ফারুকীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রেসক্লাবে সড়ক অবরোধ

IBRAচ্যানেল আই এর ইসলামিক অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও ইসলামী ফ্রন্টিয়ারের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করেছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, সুন্নী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ইসলামী ছাত্র সেনাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে সড়ক অবরোধ করা হয়।

এ সময় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর মোজাদ্দেদী বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত সরকারকে সময় দেওয়া হল। এর মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। আর সরকার ব্যর্থ হলে কি হবে তা জানি না।

এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মোশাররফ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শাহীদুল আলম রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ফারুকীর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে সুন্নী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সম্পাদক মাঈনুল বারী জাকারিয়া।

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর ১৭৪ নম্বর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় মাওলানা শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকীকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সেসময় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ জানায়, চুরির উদ্দেশ্যে তার বাসায় দুর্বৃত্তরা গেলে তিনি বাধা দিলে তাকে হত্যা করা হয়।

পরে ফারুকীর অনুসারী ও ঘনিষ্ঠজনেরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডকে ডাকাতি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তাদের দাবি ফারুকীকে পরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে। তার ঘনিষ্ঠজন ও বাসার সামনে ‍বিক্ষোভরত অনুসারীদের মনোভাব এমনই।

বুধবার রাতে ফারুকীকে হত্যার আগে দু্র্বৃত্তরা প্রথমে দাবি করে ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর লকার থেকে মাত্র লক্ষাধিক টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়।

নৃশংস এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. বেলাল হোসেনের বরাত দিয়ে তার বড় ভাই ও নিহতের ঘনিষ্টজন মো. জালাল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জান‍ান।

তিনি বলেন, সন্ধ্যায় তার ছোট ভাই বেলাল হোসেন আরো দুই অনুসারীসহ নুরুল ইসলাম ফারুকীর বাসায় যান। রাত ৮টার দিকে কয়েকজন লোক হজ্বে যাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ করার কথা বলে ভেতরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই তারা বেলাল হোসেনসহ ৩ জনের হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা ঢুকিয়ে পাশের রুমে আটকে রাখে।

এরপর তারা ফারুকীর কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। নুরুল ইসলাম এতো টাকা নেই মন্তব্য করে ৫ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। আর তাতে রাজিও হয় তারা। এরপর ফারুকী লকার থেকে টাকা বের করার সময় তাকে কব্জা করে হত্যাকারীরা। পরে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

মো. জালাল বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে রাজাবাজার আমতলিতে থাকি। তখন থেকেই হুজুরের সাথে পরিচয়। আস্তে আস্তে তার অনুসারী হয়ে যাই। আমার ভাইও হুজুরের অনুসারী। দুঃখজনক এ ঘটনা ঘটার আগে উত্তরা থেকে এসেছে বেলাল। সেখানেই ওয়ার্কসপের ব্যবসা রয়েছে তার।

মো. জালালসহ ফারুকীর বন্ধুবৎসল ও অনুসারীদের অনেকেই বলেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু ঘটনাকে ডাকাতি বলে চালিয়ে দিতেই টাকা দাবি করার মাধ্যমে নাকট সাজিয়েছে হন্তারকরা।

এদিকে তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর দুর্বৃত্তরা লকার থেকে দেড় লাখ টাকা ও বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে।

মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘শান্তির পথে’ ও ‘কাফেলা’ এর উপস্থাপক ছিলেন। সুন্নী মতবাদে বিশ্বাসী এই উপস্থাপক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তিনি হাইকোর্ট মাজার মসজিদের খতিব ছিলেন।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend