জুতার সূত্র ধরে রিক্সা চালক হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করল শ্রীবরদী থানা পুলিশ ॥ গ্রেফতার-৩

স্টাফ রিপোর্টার:
শেরপুরের শ্রীবরদীতে রিক্সা চালক আনসার আলী (৫০) হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে শ্রীবরদী থানা পুলিশ। জুতার সূত্র ধরে ক্লু-লেস হত্যা মামলার অজ্ঞাতনামা আসামীদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২৯ জুলাই শ্রীবরদী উপজেলার শৈলের বিলে রিক্সা চালাকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থলের পাশের রাস্তার কিনার থেকে ভিকটিমের পায়ের জুতা ও তার পাশে আরেক জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় সাগর (১৮), বিল্লাল মিয়া (২৫) ও সাইম মিয়া (১৮) কে গ্রেফতার করে শেরপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। ১৯ আগষ্ট বুধবার শেরপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস রিলিজ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রেস রিলিজ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই শ্রীবরদী উপজেলার শৈলের বিলে রিক্সা চালাকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থলের পাশের রাস্তার কিনার থেকে ভিকটিমের পায়ের জুতা ও তার পাশে আরেক জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়। লাশ সনাক্তের পর তার স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে গত ৩০ জুলাই শ্রীবরদী থানায় একটি হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগ দায়ের করে। শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী আশরাফ আজীম পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিকনের্দশনা প্রদান করেন এবং দ্রুত হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের নির্দেশনা দেন। পরে শ্রীবরদী থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রুহুল আমিন তালুকদারের নেতৃত্বে অভিযানে নামে শ্রীবরদী থানা পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় খোঁজার পাশাপশি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় সনাক্তের ক্লু খোঁজে পায় পুলিশ এবং জানতে পারে একই রকম নতুন একজোড়া জুতা বর্তমানে একজনের পাঁয়ে রয়েছে। শ্রীবরদী থানা পুলিশ সেই ব্যাক্তিকে সনাক্তে যাওয়ার প্রাক্কালে শৈলের বিল এলাকায় একজন তরুণকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত অবস্থায় দেখতে পায় এবং তার পায়ে একই রকমের জুতা দেখা যায়। তার নাম সাগর মিয়া (১৮)। সে শেলের পাড় এলাকার রহুল আমিনের ছেলে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে জানায় যে, জুতা ছিড়ে যাওয়ায় সে গত ২৯ জুলাই নতুন জুতা কিনেছে। পরে তাকে সন্দেহ হলে ওই তরুণের বাড়ীতে যেতে চাইলে সে বিব্রত বোধ করে। বাড়ীতে যাওয়ার পর সাগরের দাদী বলে যে জুতা ছিড়ে গেলে তারা নিজেরাই জুতা সেলাই করে পড়ে। অপরদিকে সাগর তার নিজ ঘরে পুরোনো ছিড়া জুতা আনতে গিয়ে বাড়ির পিছন দিয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধারকৃত জুতা সেলাই পর্যবেক্ষন করে বুঝা যায় যে, জুতাগুলো কোন মুচি সেলাই করেনি। নিজের হাতে সেলাই করা। পরে সাগরের কললিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, রিক্সাচালক হত্যার ঘটনার সময় তার অবস্থান শৈলের বিলের রাস্তায় দেখা যায়। এই ঘটনায় গত ১৭ আগষ্ট পুলিশ সাগরকে গ্রেফতার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাগর ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত পূর্ব ঘোনাপাড়া গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে বিল্লাল (২৫) এবং চৈতাজানি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাইম মিয়াকে গ্রেফতার পুলিশ।
আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা যায়, শেরপুর সদর থানাধীন তাতালপুর বাজার হতে ভিকটিম আনসার আলীর রিক্সা দিয়ে কালীবাড়ি বাজারে নিয়ে আসে। রিক্সা ভাড়া কম দিতে চাইলে রিক্সাচালক ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা কালীবাড়ি থেকে আরও একটু এগিয়ে দিতে বলে। পরে শৈলের বিল এলাকায় আসলে ভাড়া না দিয়ে আনসার আলীকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং তার পকেটের টাকা কেড়ে নেয়। এক পর্যায়ে তাকে ব্রীজের নিচের পানিতে ফেলে দেয়। পরে তাদের সাথে থাকা ৫/৬ জন লোক পানিতে চুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে বিলের কচুরি পানার নিয়ে লাশ লুকিয়ে রাখে।
শ্রীবরদী থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, রিক্সা চালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে শ্রীবরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা দয়েরর পর হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে অভিযানে নামে শ্রীবরদী থানা পুলিশ। জুতার সূত্র ধরেই এই হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করে শেরপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। আসামীরা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকী আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related posts

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend