ঢাকায় ঢিলেঢালা অবরোধে হতাশা বাড়ছে তৃণমূলে

Bnp_trinomulটানা অবরোধের ডাক দিয়েও ঢাকার রাজপথে নেই বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানীর রাস্তায় নেতাকর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা গেলেও পরের দুই দিন তাদের তেমন দেখা যায়নি। ফলে রাজধানীতে অভ্যন্তরীণ যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এমনকি বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে ঢাকার কোথাও কোথাও যানজটেরও সৃষ্টি হয়।
৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এর পূর্বঘোষিত সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া এবং ওই কর্মসূচির আগের দিন রাত থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়। এর প্রতিবাদে ৫ জানুয়ারি বিকেলে ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেই সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান শেখ হাসিনা সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ঘরে না ফেরার আহ্বান জানান।
অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় পিকেটিং করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো। একইভাবে জামায়াত-শিবিরকেও মাঠে তৎপর দেখা যায়। এ দিন বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে গ্রেফতার হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতারা তো বটেই মহানগর, থানা ও ওয়ার্ডের নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান। একইভাবে রাজপথে জামায়াত-শিবিরের তৎপরতাও কমে আসে। রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো ঝটিকা মিছিল বের করলেও সিনিয়র ও মধ্যমসারির কোনো নেতাকে রাস্তায় নামতে দেখা যাচ্ছে না।
এর ফলে ঢাকার মধ্যে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার অভ্যন্তরীণ বাস চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এমনকি দূরপাল্লার কয়েকটি বাসও ঢাকা ছেড়েছে।
রাজনীতিবোদ্ধারা মনে করছেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোটের তৃণমূল নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেলেও শুধু কেন্দ্র ও ঢাকার নেতাদের রাজপথে না নামার কারণে আন্দোলন সফল হয়নি। এক বছরের মাথায় ২০ দলীয় জোট সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তার আহ্বানে আগের মতোই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। ইতোমধ্যে নাটোরে ২ জন, নোয়াখালীতে ২ জনসহ দলীয় কর্মী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বহু নেতাকর্মী আহত, গ্রেফতার ও মামলার শিকার হচ্ছেন।
তৃণমূল নেতারা মনে করেন, সারাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেও শুধু ঢাকার নেতাদের কারণে তা সফল হচ্ছে না। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ আজাদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, নেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা মাঠে আছি। জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন জোরদার করেছি। কিন্তু ঢাকার নেতারা রাস্তায় না নামলে তো আন্দোলন সফল হবে না। তৃণমূলের মতো ঢাকার নেতাদের রাস্তায় নামা উচিত।
নাটোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বলেন, ঢাকায় নামে মাত্র আন্দোলন হচ্ছে। আন্দোলনে ঢাকার নেতাদের ভূমিকায় আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নই। এভাবে কোনো আন্দোলন হতে পারে না। আন্দোলনকে আরও বেগবান করা উচিত।
বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন বলেন, সরকারের দমন পীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যেভাবে রাজপথে নামার কথা সেভাবে নামা হচ্ছে না। কারণ অনেকের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি ও জুলুম নির্যাতনের ভয় রয়েছে। কিন্তু বিএনপিকে সরকার দুর্বল ভাবছে বলে মনে হয় না। তা হলে দেশনেত্রীকে দিনের পর দিন অবরুদ্ধ করে রাখত না।
একইভাবে বগুড়া জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হক বলেন, ঢাকার নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এ ছাড়া তৃণমূলের চাইতে ঢাকায় পুলিশি এ্যাকশন বেশি। এ কারণে হয়ত ঢাকায় মাঠে নামতে তারা একটু ভয় পায়। তবে আমি মনে করি— কেন্দ্রের আন্দোলন দুর্বল হলে তৃণমূলের আন্দোলনও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েব।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগর কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, ‘এখন কথা বলব না, ব্যস্ত আছি। পরে ফোন দেন।’
জোটের অন্যতম একটি শরিক দলের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে গেছেন। তৃণমূলে আগের মতোই আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু ঢাকায় আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে তো আর আন্দোলন সফল হবে না। সারাদেশে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। কিন্তু যখন টিভিতে দেখায় ঢাকায় সব কিছু স্বাভাবিক তখন তো তৃণমূল নেতাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। এটা বললেও বিপদ না বললেও মহাবিপদ। এখন আমরা কোথায় যাই।’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend