পুলিশ কনস্টেবলের বাড়িতে চলছে আহাজারি

Gaibandha১৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মানলেন দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ পুলিশ কনস্টেবল মো. শামীম মিয়া (২৮)।
তার মৃত্যুর খবর গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমিতপুর গ্রামে পৌঁছালে সেখানে শুরু হয় শোকের মাতম।
বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শামীম ওই গ্রামের মো. লাল মিয়ার ছেলে।
শামীমের (কনস্টেবল নম্বর-৩৬৬৬) মৃত্যুর খবর শোনার পর বৃদ্ধা মা সাজেদা বেগম (৬০), বাবা লাল মিয়া (৭০) এবং চার ভাই ও দুই বোন কান্নায় ভেঙে পড়েন। গ্রামের শত শত নারী ও পুরুষ বাড়িতে এসে ভিড় জমান। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
শামীমের মৃত্যুতে গোটা কুমিতপুর গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। শোকার্ত স্বজনরা এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন শামীমের লাশের জন্য।
শামীমের বৃদ্ধা মা সাজেদা বেগম চিৎকার করে বলেন, ‘এ দেশে ভোট আর ক্ষমতার জন্য অবরোধ-হরতালে আর কতজনের মরতে হবে। এভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হবে। দেশের এ অবস্থার জন্য আজ আমার ছেলের মরণ হলো। এখন ছেলে হত্যার বিচার করবে কে, কে দেখবে তার স্ত্রীকে? আল্লাহ তুমি এদের বিচার কর।’
বাবা লাল মিয়া ছেলেকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। ছোট ভাই ও বোনেরা ভাই হারানোর শোকে নিথর হয়ে আছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহত শামীম মিয়ার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শামীম তৃতীয়। তিন বছর আগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. বাদশা মিয়ার মেয়ে বিলকিস আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। বর্তমানে বিলকিস আক্তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
শামীমের বড় ভাই সাজু মিয়া বিজিবিতে চাকরি করতেন। বিদ্রোহের (বিডিআর বিদ্রোহ) পর থেকে তিনি চাকরি হারিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। বড় বোন ফেন্সি বেগম বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে আছেন। ছোট ভাই রিজু সম্প্রতি এইচএসসি পাস করেছেন। সবার ছোট শাহিন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ছোট বোন নাজমা আক্তার গাইবান্ধা সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাজেদার রহমান দুলু জানান, আট বছর আগে শামীম পুলিশে যোগ দেয়। সে ছিল সবার খুব আদরের। তার চাকরির পর পরিবারটি সচ্ছলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি আরও জানান, লাশ বাড়িতে পৌঁছালে জানাজার বিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে শামীমের লাশ দাফন করা হবে।
পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে লাশবাহী গাড়ি ঢাকা থেকে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। তবে কখন তা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ১৭ জানুয়ারি দায়িত্ব পালন শেষে রাত ৮টার দিকে বাসে করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা বাসটিতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে তিনি দগ্ধ হন এবং মাথায় আঘাত পান। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলজে হাসপাতাল বার্ন ইউনিটির আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তিনি মারা যান।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend