চিলমারী ভাসমান ডিপোতে জ্বালানি শূন্য, বোরো চাষ হুমকির মুখে!

kurigram mapকুড়িগ্রামের চিলমারী ভাসমান ডিপোতে এবার জ্বালানি শূন্য হয়ে পড়েছে। এমনিতেই দীর্ঘদিন থেকে জ্বালানি সংকটে ধুঁকছিল ডিপোতে। বৃহস্পতিবার মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানি দুটিতেই জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। চিলমারী ভাসমান ডিপোর ওপর নির্ভরশীল সারা কুড়িগ্রামে এখন জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার কৃষক ডিজেল সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে বোরো চাষ।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এর অধিনে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানি জ্বালানি সরবরাহ করে থাকে। ১০ বছর আগে পদ্মা ওয়েল কোম্পানি চিলমারী ভাসমান ডিপো থেকে সরে গাইবান্ধার বালাসি ডিপোতে স্থানান্তরিত হয়। এর ফলে মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানির ওপর চাপ বাড়ে। তার ওপর মেঘনা কোম্পানিতে প্রায়ই জ্বালানি সংকট থাকত এবং ১ জানুয়ারি থেকে কোনো জ্বালানি সরবরাহ করেনি কোম্পানিটি। এ অবস্থায় শুধুমাত্র যমুনা ওয়েল কোম্পানী জ্বালানির চাহিদা পূরণ করছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে যমুনা ওয়েল কোম্পানিতেও জ্বালানি শূণ্য হয়ে পড়ে। এসব তথ্য জানিয়েছেন ওয়েল কোম্পানিরা এজেন্সীরা।
উল্লেখ্য যে, রৌমারী ও রাজীবপুর ছাড়াও সারা কুড়িগ্রামে জ্বালানির চাহিদা পূরণ করে চিলমারী ভাসমান ডিপো। এদিকে ডিসেম্বর শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে সেচনির্ভর বোরো চাষ। ওই ভরা মৌসুমে ডিজেলের চাহিদাও থাকে বেশি। কেননা বোরো ক্ষেত তৈরি করতে অতিরিক্ত সেচের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা শ্যালোমেশিন চালিত সেচ যন্ত্র ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। তাতে জ্বালানির প্রয়োজনও হয় অধিক। কিন্তু কৃষক বাজারে কিনতে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডিজেল পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। অনেক কৃষকই জমি চাষ করে অপেক্ষা করছে সেচের জন্য। এমনি একজন কৃষক সীমান্ত ঘেষা আলগার চরের বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, ‘জমিতে হাল দেওয়া হয়েছে কিন্তু পানি দিতে পারছি না। বাজারে ডিজেল কিনবার যাইয়াও পাচ্ছি না। আবার দামও বেশি চায়।’ মোনছের আলী নামের এক কৃষক জানান, বাজারে প্রতিলিটার ডিজেল ৭৪ টাকা করেও তা পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ডিজেল সংকটে বাজারে ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটার প্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা করে। একদিকে ডিজেল সংকট অন্যদিকে দামে বেশি। শনিবার রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার হাটবাজারগুলোতে ওই চিত্র দেখা গেছে। এতে বোরো চাষ হুমকি মুখে পড়েছে। দ্রুত জ্বালানি সংকটের সমাধান না হলে বোরো চাষ নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। ডিজেল ব্যবসায়ি তৈয়ব আলী জানান, আমরা দাম বাড়াইনি। তবে দু’একজন খুচরা বিক্রেতা তা নিতে পারে। তার মতে চিলমারী ভাসমান ডিপোতে জ্বালানি না পেয়ে আমাদেরকে পার্বতীপুর ও সিরাগঞ্জের বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তেল পরিবহন ভাড়া খরচ করে হচ্ছে বেশি। তার ওপর হরতাল অবরোধে জ্বালানির ট্রাক পরিবহনে ঝুঁকি আছে। আবার সময় ব্যয় হয় বেশি।
শনিবার চিলমারী ভাসমান ডিপোতে জ্বালানি সংকটের কারণ জানতে চাইলে মেঘনা ওয়েল কোম্পানির ইনচার্জ (ডিএস) জহির উদ্দিন জানান, এক মাসে আগে জ্বালানির চাহিদা জানিয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। তবে নাগাদ পৌঁছবে তা বলা যাচ্ছে না। যমুনা ওয়েল কোম্পানির ইনচার্জ খায়রুল কবির জানান, আমার কোম্পানির জ্বালানি শূন্য হলো সবে মাত্র। তবে আশা করছি ৭ দিনের মধ্যে জ্বালানি বহকারি জাহাজ এসে পৌঁছবে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend