শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচন শেষ হাসি কার?

upzila-elec-logo৫ জানুয়ারীর আলোচিত সমালোচিত সংসদ নির্বাচনের পর মানুষের নির্বাচনের প্রতি কিছুটা হলেও অনিহা এসেছে। তার প্রমান পরবর্তী উপজেলা নির্বাচনগুলো। শেরপুর হয়ে যাওয়া ৪টি উপজেলা নির্বাচনেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য নির্বাচনের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে কম। আর এ পরিস্থিতিতেই আগামী ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচন। মামলার জালে আটকে এমনিতেই সর্বশেষে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে কিছুটা হলেও ভোটারদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান প্রধান দলগুলো সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহন করাই মূলত এ আগ্রহের কারণ। আর তাই ভোটের হিসাব নিয়ে চলছে চায়ের কাপে ঝড়।

বর্তমান শাসকদল আওয়ামীলীগের প্রার্থী হচ্ছে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও শেরপুর বাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি সানোয়ার হোসেন সানু।
অন্যতম প্রধান দল বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সফল সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম।
আর জাতীয় পার্টি এরশাদের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ইলিয়াস উদ্দিন।
এছাড়াও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিনহাজ উদ্দিন মিনাল ও বিএনপির বিদ্রোহী জহুরুল ইসলাম আবু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিগত নির্বাচনে শেরপুরের বিশাল ভোট ব্যাংক চরাচঞ্চলের ঐক্যকে ধরে রেখে এবং আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে গণমতকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিয়েছিলেন ইলিয়াস উদ্দিন। আর দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন শাসক দল আওয়ামীলীগের প্রার্থী সানোয়ার হোসেন সানু। তৎকালীন সময়ে বিএনপির প্রার্থী ফজলুল হক বাদশা দলের আভ্যন্তরীণ বিভেদের কারণে ভালো করতে পারেন নি। মূলত আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে সে সময় সকল আওয়ামী বিরোধীরা এক হয়ে ইলিয়াস উদ্দিনকে সমর্থন করায় তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এখনো গণমত আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধেই বলা চলে। নানা ইস্যুতে বর্তমান সরকারের ইমেজ অনেকটাই ক্ষুণœ। কিন্ত তারপরও বর্তমান পরিস্থিত আগের চেয়ে ভিন্ন্। এবার বিএনপি অনেকটাই সংগঠিত। আর প্রার্থী এডভোকেট সিরাজুল ইসলামও যোগ্য। নির্বাচনে নেমেছে বিএনপির অধিকাংশ নেতা। যদিও গুঞ্জন রয়েছে বিএনপির প্রার্থী আইনজীবী হিসাবে যতটা পরিচিত রাজনীতিক হিসাবে তার অতটা প্রসার নেই। তবে যোগ্যতার মাপকাঠিতে তিনি অনেকটাই এগিয়ে।
নির্বাচনের শুরুর দিকে সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে যতটা দ্বিধা ছিল তা ক্রমেই কেটে উঠছে। বলা যায় ক্রমশই ভোটের মাঠে তার ভোটার সংখ্যা বাড়ছে। তবে নির্বাচনে এই ক্রমবর্ধমান ভোটারদের শেষ পর্যন্ত তিনি ধরে রাখতে পারবেন কিনা তাই এখন সবচেয়ে ভাবার বিষয়।
অন্যদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সানোয়ার হোসেন সানুও এবার ছেড়ে কথা কইবেন না। তার পক্ষে ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের প্রায় সব নেতাই মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন চলছে তার নানা রকম প্রচার। বলা যায় প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন। তবে গতবারে চেয়ে এবার তার ভোট বাড়বে কি না তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। এর উপর রয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী দলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজ উদ্দিন মিনাল। তিনি লছমনপুর ইউনিয়নে দুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। চরাচঞ্চলে তার একটি জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন সমান তালে। ফলে তার বিষয়টি সানোয়ার হোসেন সানুর জন্য একটি নিশ্চিত মাথা ব্যাথার কারণ।
অন্যদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান ইলিয়াস উদ্দিনের এখন পর্যন্ত প্রচারণার ঔজ্জ্বল্য কম। চরাচঞ্চলে তার ব্যাপক সমর্থন ছিল তা যেমন সত্যি কিন্তু তেমনি এবার সেই সমর্থনে কিছুটা হলেও চিড় ধরেছে। চেয়ারম্যান হিসাবে গত ৫ বছরের এমন কোন বড় সাফল্য তার ঝুলিতে নেই। তার উপর ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যানদের অনেকের সাথেই তার খুব ভাল সদ্ভাব ছিল তা বলা যাবে না। এসব সত্বেও তার নির্বাচনে উপস্থিতি এখনো অন্য প্রার্থীদের জন্য যথেষ্ট চিন্তার কারণ। যদি তিনি চরাঞ্চলকে আগের মতো ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেন এবং শহরের ভোটারদের মনোযোগ কারতে পারেন তাহলে হয়তো তারপক্ষেও ভালো করা সম্ভব।
তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যে অবস্থা তাতে দুটি বড় দলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু নিশ্চিত ভাবে কাউকে এগিয়ে রাখার কথা এখনো কারো পক্ষে বলা সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন নির্ভর করছে মূলত বিএনপি নেতাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচারণার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ধরে রাখা এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের পূর্বের অবস্থানের অন্তত ৮০ শতাংশ অনকূলে রাখার মধ্যে। আর তা হলে সত্যিকার অর্থেই শেরপুর সদর উপজেলার নির্বাচন একটি কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়ে যাবে। আর এ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে শেষ হাসি হাসবে তা নির্বাচন শেষ হবার আগ পর্যন্ত নির্ণয় করা কঠিন সত্যিকার অর্থেই কঠিন হবে।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend