কলেজছাত্রীর মুখে ক্ষুরের পোঁচ দিলো বখাটে

বখাটের ক্ষুরের পোজে গুরুতর আহত মাবিয়া সুলতানা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
বখাটের ক্ষুরের পোজে গুরুতর আহত মাবিয়া সুলতানা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।

বখাটের উত্ত্যক্তে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়ে মাবিয়া সুলতানার বিয়ে ঠিক করেছিলেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ডুমুরশিয়া গ্রামের বাসিন্দা আতর আলী ফকির। আগামী শুক্রবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে বিয়ে এখন অনিশ্চিত।
গতকাল রোববার দিবাগত রাতে মাবিয়ার মুখে ক্ষুর দিয়ে পোঁচ দিয়ে তাঁর চেহারা বিকৃত করে দিয়েছে স্থানীয় এক যুবক। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাঁর অবস্থা সংকটজনক।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাবিয়া, মাবিয়ার স্বজন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাবিয়া মাগুরা সদর উপজেলার আলোকদিয়া অমরেশ বসু মহাবিদ্যালয়ের বিএ (পাস) শেষ বর্ষের ছাত্রী। প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আশিক মোল্লা নামের এক যুবক তাঁর ওপর এই হামলা চালিয়েছে।

মাগুরা সদর হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতর মাবিয়া অস্পষ্ট কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশিক ক্ষুরের মতো কিছু দিয়ে আমার গলায় পোঁচ মারছিল। গলায় লাগলে আমি মরে যেতাম। আমি হাত দিয়ে ঠেকাই। এতে আমার হাতের একটা নক কেটে চোখের নিচে নাকের ওপর দিয়ে মুখের এপাশ থেকে ওপাশ চলে যায়। ডান কান কেটে ঝুলে পড়ে। আমি চিৎকার করে উঠলে সে দৌড়ে চলে যায়। তাঁর সঙ্গে কেউ ছিল কি না, অন্ধকারে দেখতে পারিনি। ও প্রায়ই আমাকে পথেঘাটে বিরক্ত করত। কুপ্রস্তাব দিত।’

হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মমতাজ মজিদ বলেন, মেয়েটির নাকের ওপর দিয়ে চোখের একটু নিচে মুখের একপাশ থেকে অন্য পাশ পর্যন্ত ধারালো কিছু দিয়ে পোঁচ দেওয়া হয়েছে। ডান কানটি কেটে ঝুলে ছিল। ডান হাতের একটি আঙুলও কেটে প্রায় পড়ে যাওয়ার অবস্থা। মোট ৩০টির মতো সেলাই দেওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থা বেশ খারাপ।’

মাবিয়ার বাবা আতর আলী ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডুমুরশিয়ার পাশে আড়পাড়া গ্রামের আশিক মোল্লা উচ্চমাধ্যমিকে মাবিয়ার সঙ্গে পড়ত। কিন্তু আশিক পাস করতে পারেনি। পরে মাবিয়া কলেজে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই আশিক তাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মাবিয়া রাজি না হওয়ায় পথেঘাটে আশিক উত্ত্যক্ত করত। একপর্যায়ে মাবিয়া কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয় ও বিষয়টি বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনকে জানায়।’
ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম প্রথম আলো‌কে বলেন, মাবিয়াকে উত্ত্যক্ত করা নিয়ে দুই মাস আগে তাঁরা আশিকদের বাড়ি গিয়েছিলেন। প্রথমে আশিক মাবিয়াকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে ক্ষমা চায়। ভবিষ্যতে আর মাবিয়াকে উত্ত্যক্ত করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এরপর এই নৃশংস ঘটনা। তিনি বলেন, ‘একটু নিচে গলার দিকে পোঁচ লাগলে মেয়েটি মারাই যেত।’
মাবিয়ার চাচি ঝর্ণা বেগম অভিযোগ করে বলেন, রাত ১১টার দিকে মাবিয়া প্রাকৃতিক কাজ সারতে বাইরে বের হয়। এ সময় আশিক ওই ঘটনা ঘটায়। তিনি বলেন, ‘বাড়ির পাশে গানের অনুষ্ঠান চলায় প্রথমে চিৎকার চেঁচামেচিতে আমরা কিছু বুঝে উঠতে পারিনি।’

মেয়ের প্রতি এমন নৃশংসতায় হতভম্ব আতর আলী ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশিকের যন্ত্রণায় মানসম্মানের ভয়ে আমি মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে খোঁজা শুরু করি। পাশে ফরিদপুরের বোয়ালমারির একটি ছেলে দেখে পছন্দ হয়। বিয়ের কথাবার্তাও পাকাপাকি হয়। আগামী শুক্রবার বিয়ের দিন ছিল। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেল। ওর জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে পড়ছে। আমার মেয়েটার জীবন শেষ!’

আশিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে এই প্রতিবেদক তার ভাই মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ বিষয়ে এবং তাঁর ভাইয়ের বিষয়ে কিছুই জানেন না।
যোগাযোগ করা হলে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যাপারে এখনো কেউ কিছু জানায়নি।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend