খালেদার প্রচারণায় ‘দুশ্চিন্তায়’ আওয়ামী লীগ

Kheleda_zia_1বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণা ঠেকাতে মাঠে নামবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যার জবাব চেয়ে লিফলেট, ব্যানার ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীনরা। খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় নামার ‘নৈতিক কোনো ভিত্তি নেই’ বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
খালেদার নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নিজেদের দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ্যে না বললেও এই নিয়ে প্রকৃতপক্ষে উদ্বিঘ্ন ক্ষমতাসীনরা। শুধু তাই নয়, চিন্তিত ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনও। যদিও রবিবার রাজধানীর মিরপুরে গণসংযোগ শেষে খালেদা জিয়ার প্রচারণায় নামা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘প্রচারণায় কে নামলো তা জরুরি নয়। জরুরি হচ্ছে প্রার্থীর যোগ্যতা। জনগণ যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবে।’
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি বড় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীও। তার নির্বাচনী প্রচারে নামা ভোটারদের মধ্যে একটি প্রভাব বিস্তার করবে এটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি বিএনপির রাজনৈতিক ‘ওয়ার্মআপ’ হবে। সুতরাং তার প্রচারণায় নামাকে হাল্কাভাবে দেখলে চলবে না। তাই খালেদা জিয়ার কাছে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যার জবাব চাইতে ভোটের মাঠে মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণ- এ সব নিয়ে মাঠে থাকার কৌশল গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে গঠিত সহস্র নাগরিক কমিটিও খালেদার প্রচারণার বিপক্ষে নামবে বলে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভোটের অধিকার রক্ষার দাবিতে হরতাল-অবরোধ আন্দোলন করে ১৩৮ জন মানুষের জীবন নিয়েছেন। তিনি সরকারের পতন ঘটাতে পারেননি। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার নেই খালেদা জিয়ার।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভোট চাইতে নামতেই পারেন। তবে কোন লজ্জায় ভোট চাইবেন সেই প্রশ্ন থেকে যায়।’
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা আন্দোলন থেকেও ঘরে ফিরে গেছেন, জনগণের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে প্রচারণা বাদ দিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন।’
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেখানেই ভোট চাইতে প্রচারণায় নামবেন সেখানেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যার জবাব চেয়ে লিফলেট বিলি ও মানববন্ধন করবে। খালেদার প্রচারণার নির্ধারিত স্থানগুলোতে থাকবে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যার ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদি। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এ সব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে।
এ বিষয়ে সহস্র নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদেরও কর্মসূচি থাকবে।’ এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছেন বলেও তিনি জানান।
আওয়ামী লীগ মনে করে ভোটের অধিকারের দাবিতে খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে অবরোধ-হরতাল করে ১৩৮জন মানুষের জীবন নিয়েছে। অসংখ্য সম্পদ নষ্ট করেছে। সুতরাং ভোট চাওয়ার অধিকার খালেদার নেই সেই বার্তাটুকই ঢাকাবাসীকে দেবে তারা। খালেদার নির্বাচনী প্রচারণায় নামায় এই কৌশল গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বিভিন্ন সূত্রে এ কৌশলের কথা জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘খালেদার সিটি নির্বাচনে প্রচারণায় নামা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে গত ৩ মাস ধরে সারাদেশে উনি যে তাণ্ডব চালিয়েছেন, মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন, দেশের সম্পদ নষ্ট করেছেন এর কী হবে?’
তিনি বলেন, ‘দেখুন তিনি ভোটের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন থেকে কী নিয়ে তিনি ঘরে ফিরলেন? আবার কীভাবে জনগণের কাছে ভোট চাইবেন?’
কাজী জাফরউল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, তিনি এটারও জবাব পেয়ে যাবেন এর মধ্য দিয়ে।’ খালেদার প্রচারণায় জবাবে আওয়ামী লীগেরও নানা কৌশল থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিনও খালেদার প্রচারণার জবাবে আওয়ামী লীগেরও বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে বলে জানান।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend