ডিসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহন এপ্রিলের শেষে সপ্তাহে

dccঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহে। নবগঠিত এ দুই সিটিতে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণ করা হবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম সিটিতে আগামী জুনের শুরুতে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী সমন্বয় সভা শেষে ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে আরও উন্নত হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস পাওয়া গেছে। সুতরাং নির্বাচন করতে সমস্যা হবে না।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী সোমবার ঢাকার দুই সিটির তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এপ্রিলের শেষ তিন দিন অর্থাৎ ২৮, ২৯ অথবা ৩০ তারিখে ভোটগ্রহণ করা হতে পারে। তবে গতকালের বৈঠকে ঢাকার দুই সিটির ভোট পৃথক দিনে আয়োজনে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও তাতে সায় দেয়নি ইসি।

সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে টহলের দায়িত্ব পালনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। তফসিল ঘোষণার আগেই ইসি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে।

ইসির সম্মেলন কক্ষে গতকাল বেলা ১১টায় সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে তিন সিটি নির্বাচনের প্রাক-সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কমিশন নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত। তবে পরীক্ষার মধ্যে নির্বাচনের জন্য অন্তত পাঁচ দিনের বিরতি দরকার। সভায় অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী, মো. শাহ নেওয়াজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জে. আবু বেলাল মো. শফিউল হক, ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার, কোস্টকার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মকবুল হোসেন, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শামসুল হক পিএসসি, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স) মো. মোখলেসুর রহমান, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার ও নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্র জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার বলেন, এর আগের নির্বাচনগুলোতে কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সেনা মোতায়েন করা হয়। কিন্তু সর্বশেষ কয়েকটি সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়নি।

তবে কমিশন চাইলে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন আয়োজন করলে আইন-শৃঙ্খলাজনিত কোনো সমস্যা হবে না।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে ১১ জুন শেষ হবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে শুক্র ও শনিবার এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে যেন শুক্র ও শনিবার ছাড়া ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয়।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, তফসিল ঘোষণা করলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এসবির পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা রয়েছে। তবে মেয়র প্রার্থী নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে কমবেশি ঝামেলা হলেও তাতে সমস্যা হবে না। এনএসআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, সবকিছুই সহনীয় পর্যায়ে আছে। ডিজিএফআইর পক্ষ থেকে বলা হয়, এখন ভালো সময়, নির্বাচন আয়োজন করা যায়। ডিএমপি কমিশনার ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন দু’দিনে করার ব্যাপারে মত দেন। তিনি বলেন, এক দিনে দুই সিটির নির্বাচন আয়োজন করলে ঢাকার বাইরে থেকে ফোর্স আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সিএমপি কমিশনার বলেন, এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন করলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হতে পারে। তবে তিন সিটির নির্বাচন তিন দিনে করলে ভালো হয় বলে মনে করেন তিনি।

সিইসির ব্রিফিং
সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিইসি বলেন, বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা চলবে। তবে হরতালের কারণে তাদের সূচিতে পরিবর্তন আসবে। সে ক্ষেত্রে শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা হবে। ভোটগ্রহণের জন্য ইসির পাঁচ দিন সময় লাগবে। কখন ভোট করলে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হবে না, তা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সময় বের করে দেবে। এপ্রিলে নির্বাচন করতে হলে এখনই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, জুনে বৃষ্টি-বাদল থাকবে। সম্ভব হলে জুনের আগেই নির্বাচন করে ফেলব। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে কি-না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, চারদিকে চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন জুনের মধ্যে রোজার আগেই হবে।

তিন সিটি নির্বাচনের বর্তমান ভোটার
১ মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৭১ এবং নারী ভোটার ১১ লাখ ২১ হাজার ৭৪২।

সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩৬ এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২টি। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৮৭ এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫ হাজার ৮২৮।১ মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ৭০ এবং নারী ভোটার ৮ লাখ ৬১ হাজার ২৯৩। সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭ এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯।

সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৭৩ এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৯।১ মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার ১৮ লাখ ২২ হাজার ৮৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৩ এবং নারী ভোটার ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৯।

সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৪১ এবং সংরিক্ষত নারী ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৪।

সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭৫০টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫ হাজার ২৫০টি।

সূত্র: দৈনিক সমকাল

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend