ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সাজিদের স্বীকারোক্তি ‘বাংলাদেশেই অপরাধ করেছি এখন ইন্ডিয়ান হয়ে বাঁচতে চাই’

image_149056.shajitবাংলাদেশে বহু অপরাধ করার কথা স্বীকার করে এখন ভারতে প্রাণে বাঁচতে চাইছে বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডে মূল হোতা সাজিদ খান। আজ রবিবার কলকাতার নগর দায়রা বা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হলে বিচারক সাজিদ খানকে ১০ দিনের পুলিশ রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় মূল তদন্তকারি কেন্দ্রীয় এনআইএ গোয়েন্দারা ১৪ দিনের রিমাণ্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন। ১০ দিনের রিমান্ড পেয়ে সাজিদ খানকে নিয়ে নিজস্ব অফিসে চলে যান এনআইএর গোয়েন্দারা। সাজিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র দ্রহিতা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইন, মানি লন্ডারিং, ষড়যন্ত্র এবং নাশকতার পরিকল্পনা সহ মোট ১৬টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ দিন বিকেলে ৩টা ২০ মিনিটে নগর দায়রা (ব্যাঙ্কশাল কোর্ট) কোর্টের মুখ্য দায়রা জজ মমতাজ খানের এজলাসে সাজিদ খানকে তোলা হয়। সাজিদেও পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। ফলে বিচারক নিজেই সাজিদকে তার আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেন। সাক্ষীদানের কাটগড়ায় দাঁড়িয়ে তাকে বলার সুযোগ দেন বিচারক। ওই সময় এজলাসের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে নিজেকে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা বলে দাবি করে সাজিদ। আর্তনাদ করে বলতে শুরু করে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও ভারতে প্রাণে বাঁচার জন্যই পালিয়ে এসেছে সে। তার ভাষায়, ‘স্যার আমি যে অপরাধ করেছি সবটাই বাংলাদেশে। এখানে কোনো অপরাধ করিনি। এখানে আমি ইন্ডিয়ান হয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। আমাকে সেই সুযোগ দেওয়া হোক।’
আটক সাজিদ খান জামাত উল মুজাহিদিন জুমের সক্রিয় নেতা এবং ২০১৪ সালের শুরু থেকেই সে ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বাড়ায়। এখানে আল-কায়েদাসহ বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গি এজেন্টের সঙ্গে মিশে গেছে বলে গোয়েন্দার জানাতে পেরেছেন বিচারকের সামনে এনআইএয়ের আইনজীবী এই দাবি করেন। তাঁর আরো দাবি তাকে জেরা করে গোটা দেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক কিছু পাওয়া যেতে পারে তাই তাকে ১৪ দিনের রিমান্ড দেওয়া হোক। যদিও বিচারক শেষ পর্যন্ত ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড দিয়েছেন।
এনআইএয়ের দুজন আইনজীবী শ্যামল কুমার ঘোষ এবং সঞ্জয় বর্ধন কালের কণ্ঠকে জানান, ২০১৪ সালে সাজিদ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসে সাজিদ। এসেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে শেষ ঢেরা হয় পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় থেকে অনায়ায়েসই বাংলাদেশি সীম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও ভারতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত।
রবিবার দুপুর ২টা নাগাদ ব্যাঙ্কশাল কোর্টে নিয়ে আসা হয় সাজিদকে। কোর্টে এসময় নজিরবিহীন নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। এমনকি সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই ব্যাবস্থা বলে জানিয়েছেন এনএইএর গোয়েন্দারা।
রাজ্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাজিদকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন সে নিজেকে বোরহান শেখ বলে পরিচয় দিয়ে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু এনআইএর গোয়েন্দাদের কাছে আগেই সাজিদ খানের ছবি ছিল। ছবিতেই গোয়েন্দারা সনাক্ত করে নেয় সাজিদকে। এয়ারপোর্ট এলাকা থেকেই মূলত তাকে ট্র্যাক করা হয়। কুরিয়ারের বেশ কিছু টাকা আসছে এমন একটি ফোন করে কুরিয়ারম্যান সেজে গোয়েন্দারা সাজিদ খানকে গ্রেপ্তার করেন। ২ অক্টোবর বর্ধমানের খড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণে দুই বাংলাদেশি জঙ্গি নিহত হয়েছিল। ওই ঘটনার পরই তদন্ত শুরু করে পুলিশ এবং রাজ্যে সিআইডি। যদিও তদন্ত শুরু করার দশ দিনেও তেমন আগ্রগতি না হওয়ায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেইশন এজেন্সি এনআইএ এর তদন্তভার নিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে এবং পরপর বেশ কয়েকটি জঙ্গি ঢেরা আবিস্কার করে। বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক গ্রেনেড উদ্ধার এনআইএয়ের বড় ধরনের সাফল্য। সে হিসাবে রাজ্য পুলিশ প্রায় ব্যাপ ফুটে ছিল। যদিও শনিবার রাজ্য পুলিশের স্পেশার অপারেশ গ্রুপের সদস্যরাও বর্ধমান বিস্ফোরণের মূল পান্ডা সাজিদ খানকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমির যে অভিযোগ উঠছিল সেটি উড়িয়ে দিল।
কিন্তু এনআইএয়ের গোয়েন্দার রীতিমতো বিস্মিত কি করে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সাজিদ বোরহান শেখ নামের পারমানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর বা প্যান কার্ড তৈরি করে ফেলল ভারতে। এমন কি সদস্য শেষ হওয়া ভোটার কার্ডেও নাম তুলে নিয়েছিল সাজিদ খান।
সাজিদ খান সম্পর্কে কলকাতার বিভিন্ন গণমাধ্যম যে তথ্য দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে ওর আসল বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। ৪০ বছর বয়স। বাবার নাম সিদ্দিক মিয়া। ২০০৩ সালে রাজশাহীর কোদালমাঠি গ্রামে প্রথম জেএমবির সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শুরু করে। জাল নোট, অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালনের সঙ্গে সক্রিয় যুক্ত হয়ে যাওয়ার মধ্যে মূলত উদ্দেশে ছিল ভারতে তার মতো কাউকে খুঁজে বের করে এখানে বসেই বাংলাদেশে নাশকতা করানো। দলের আনুগত্যতা দেখে জেএমবির মজলিশ এ সুরার সদস্য হিসাবে নিয়োগ পায় সে। ২০০৭ সালে মুর্শিদাবাদের লালগোলায় চলে আসে সাজিদ খান। শিমুলিয়া মাদ্রাসা শুরু করে স্ত্রী ফাতেমা বিবিকে দিয়ে নারী জঙ্গিদের ট্রেনিং দেওয়ার কাজে হাত দেয়।
প্রসঙ্গত, বর্ধমান বিস্ফোরণের পরই গোয়েন্দারা জানতে পারে সেখানে বসেই বাংলাদেশের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছিল জেএমবি-সিমি এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend