হবিগঞ্জে ধর্ষণের শিকার মা-মেয়ে

pic-01_222003হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের মুখে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন দরিদ্র মা ও মেয়ে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বুধবার মাদারীপুরে পৃথক ঘটনায় পাঁচ বছরের এক শিশু ও প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। শুধু তাই নয়, ধর্ষকরা হুমকি দিয়ে পরিবারটিকে দুই দিন ঘরবন্দি করে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও শ্রীনগরে দুই শিশু একই নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিস্তারিত সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-
হবিগঞ্জ: লাখাই উপজেলায় হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েটিকে দীর্ঘদিন থেকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল করাব গ্রামের প্রভাবশালী শিবলু (২৪), জলিল (২৫)।

একপর্যায়ে সহ্যসীমা ছাড়ালে বিষয়টি তার স্বামীকে জানায় মেয়েটি। এতে দুর্বৃত্তরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে শিবলু, জলিল, বাজিত, শফিক, রুহেলসহ আরো চার থেকে পাঁচজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ঘরে ঢোকে। প্রথমে পরিবারের অন্য সদস্যদের হাত-পা বেঁধে মা ও মেয়েকে ঘর থেকে বের করে অস্ত্রের মুখে গণধর্ষণ করে। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে তারা বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিয়ে চলে যায়। ধর্ষকরা প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল হাই কামাল আপস মীমাংসার চেষ্টা করেন। গত মঙ্গলবার লাখাই থানায় উল্লেখিতদের বিরুদ্ধে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। গত বুধবার সকালে অভিযান চালিয়ে হোতা শিবলু, জলিল ও রুহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মাদারীপুর: পারিবারিক, স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে কালকিনি উপজেলার এক গ্রামে দিনমজুর কৃষকের পাঁচ বছরের শিশুকে নির্যাতন চালায় গ্রামের বাচ্চু সরদার (২৫)। পরে স্থানীয়রা শিশুটিকে রক্তাক্ত ও অজ্ঞান অবস্থায় প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ওই দিন রাত ১১টার দিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার পর থেকে বাচ্চু পলাতক রয়েছে। এই ঘটনায় শিশুটির বাবা কালকিনি থানায় মামলা করেছেন। কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে ওই গ্রামে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১৩) মুখ বেঁধে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে তিন বখাটে। গত ৯ মে শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। গ্রামের সাইফুল সরদার, ইকবাল সরদার (২০) ও রুবেল বেপারি (২০) নামে তিন বখাটে ওই কিশোরীর মুখ বেঁধে একটি অটোরিকশা করে নিয়ে যায়। কিছু দূর গিয়ে তারা প্রথমে কিশোরীকে মারধর করে। পরে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। রাতে কিশোরীকে খোঁজ করার একপর্যায়ে ১২টার দিকে পুকুরপাড়ে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনা জানাজানি হলে মামলা না করার হুমকি দেওয়া হয় নির্যাতনের শিকার পরিবারকে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড়িতে ফিরে থানায় মামলা করার সাহস পাচ্ছে না তারা। তাই মাদারীপুর আদালতে মামলার চিন্তা করা হচ্ছে। কিন্তু মামলা করার মতো তাদের টাকা-পয়সাও নেই। তারা জানায়, ধর্ষকরা প্রভাবশালী হওয়ায় বাড়িতে ফেরাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারা তাদের নিরাপত্তা ও দোষীদের বিচার দাবি করছে।
মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে চতুর্থ শ্রেণির এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার এ ঘটনাটি ঘটে। জানা যায়, ৯ বছরের দরিদ্র পরিবারের ওই শিশুটিকে নিজ বাড়িতে ডেকে এনে নির্যাতন করে সুকুমার রাজবংশী (৩৪) নামে এক ব্যক্তি। শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ‘থানায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’
অন্যদিকে শ্রীনগরে আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছে এক বখাটে। গত বুধবার বিকালে সালিস মীমাংসার সালিসদাররা ধর্ষককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে মীমাংসা করেছে বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত হলো, কাদুরগাঁও গ্রামের প্রবাসী জাহাঙ্গীরের ছেলে জয় (১৯)।
জানা যায়, কোলাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার বেলায়েত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী পরিচয়দানকারী বাচ্চু মোল্লা, ইদ্রিস শেখ ও শাহিন মিলে সালিস করে ধর্ষককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং ঘটনাটি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখান থেকে কর্তব্যরত ডাক্তার শিশুটিকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে প্রেরণ করেন। শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মুজিবুর রহমান জানান, দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend