শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

‍shahjalal-islami-bankশাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ সোলাইমানের শেয়ার বিক্রির ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

আর এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগপত্রে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান একে আজাদ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরমান আর. চৌধুরী ও ব্যাংকের আরেক পরিচালক মো. আক্কাস মোল্লার নাম উঠে এসেছে। তাঁদের মধ্যে একে আজাদ চৌধুরী বেসরকারি টেলিভিশন ‘‘চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর’’ ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার মালিক।

সম্প্রতি এই অভিযোগটি দুদকে জমা পড়েছে বলে দুদকের একটি সূত্র প্রিয়.কমকে নিশ্চিত করেছেন। সোলাইমানের বিরুদ্ধে ব্যাংকের দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক দ্বয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০১১ সালে চট্টগ্রামস্থ ‘এস.কে. স্টিল’ এবং মেসার্স জয়নাব স্টিল (মেসার্স নাসির এন্ড ব্রাদার্স) বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিয়ে থাকে। এই ঋণ প্রদানের সময় তৎকালীন ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ সোলাইমান সুপারিশ করেছিলেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, এই দু’টি কোম্পানী চট্টগ্রামে অবস্থিত এবং সোলাইমানও চট্টগ্রামের অধিবাসী। পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ঋণ আবেদন যাচাই-বাছাই করে ঋণ অনুমোদন করেন। পরবর্তীতে দু’টি প্রতিষ্ঠানই ঋণ খেলাপী হয়ে পড়ে।

সূত্রে জানা যায়, দু’টি প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপী হিসেবে বিবেচিত হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং- ১৭(০৪)১৪। তবে এই মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম দেয়া হলেও সোলাইমানকে আসামী করা হয়নি। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে একই ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরেকটি মামলা দায়ের করে। যেখানে সোলাইমানকে প্রধান আসামী করা হয়। মামলা নম্বর ২৭(০৪)১৪।

এছাড়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, একই ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের করা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিধি সম্মত নয়।

সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় দুদক কর্তৃপক্ষ সোলাইমানকে গ্রেফতার করে রিমাণ্ডে নেয়। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সোলাইমানকে চাপ দিয়ে তার পরিচালক পদের ১,৮৭,৭৩,৯৬০ টি শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য করে। যার মূল্য ধরা হয় ৫০ কোটি টাকা। এই সংক্রান্ত একটি চুক্তি সম্পাদন করা হয়, চুক্তি পত্রটিতে স্বাক্ষর করেন ব্যাংকের এমডি ফরমান আর চৌধুরী এবং অপর পক্ষে সোলাইমান নিজে। এই শেয়ারটি ক্রয় করেন ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক আক্কাস মোল্লার স্ত্রী শাহান আরা বেগম।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫০ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়ে মধ্যে মাত্র ২০ কোটি ৬২ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৯ টাকা শাহান আরা বেগমের পক্ষে পরিশোধ করেন তার স্বামী আক্কাস মোল্লা। কিন্তু অবশিষ্ট ২৯ কোটি ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ১১ টাকার একটি চেক (প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেক নাম্বার সিবিডি নং ২৩৭৭৩১২) তারিখ-২৩/০৭/২০১৪, একাউন্ট নাম্বার ০০১১১০০০০৩৬১৭ (একাউন্টের নাম আক্কাস উদ্দিন মোল্লা, নারায়নগঞ্জ শাখা) ইস্যু করা হলেও টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০ কোটি টাকা আক্কাস উদ্দিন মোল্লা, ব্যাংকের এমডি ফরমান আর চৌধুরী এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যান একে আজাদ চৌধুরী যোগসাজশে আত্মসাত করেছেন। এতে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, মোহাম্মদ সোলাইমানের পরিচালক পদের শেয়ার ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু এই ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ না করে সোলাইমানের নামে ব্যাংকে ধারণকৃত সমুদয় শেয়ার বিক্রি হয়েছে মর্মে ৩/০৯/১৪ তারিখে পরিচালক পর্ষদের ২০৩ তম সভায় জানানো হয়। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান হিসেবে একে আজাদ চৌধুরী সভায় কার্যবিবরনীতে স্বাক্ষর করেন। আর ব্যাংকের এমডি ৫০ কোটি টাকা বুঝে না পেয়ে সোলাইমানের সমুদয় শেয়ার শাহান আরা বেগমের নামে হস্তান্তর করেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, যে টাকায় এই শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে সেই টাকাও বৈধ নয় অর্থাৎ কালো টাকা। কারণ টাকার কোন বৈধ উৎস নেই বা আয়কর ফাইলে এই টাকা দেখানো হয়নি।

এদিকে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ওয়েব সাইট অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর বর্তমান তালিকায় শাহান আরা বেগমের নাম রয়েছে। তবে সেখানে তার ছবি নেই। এছাড়া এতে তার স্বামী আক্কাস উদ্দিন মোল্লাকে সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে ‘এস.কে. স্টিল’-এর এমডি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ব্যাংকটি থেকে ১৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ সুবিধা নেন। কিন্তু ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর ঋণটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ঋণের ‘‘গ্যারান্টার’’ সোলায়মানের ওপর দায় বর্তায়। এই ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় মোহাম্মদ সোলায়মান ও তার দুই ভাইসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তারা হলেন- মেসার্স এস.কে. স্টিল’র অংশীদার আ ন ম জাহাঙ্গীর, সোলায়মানের ভাই প্যারাডাইজ করপোরেশনের পরিচালক এনামুল হক ও আনিসুল হক।

‍সূত্রে জানা গেছে, মামলাটিকে দুদক বিশেষভাবে নেয় এবং পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার হাতে যেন মামলাটি না যায়, সেই উদ্যোগ নেয়। দুদক সোলায়মানকে গ্রেফতার করে দুই দফায় রিমাণ্ড নেয় এবং রিমান্ড শেষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। এই সময় ব্যাংকের পাওনা আদায়ে সোলায়মানের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর হয় এবং শেয়ার বিক্রির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দুদক ‘‘বিশেষ ভূমিকা’’ পালন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের যোগসাজশে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করতে সোলায়মানকে বাধ্য করা হয়েছে। যার তদন্ত এখনো চলছে দুদকে।

এ বিষয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান একে আজাদ চৌধুরী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফরমান আর. চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।



 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend