সাংবাদিক মঞ্জুর মোর্শেদের দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে?

rean2প্রায় এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন সাংবাদিক মঞ্জুর মোর্শেদ খান। কিন্তু এখনও কারো সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারছেন না। স্ক্রেচ ছাড়া হাঁটতে পারছেন না। সারাদিন বাসায় বসে বসে নির্ঘুম সময় কাটাচ্ছেন তিনি। নিজের অসুস্থতা, চাকরিজীবন ও পরিবারের দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়ছেন এই সাংবাদিক। তার এই অবস্থার জন্য তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে’র অবহেলাকে দায়ী করে মহাপরিচালকের কাছে বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি। এমন কি গত এক মাস থেকে রেলমন্ত্রীর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত এই সাংবাদিক।

মঞ্জুর মোরশেদ প্রিয়.কম-কে জানান, গত ১০ অক্টোবর ঈদের ছুটি শেষে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ঢাকায় ফেরার সময় ট্রেনে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে তিনি মেরুদণ্ডে আঘাত পান এবং অপারেশন করাতে হয়। দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাসায় আছেন। এই দুর্ঘটনার জন্য বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তরের এই সাংবাদিক বাংলাদেশ রেলওয়ে’র অবহেলাকে দায়ী করেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘মাসখানেক আগেও বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ কাভারেজ করতে ছুটে গেছি বিভিন্ন জায়গায়। অথচ এখন নিজেই দাঁড়াতে পারছি না। ডাক্তাররা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিলেও কিছু করতে পারছি না। কেননা এক মাসের চিকিৎসা ও অপারেশনে কয়েক লাখ টাকা ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।’

মঞ্জুর মোরশেদ জানান, বছরখানেক আগে তার মেরুদণ্ডে অপারেশন হয়েছিল। এজন্য চলাফেরায় তাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হতো। গত ১০ অক্টোবর ঈদের ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরতে পাবনার ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে যান। স্টেশনে পদ্মা ট্রেনের এসি সিট, এসি চেয়ারসহ তিনটি বগি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে ছিল। এতে এই বগিতে উঠতে বিপদে পড়েন যাত্রীরা। বিশেষ করে শিশু, নারী, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। এই সময় তিনি (মঞ্জুর মোরশেদ) ট্রেনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি বলেন। তিনি অনুরোধ করেন, যেন বগিগুলো ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত করে অ্যাপার্টমেন্টে আনার জন্য। এসময় সঙ্গে থাকা তার বাবাও অনুরোধ করেন। কিন্তু কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাদের অনুরোধ না রেখে বরং ক্ষিপ্ত হয়ে যান। ট্রেনে না উঠতে পারলে ট্রেন তাকে রেখেই ছেড়ে যাবে বলেও জানিয়ে দেন। এক পর্যায়ে তিনি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নেমে ট্রেন উঠতে যান। মাটি থেকে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। এতে মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হন মঞ্জুর। পরে সবাই ধরে ট্রেনে উঠিয়ে দেন।

তিনি জানান, পুরো রাস্তায় তিনি অসহ্য ব্যাথায় ভোগ করেছেন। ঢাকায় আসতে আসতেই কয়েকজনকে ফোন দিলে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সরাসরি স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ডাক্তাররা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। এবং ১৭ অক্টোবর তার মেরুদণ্ডে আবারও অপারেশন করাতে হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন। কিন্তু একা একা চলাফেরা করতে পারছেন না।

মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ‘আমার চিকিৎসক জানিয়েছেন, সুস্থ হতে সময় লাগবে। পুরোপুরি সুস্থ হতে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। না হলে আমি আর আগের মতো দৌড়াতে পারব না। কিন্তু অপারেশন ও প্রায় এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন আর আমার পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা নিতে বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়।’

চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজ রহমান জানান, তার (মঞ্জুর) আঘাতটি খুবই গুরুতর। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও পুরোপুরি সুস্থ হবেন না কখনই। এজন্য উন্নত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

‘আমি তো একজন সাংবাদিক। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ না হলে কাজ করবো কীভাবে? আমার দায়িত্ব পালন করবো কীভাবে?’ –এমন প্রশ্নই করেন তিনি।

মঞ্জুর অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে’র দায়িত্বরত কর্মকর্তার অবহেলার জন্য এই অবস্থা আমার। আমি তাদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের জন্য অভিযোগ করেছি। ১৯ অক্টোবর রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ দেই। তার একান্ত সচিব সদরুল হক আমার আবেদন গ্রহণ করে জানান, রেলওয়ের যুগ্ম-মহাপরিচালক (অপারেশন) মিহির কান্তি গুহ তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। মিহির কান্তির সঙ্গে আমার কথাও হয়। তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আশ্বাস দেন। কিন্তু আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখন তার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম-মহাপরিচালক (অপারেশন) মিহির কান্তি গুহ-কে ফোন করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া য়ায়।

মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ‘আজ এক মাস থেকে আমি বাইরে যেতে পারছি না। আমার এই অবস্থার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায়ী। আমার চিকিৎসার জন্য তো অন্তত আমি ক্ষতিপূরণের দাবি করতে পারি। অথচ রেলওয়ে’র কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেও কিছু হচ্ছে না। আমি এখন কী করব?’

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।

বিষয়টি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মানসুর আলী শিকদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।’ তিনি খোঁজ নিবেন বলে জানান।

এদিকে মহাপরিচালক তাফাজ্জল হোসেনকে কয়েকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend