তবুও তিনি বেকার নন

আবুল কালাম শেখআবুল কালাম শেখের বয়স ৪৪ বছর। কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী চরের ভবনন্দদিয়াড় গ্রামে তাঁর বাড়ি। শারীরিক গঠন অন্য দশজনের মতো নয়। হাত-পা বাঁকানো। বয়সের অনুপাতে শরীরটা বাড়েনি। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি বসতে, শুতে ও চলতে পারেন না। অথচ এর মধ্যেই এক হাতে সুই, অন্য হাতে জামা-পাঞ্জাবির বোতাম লাগানোর কাজ করছেন তিনি।
কালাম শেখের মা আমিরজানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অস্বাভাবিক শারীরিক গঠন নিয়ে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ কালাম শেখের জন্ম। কালামকে বসানো, শোয়ানো ও খাওয়ানোর কাজগুলো তিনিই করেন। কালাম নিজে নিজে জামাটা কখনো কখনো পরতে পারেন, তবে কষ্ট হয়। তাই বেশির ভাগ সময় তিনিই সন্তানকে জামা পরিয়ে দেন। দিনের বেলায় উঠানের চৌকিতেই বেশি সময় কাটে কালামের। কখনো আবার সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন।
দুই ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে কালাম বাদে সবার বিয়ে হয়েছে—এমনটা জানিয়ে আমিরজান বলেন, বড় ছেলে সালাম কৃষিকাজ করে যা উপার্জনে করে, তাই দিয়ে টেনে-টুনে চলে সংসার। কয়েক বছর হলো কালামের প্রতিবন্ধী কার্ড হয়েছে। তিন মাস পর পর ৯০০ টাকা করে পান তিনি। বাড়ির পাশের ভবনন্দদিয়াড় বাজারের দরজি শাহাদত ও আলাউদ্দীন জামা-পাঞ্জাবির ঘাট সেলাই ও বোতাম লাগাতে দিয়ে যান। বসে-শুয়ে কালাম তাঁদের কাজ করে দেন।

কালাম শেখকে কাজ দেওয়া আলাউদ্দীন বলেন, প্রায় সাত বছর ধরে তিনি কালামের কাছে জামা-পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে দেন। তাঁর হাতের কাজ অনেক সুন্দর। তবে হাতে শক্তি কম, তাই বোতাম লাগাতে দেরি করে। তার পরও কাজটা ভালো হয়।

জামার বোতাম লাগাতে লাগাতে কালাম শেখ বললেন, দৈনিক তিন-চারটি জামার কাজ করে ২০ টাকা পান। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি এভাবেই কাজ করছেন। অস্বাভাবিক শারীরিক গঠনের কারণে তেমন কিছু করা সম্ভব নয়। তার পরও কিছু করতে পারলে দোষ কোথায়!

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend