ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধের অপর্যাপ্ত তথ্য

Bijoy_Dibosআজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটি বাংলাদেশে স্বাধীনতাকামী মানুষের রক্তের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের জন্য রক্তে ভেজা যুদ্ধের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া এখন অনেক সহজ। ইন্টারনেটের বদৌলতে সব কিছু এখন মুহূর্তেই হাতের মুঠোই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে যেসব সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে যুদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ করছেন, তার অধিকাংশই অসম্পূর্ণ। অপ্রত্যাশিতভাবে অনলাইনে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। জার্মানভিত্তিক নিউজ সাইট ডিডাব্লিউওয়ার্ল্ড গেল বছর বাংলাদেশে ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য অবহেলিতভাবে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে যুদ্ধ ইতিহাস সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করাকে তারা লজ্জাজনক বলেও উল্লেখ করেছে। ডিডাব্লিউওয়ার্ল্ড বলছে, বাংলা ব্লগগুলোতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ব্যাপক আলোচনা দেখা যায়। এসব আলোচনায় তথ্যের চেয়ে আবেগটাই যেন কাজ করে বেশি। তাই ইন্টারনেটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক তথ্যের প্রয়োজন রয়েছে।

সরকারি ওয়েবসাইটের বেহাল দশা :
বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিকেই তাকানো যাক। ওয়েবসাইটের ঠিকানা : http://www.molwa.gov.bd। এই ঠিকানায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কোনরকমে এক পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আর শুধু বীরশ্রেষ্ঠদের খানিকটা বিবরণ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের একটি ভিডিও পাওয়া যাবে এতে। এর বাইরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য যোগ করা হয়নি সাইটটিতে। নেই কোনো ছবির সংগ্রহ। অথচ সরকারি এই ওয়েবসাইটটিতেই সবচেয়ে বেশি তথ্য থাকা উচিত।

সমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর :
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইটটি এদিক থেকে বেশ সমৃদ্ধই বলতে হবে। ইংরেজি এবং বাংলা ভাষায় সাজানো এ সাইটটি বিদেশীদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দিতে সক্ষম হবে। সাইটটিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দিনপঞ্জি। ১৯৭১-এর ফেব্র“য়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নানা তথ্য পাওয়া যাবে এখান থেকে। এছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন ভিডিও। আরও পাবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারি সম্পর্কে তথ্য। তবে বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাইটটির প্রথম পাতা ফাঁকা থাকায় পাঠক খানিকটা বিভ্রান্ত হতে পারেন। এটির ঠিকানা : http://www.liberationwarmuseum.org।

ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধ :
সরকারিভাবে ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ তথ্য ভাণ্ডার না থাকলেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন ইন্টারনেট পাতার সন্ধান পাওয়া যায়। হালের ফেসবুকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পাতার সংখ্যা গোটা দশেক। এসবের মধ্যে আবেগতাড়িত নানা উদ্যোগই বেশি। প্রকৃত অর্থে গোছানো কোনো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পাতা ফেসবুকে নেই। তবে, ইউটিউবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাড়ে ছয়শ ভিডিও রয়েছে। উইকিপিডিয়াতেও বিভিন্ন ভাষায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক জানান, ব্লগাররাও এখন উইকিপিডিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সন্নিবেশে এগিয়ে এসেছে।

তথ্যের ঘাটতি :
জেনোসাইডবাংলাদেশ ডটঅর্গ নামক একটি ওয়েবসাইটে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিশদ বিবরণ রয়েছে। যুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও পাওয়া যাবে সাইটটিতে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন সংবাদও। টাইমলাইন অংশে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ রয়েছে এই অনলাইন তথ্য ভাণ্ডারে। তবে এ সাইটটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানা যায়নি। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তথ্য প্রকাশের চেষ্টা করছে বলে জানান আরিফ জেবতিক।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ওয়েবসাইট :
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি নিয়ে একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে। ওয়ারক্রিমিনালসবিডি ডটঅর্গ সাইটটিতে রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ মুক্তিযুদ্ধের সময়কার শান্তিবাহিনীর তালিকা তুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু পাকিস্তানি সেনারও নাম রয়েছে এতে। এই ওয়েবসাইটের উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য নেই ইন্টারনেটে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্যেও বেশ ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। বীরউত্তম, বীরবিক্রম কিংবা বীরপ্রতীকদের নিয়ে নেই কোনো তথ্য ভাণ্ডার। গুণীজন ডটঅর্গ ডটবিডি নামক একটি ওয়েবসাইটে কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। তবে এ ধরনের উদ্যোগ বেশ সীমিত। উলে­খ্য, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রকাশের মাধ্যমে এই উদ্যোগ আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। কেননা, দেশের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি বড় বেশি।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend