও এজেন্টদের বাড়িতে দিনে-রাতে হানা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি সরকারদলীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত দলীয় মনোনয়ন পায়নি এমন বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকরাও রাতে বাসায় শান্তিতে ঘুমাতে সাহস পারছে না।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ তালিকা ধরে সরকারবিরোধী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্টদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।
মিরপুর-১ নম্বর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এজেন্ট জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা কাজ করছে না। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এক প্রার্থীর এজেন্ট হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার রাত ১টার দিকে তার বাসায় শাহআলী থানার পুলিশ যায়। এ সময় পুলিশ তার খোঁজ করে। কিন্তু তিনি আগে থেকেই বাসার বাইরে ছিলেন। এ ঘটনার পর তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসায় যাচ্ছেন না। মিরপুর এলাকায় আরও দু’জন এজেন্টের বাসায় গিয়েও পুলিশ হানা দিয়েছে বলে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনে দায়ের হওয়া মামলার কারণে নির্বিঘ্নে মাঠে নেমে প্রচার চালাতে পারছেন না ঢাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। একই কারণে এলাকা ছাড়া বাইরের জেলাগুলোর ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন ঢাকায়। ঢাকার পুলিশের কাছে মুখচেনা না হওয়ার সুযোগে এদের অনেকেই নেমেছেন নির্বাচনী প্রচারে। এই অবস্থায় এদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে শুরু হয়েছে নতুন ধারার কৌশলী অভিযান।
বিএনপি সিটি নির্বাচনের বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনেছেন অনেকে আগেই। ঢাকার পলাতক প্রার্থীদের পক্ষে তারা প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন আকন কুদ্দুসুর রহমান। বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে ব্যস্ত ঢাকায় সিটি নির্বাচনের প্রচারে। দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কুদ্দুস। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী এলাকায় ট্রাকে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের দু’টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, হামলা-মামলার কারণে এমনিতেই এলাকা ছাড়া দলের নেতাকর্মীরা। এদের অনেকেই এখন ঢাকায়। সবাই অংশ নিচ্ছি দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায়। প্রথমদিকে কোনো ঝামেলা ছিল না। কিন্তু গত ২-৩ দিন ধরে হঠাৎ বদলে গেছে পরিস্থিতি। ঢাকায় যারা কাজ করছেন তাদের গ্রামের বাড়িঘরে দফায় দফায় যেতে শুরু করেছে পুলিশ। পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলর সরোয়ার, পিরোজপুরের সিকদার মল্লিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান চান, জেলা ছাত্রদল নেতা এমরান আহম্মেদ সজিব এবং সালাহউদ্দিনসহ আরও অনেকের বাড়িতে গত কয়েক দিনে হানা দিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, বরিশাল, খুলনা, ফেনী, বগুরা ও মানিকগঞ্জ থেকে অনেকেই ঢাকায় এসেছে। ঢাকায় এ সব নেতাদের ঢাকার স্থান নেই বলে আবাসিক হোটেলেই আশ্রয় নিচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ফকিরাপুল, আরামবাগ, মগবাজারসহ রাজধানীর প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নজরদারী বাড়িয়েছে পুলিশ। মাঝেমধ্যে তল্লাশীও চালানো হচ্ছে। সোমবার কারওয়ারান বাজারস্থ হোটেল সুন্দরবনে কলাবাগান থানা পুলিশ তল্লাশী অভিযান চালায়। এ সময় ৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে হোটেলের এক নিরাপত্তাকর্মী নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু কলাবাগান থানা পুলিশ তা নিশ্চিত করেনি।
এ বিষয়ে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম (মিডিয়া) বলেন, কোনো হোটেলে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে না। যে সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, কেবল তাদেরই আটক করা হচ্ছে।
বিজয়নগরের একটি হোটেলের ম্যানেজার বলেন, পরিচিত মুখ বিএনপি নেতাকর্মীদের গত ক’দিন ধরে হোটেলে রুম দিচ্ছি না আমরা। প্রশাসনের লোকজন এসে ঝামেলা করে। এতে অন্যান্য বোর্ডারদের সমস্যা হয়। তা ছাড়া অলিখিত নির্দেশ রয়েছে, সন্দেহভাজন কাউকে যেন কক্ষ ভাড়া দেওয়া না হয়। এ রকম ক্ষেত্রে স্থানীয় থানাকে জানাতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশ কাদের জন্য তা আমরা বুঝি। তাই কোনো ঝুঁকি নিচ্ছি না।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend