ফেসবুক বন্ধে ক্ষতির হিসেব কষছেন ব্যবসায়ীরা

FB-Business_OK_1জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বাংলাদেশে বন্ধ ছিল ২২ দিন। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটি বন্ধ থাকায় অনলাইন ব্যবসায়ে ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বেকার ছিলেন অনলাইন ব্যবসায়ে যুক্ত শত শত তরুণ ও উদ্যোক্তা।

মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে ১৮ নভেম্বর দুপুরে ফেসবুক বন্ধ করে সরকার। এরপর থেকে ই-কমার্স ও ফেসবুকনির্ভর যারা ব্যবসা করতেন, তাদের ব্যবসায় ভাটা পড়ে। দীর্ঘ ২২ দিন পর বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া হয় ফেসবুক।

অনলাইন ব্যবসায় যুক্তরা জানিয়েছেন, যারা বিভিন্ন অনলাইন দোকানের পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন তাদের এই ২২ দিন কোনোও কাজ ছিল না। ব্যবসায়ীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। আতঙ্কিত ছিলেন এই আধুনিক ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়েও। এই ২২ দিনে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লোকসানের শিকারও হয়েছেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১১ হাজারেরও অধিক ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ রয়েছে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা করা হতো। ফেসবুক বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান ও এদের সঙ্গে যুক্তরা কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। অবিক্রিত পড়ে ছিল কোটি কোটি টাকার পণ্য।

বাংলাদেশে অন্য সামাজিক অ্যাপসগুলো থেকে ফেসবুক অনেক জনপ্রিয় এবং এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও অধিক। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের যেসব পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, তাতে ১ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছেন বাংলাদেশে। আর ব্যবহারকারীদের প্রায় অর্ধেকই বয়সে তরুণ। ফলে তারুণ্য নির্ভর ই-কমার্স বাংলাদেশে কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ফেসবুক বন্ধ থাকায় অন্ধকার নেমে এসেছিল আধুনিক এই ব্যবসার ভাগ্যে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) মহাসচিব উত্তম কুমার পল জানান, হাজার হাজার পেইজ রয়েছে। যেসব পেইজের মাধ্যমে ধরতে গেলে এই নতুন ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছিল। ফেসবুক বন্ধ থাকায় উজ্জ�ল সম্ভাবনাময় এই ব্যবসায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। বিক্রি ছিল না কোনো পণ্যের।

উত্তম কুমার পল আরো বলেন,‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ঘিরে যে উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে উঠেছিল তাদের সকলের আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিপুল সাইটের বিপুল সংখ্যক ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। সরকারকে অভিনন্দন ফেসবুক খুলে দেওয়ার জন্য।’

এদিকে অনলাইন দোকানের পণ্য যারা ক্রেতাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেন সেই ই-কুরিয়ার ব্যবসাতেও নেমেছিল ধস। এই ব্যবসায়ে জড়িতরা বেকার সময় কাটিয়েছেন এই ২২ দিন।

ই-কুরিয়ারের মালিক বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন,‘আমার ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। সরকার ফেসবুক খুলে দিয়েছেন এটা ভালো সংবাদ। আর কিছুদিন ফেসবুক বন্ধ থাকলে অনেককে পথে বসতে হতো।’

জানা গেছে, ই-কুরিয়ারের মতো আরো কয়েক শত প্রতিষ্ঠান ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে রয়েছে। যারা অনলাইনে ক্রয় করা পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেন। সে হিসেবে শুধুমাত্র ই-কুরিয়ার ব্যবসায় ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।

ফেসবুক বন্ধ থাকায় শুধু যে অনলাইন ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে তাই নয়, শিল্প সাহিত্যের কর্মকাণ্ডেও ভাটা পড়েছিল। পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা অনলাইন সংবাদপত্র আর মোবাইলনির্ভর হয়ে পড়েছিল।

থিয়েটার বিষয়ক ফেসবুক পেইজ ‘থিয়েটার কথা’র এডমিন পাভেল রহমান জানান, ‘থিয়েটার বিষয়ক তথ্যের জন্য এই পেইজটি থিয়েটারের মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুক বন্ধ থাকার কারণে তখন সেভাবে আর থিয়েটার বিষয়ক নিত্য নতুন তথ্যগুলো সচিত্র জানানো যাচ্ছিল না। পেইজটিতে লাইক দিয়ে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের সাথে থিয়েটার কথার দূরুত্ব তৈরী হয়েছিল। ’

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend